মালদহ: নিতান্ত গ্রাম্য মহিলা! ওতো আটঘাঁট, বৈদেশিক কূটনীতি তাঁরা বোঝেন না।
তাঁরা বোঝেন দেশের নিরাপত্তা, নিজেদের সুরক্ষা। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে লড়তে অস্ত্র হাতে তুলে নিলেন বাংলার গ্রামের মহিলারাই। হাতে হাঁসুয়া, বটি, দাঁ-অস্ত্র!
ক্রমেই জটিল হচ্ছে পরিস্থিতি। অনুপ্রবেশ রুখতে অরক্ষিত এলাকাগুলোতে ফেন্সিং দেওয়া নিয়ে সূত্রপাত। তা দিনে দিনে আরও জটিল হয়ে উঠছে। ক্রমাগত সীমান্তে উস্কানি দিচ্ছে BGB। BSF-কে উত্ত্যক্ত করা তো বটেই। ওপার থেকে এপারে লোক ঢোকানোর চেষ্টা চলছে। রাতের অন্ধকারে চলছে চোরা পাচারও। রবিবারই মালদহে ভোরে সুখদেবপুরে ৬ জঙ্গিকে ঢোকানোর চেষ্টা করেছিল BGB। অন্তত তেমনই দাবি করছেন গ্রামবাসীরা। বিএসএফ-গ্রামবাসীদের তাড়া খেয়ে তারা পালিয়ে যায়। কিন্তু তাতেও থেমে থাকেনি বাংলাদেশ। সীমান্তে উস্কানি চলছেই। ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিচ্ছে BSF। এবার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবার সীমান্তের মহিলারা। নিজেদের সুরক্ষা নিরাপত্তার স্বার্থে গ্রামের প্রমিলা বাহিনী। হাতে তুলে নিয়েছেন অস্ত্র-লাঠি-বটি, দাঁ-হাঁসুয়া!
জঙ্গি অনুপ্রবেশের চেষ্টার পর রবিবার রাতেই বৈঠকে বসে সুখদেবপুর-সহ পাশের গ্রামের মহিলারা। দলবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। মাঝে মধ্যে তেড়েও যাচ্ছেন তাঁরা। ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মালদহের সুখদেবপুরে।
গ্রামবাসীদের বক্তব্য, কুয়াশা আর শীতের রাতে অন্ধকার ভারতে ঢুকছেন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা। তাঁরা সীমান্ত লাগোয়া বাড়িতে কখনও সিঁড়ির নীচে, কখনও উঠোনে গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকছে। অনেকক্ষেত্রে মহিলাদের তাড়া খেয়ে অনুপ্রবেশকারীরা ওপারে পালাচ্ছে।
শস্য কেটে নিয়ে যাওয়া, ফসল চুরি, গাছ চুরি তো বটেই, গ্রামের মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করছেন বলে অভিযোগ। তারজন্যই এবার পথে নামলেন মহিলারা। এদিকে, শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে আরও কড়া নজরদারি চালাচ্ছে বিএসএফ। সীমান্তে বন্দুক নিয়ে তাঁরাও প্রস্তুত। টান টান উত্তেজনা। সীতা মণ্ডল নামে এক মহিলা বলেন, “ওরা ফসল কেটে নিয়ে যাচ্ছে, সে তো ঠিক। কিন্তু মানুষজনও মানছে। সামনে পেলেই যাচ্ছেতাই কথাবার্তা বলছে। মেয়েমানুষও মানে না।” আরেক মহিলা বলেন, “আমাদের নলকূপ বাইরে। জল আনতে যাচ্ছি, দৌড়ে ভয়ে ঘরে ঢুকে যাচ্ছি। ভয় তো লাগেই। ভোরে আর সন্ধ্যার পর আমরা আর বেরোই না। সবাই রেডি আছে। ওরা এগোলে, আমরাও ভারতের সঙ্গে রয়েছি। হাঁসুয়া নিয়ে রয়েছি। আসলেই কাটব।”
শুকদেবপুরের উল্টোদিকেই হচ্ছে বাংলাদেশের চাপাই নবাবগঞ্জ এলাকা। এই এলাকা আগেও একাধিকবার শিরোনামে এসেছে। বাংলাদেশের জঙ্গি সংগঠনের বাড়বাড়ন্ত এই এলাকায়। বিভিন্ন সময়ে এর আগেও সেখান থেকে অনুপ্রবেশের চেষ্টা হয়েছে। এদিনও দেখা গেল সেই চিত্র। বিজিবির লঙ্গে দলে দলে ভিড় করছে বাংলাদেশি নাগরিক। মাটি খুঁড়ে সূরঙ্গ বানানোর চেষ্টা চলছে। বাঙ্কার করছে বিজিবি। তাঁদের সঙ্গে উগ্র মৌলবাদি জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরাও সামিল বলে অভিযোগ সুখদেবপুরের গ্রামবাসীদের।