
মালদহ: বাংলায় ভোট আসছে। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রণকৌশল। বদলাচ্ছে সমীকরণ। আগামী কয়েকমাসে আরও অনেক সমীকরণ দেখার জন্য অপেক্ষা করছে বাংলা। এরই মধ্যে মালদহে সামনে আসছে এক নজিরবিহীন ছবি। সন্ধ্যা নামলেই সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছে ‘মিম’। এতদিন পর্যন্ত যে দলের নামই হয়ত শোনেননি অনেকে, সেই দলই হাজির হচ্ছে বাড়িতে।
সদ্য শেষ হওয়া বিহারের বিধানসভা নির্বাচনে পাঁচ আসনে জয়ী হয়েছে ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন’ (AIMIM)। আর তারপরই পশ্চিমবঙ্গে সক্রিয়তা বাড়িয়েছে তারা। কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে একাধিক জেলায়। মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি মালদহেও প্রচুর মানুষ যোগদান করেছেন মিমে। এর আগে কোনও নির্বাচনে এত সক্রিয়তা নজরে পড়েনি। মালদহের ১২টি বিধানসভার প্রত্যেকটিতেই প্রার্থী দেবে বলে জানিয়েছে মিম। এর মধ্যে সাতটি বিধানসভায় বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে।
নতুন রণকৌশল তৈরি করেছে তারা। সূত্রের খবর, সন্ধ্যের সময় বিশেষ করে অন্ধকার নামার পরে গ্রামে গ্রামে গিয়ে সংখ্যালঘু পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। কেউ গিয়ে বোঝাচ্ছেন, মুসলিমদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে রাজ্যের শাসক দল, কেউ বলছেন তৃণমূল বারবার মুসলিমদের রান্নার তেজপাতার মতো ব্যবহার করেছে। কারও মুখে এবার মুসলিমদের সংঘবদ্ধ হয়ে রাজ্যের সরকার পরিবর্তনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
প্রয়োজনে এলাকায় সভা করা হচ্ছে। পোস্টার, ফেস্টুন লাগানো হচ্ছে। তৃণমূল সহ অন্যান্য দল থেকে সংখ্যালঘুদের মিমে যোগদান করানো হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাফল্য মিলেছে মিমের। গ্রামে গ্রামে বহু মানুষ যোগদান করছেন। বুথ ভিত্তিক কমিটি তৈরি হচ্ছে। একেবারে নীচুস্তর থেকে সংগঠন তৈরিতে কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে মিম। জনসভা করতে আসাউদ্দিন ওয়াইসির মালদহে আসার প্রস্তুতিও চলছে।
মিমের মূল নজর রয়েছে মালদহ দক্ষিণের সুজাপুর, মোথাবাড়ি, মানিকচক এবং মালদহ উত্তরের হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, রতুয়া, মালতীপুর- এই সাত বিধানসভায়। এছাড়াও দক্ষিণের ইংরেজবাজার বিধানসভাকেও আলাদা করে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক ব্লকে নিজেদের কার্যালয় খোলা হয়েছে। এসআইআর এবং ওয়াকফ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থান সম্পূর্ণভাবে মুসলিম বিরোধী, এই বার্তাই ঘরে ঘরে পৌঁছে দিচ্ছে মিম। দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গও উঠে আসছে। ইতিমধ্যেই এই সব বিষয় নিয়ে জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশনও দিয়েছে মিম। এবার ব্লক ভিত্তিক বিক্ষোভ আন্দোলনের কর্মসূচিও নেওয়া হচ্ছে।
মিমের রাজ্য কমিটির সদস্য টনিক খান জানিয়েছেন, প্রতিটি বিধানসভায় প্রার্থী দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “বাঘের সঙ্গে বাঘ হয়ে লড়াই করব।” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন শেষ পর্যন্ত ওয়াকফ আইন মানলেন, সেই প্রশ্নও তুলেছেন মিম নেতা। এদিকে, বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী বলেন, “একটাই কথা বলব। মালদহে যে সংখ্যালঘু ভাই-বোনেরা আছে তারাই দেখতে পাচ্ছে, কী অবস্থা। সংখ্যালঘুদের ভুল তথ্য দিয়ে, ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করে, শেষ পর্যন্ত তাদেরই কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।” তবে তৃণমূল বিষয়টাকে একেবারেই পাত্তা দিতে নারাজ। তৃণমূল নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “তিন-চারজন চারটে বাড়িতে গেল, এটা কোনও রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। মিম এ রাজ্যে কোনও গুরুত্ব পাবে না। সাম্প্রদায়িক রাজনীতি আমরা করতে চাই না। বাংলার লোক জায়গা দেবে না।”