Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Malda Murder:মালদায় একই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার পেছনে যোগসাজশ দুই ভাইয়ের! নেপথ্যে কি সম্পত্তি?

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আসিফ ও আরিফ দুই ভাই বিশেষ কারুর সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। প্রায়ই বলতেন তাঁরা কলকাতা চলে যাবেন। আরিফ কলকাতাতেই একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। তাঁদের মা-বাবাও বলতেন সব কিছু ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু, কোথায় যাবেন তা বলতেন না।

Malda Murder:মালদায় একই পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার পেছনে যোগসাজশ দুই ভাইয়ের! নেপথ্যে কি সম্পত্তি?
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 19, 2021 | 6:22 PM

মালদা: টান টান রহস্য রোমাঞ্চ। মালদাকাণ্ডের পরতে পরতে ছড়িয়ে রয়েছে রহস্যের ঘন জাল। নিজের মা-বাবা-বোন-ঠাকুমাকে খুন করে নিজের বাড়ির মধ্যেই পুঁতে রেখেছিল আসিফ মহম্মদ। দাদা আরিফ মহম্মদের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে কালিয়াচক থানার পুলিশ। শনিবার সকালে বাড়ির ভেতরে গুদাম থেকেই উদ্ধার হয় আসিফের পরিবারের চার সদস্যের দেহ। তদন্তে নেমে একের পর এক রহস্যের পরত খুলতে গিয়ে বাড়িতে সিসিক্যামেরা থেকে গোপন সুড়ঙ্গও খুঁজে পান তদন্তকারীরা। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় নিজের পরিবারকে ঠাণ্ডা পানীয়ের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচৈতন্য করে জ্যান্ত অবস্থায় বাড়ির গোডাউনে কবর দিয়ে খুন করার কথা স্বীকার করেছে আসিফ। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে আসিফের দাদা আরিফের ভূমিকা নিয়ে। প্রায় চারমাস আগে নিজের মা-বাবাকে খুন করেছিল আসিফ। এতদিন পর কেন পুলিশের শরণাপন্ন হয় আরিফ তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আসিফ ও আরিফ দুই ভাই বিশেষ কারুর সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। প্রায়ই বলতেন তাঁরা কলকাতা চলে যাবেন। আরিফ কলকাতাতেই একটি কলেজে পড়াশোনা করেন। তাঁদের মা-বাবাও বলতেন সব কিছু ছেড়ে চলে যাবেন। কিন্তু, কোথায় যাবেন তা বলতেন না। আসিফের বাবা পরিবহন বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মাসছয়েক আগে নিজেদের বাড়ি ছাড়া বাকি জায়গা জমি বিক্রি করতে শুরু করেন আসিফ। সেই সময়তেই বাড়িতে নতুন করে গোডাউন বানানো শুরু হয়। তাই দেখে সন্দেহ প্রকাশ করেন প্রতিবেশীরা। কিন্তু, আসিফরা বিশেষ কারুর সঙ্গে মেলামেশা করতেন না। ফলে সন্দেহ হওয়া সত্ত্বেও বিশেষ কিছু খবর নিতে পারেননি প্রতিবেশীরা।

শুক্রবার আসিফের দাদা আরিফ কালিয়াচক থানায় গিয়ে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে মা,বাবা, বোন ও ঠাকুমাকে খুন করার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই গত রাতেই আসিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ। শনিবার বাড়ির লাগোয়া গুদাম থেকেই চারজনের পচাগলা মৃতদেহ উদ্ধার হয়।

পুলিশ সূত্রে খবর, মাস ছয়েক আগেই প্রায় দেড় কোটি টাকার সম্পত্তি বিক্রি করে আসিফ। আসিফের ঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে ল্যাপটপ, ফোন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি। বাড়ির চারদিকে পাওয়া গিয়েছে সিসিক্যামেরাও। আরিফের অভিযোগ, তাঁকেও খুন করার চেষ্টা করেছিল আসিফ। কিন্তু তিনি কোনওরকমে পালিয়ে বাঁচেন। জেরায় আরিফ জানিয়েছেন, অনেকদিন ধরেই তাঁর ভাই বাড়িতে কারোর সঙ্গে মেলামেশা করত না। একা একা থাকত। এমনকী, তার ঘরে যেতেও বারণ করেছিল। প্রাথমিকভাবে মানসিক অবসাদেই ভাই ভুগছে এমনটাই মনে করেছিলেন আরিফ। কিন্তু তিনি তখনও জানেন না, ভাই তাঁদের খুন করার চক্রান্ত করেছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি, বাবা,মা, বোন, ঠাকুমার সঙ্গে তাঁকেও ঘুমের ওষুধ মেশানো কোল্ডড্রিংক খাইয়েছিল আসিফ। তারপর জলে ডুবিয়ে শ্বাসরোধ করে খুন করার চেষ্টা করেছিল। ভাইয়ের সঙ্গে মারপিট করে কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে কলকাতায় চলে আসেন আরিফ। অভিযোগ, আসিফ তাঁর ফোন ট্যাপ করেছিল। কখন কোথায় তিনি যাচ্ছেন, সমস্ত গতিবিধিতে নজর রাখত আসিফ। ভয়ে পুলিশের কাছে যেতে পারেননি আরিফ। শুক্রবার, পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হচ্ছে বুঝতে পেরে ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেন আরিফ। যদিও, প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গত চারমাসেও আরিফের সঙ্গে তাঁদের সাক্ষাৎ হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সকলের সঙ্গে মোলাকাত করেছে আরিফ। এত বড় ঘটনা যে ঘটে গিয়েছে তার আঁচ পাননি কেউ।

তদন্তকারীদের অনুমান, আসিফের পারিবারিক সম্পত্তির মূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এই বিপুল পরিমাণ টাকা দুই ভাই নিজেদের মধ্যেই বাঁটোয়ারা করতে চেয়েছিল। সেইজন্যেই পরিবারের বাকি সদস্যদের খুন করে তারা। কিন্তু পরে কোনওকারণে দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্য হওয়ার জেরে বাধ্য হয়েই পুলিশের শরণাপন্ন হয় আরিফ। একইসঙ্গে, আসিফের সাইবার জাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার দিকটিও অগ্রাহ্য করছেন না তদন্তকারীরা। আসিফ কোনও বৃহৎ সাইবার জাল চক্রের সঙ্গে যুক্ত। মেশিন হ্যাক করা, অ্যাকাউন্ট হ্যাক করা এমন নানা কাজে সে সিদ্ধহস্ত বলেই দাবি পুলিশের। দাদা আরিফ তাকে সাহায্য করত কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আরিফকে আটক করে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিকভাবে সম্পত্তির জন্যই এই খুন বলে মনে করছেন গোয়েন্দারা।

মনোবিদ অমিত চক্রবর্তী বলেন, “যদি এই অভিযোগটি সত্যি হয়, তাহলে বুঝতে হবে ছেলেটি সম্পূর্ণ সাইকোপ্যাথ। বলা যেতে পারে ছেলেটি অ্যান্টি সোশ্যাল পার্সোনালিটি ডিজওর্ডারের শিকার। নিজের মা-বাবাকে এমন নৃশংসভাবে খুন করার ক্ষেত্রে তাই ন্যায় অন্যায় বোধটিও হারিয়ে গিয়েছে।”

আরও পড়ুন: Update:মা-বাবা-বোন-ঠাকুমাকে জ্যান্ত সমাধিস্থ করেছিল আসিফ! বাড়ির গুদাম থেকে মিলল দেহ