
মালদহ: সুপারি কিলার দিয়ে তৃণমূল নেতাকে খুনের ষড়যন্ত্র? আবার মালদহে শুট আউটের ব্লু প্রিন্ট? অভিযোগ, জেলবন্দি দুই দাগি অপরাধীকে দেওয়া হয়েছে সুপারি। শার্প শুটার পাঠিয়ে বাড়ির সামনে রেকিও করা হয়। সূত্র মারফত সেই চক্রান্তের খবর পেয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তৃণমূল নেতা। আতঙ্কে রয়েছে তাঁর পরিবার। নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তায় তৃণমূল নেতাও। চক্রান্তের পেছনে দলের কেউ যে থাকবে না এমনটা উড়িয়ে দিতে পারছেন না তিনি। বিরোধীদের দাবি, নেপথ্যে রয়েছে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের দাপটে তৃণমূল নেতা বুলবুল খান। জেলায় দলের সাধারণ সম্পাদক। মালদহ জেলা পরিষদের তৃণমূল সদস্যও তিনি। এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। বুলবুলের অভিযোগ, তাঁকে খুনের জন্য বিহারের কিছু মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনালকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ভাড়া করা হয়েছে শার্প শুটার। ইতিমধ্যেই বিহারের দুই অপরাধী, যারা জেলবন্দি রয়েছে, তাদের সুপারি দেওয়া হয়েছে। খুনের ছক কষছে তারাই। হরিশ্চন্দ্রপুরের সুলতাননগর গ্রামে তাঁর বাড়ির সামনে পাঠানো হয়েছে রেকি করতে। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, বিহারের ভাগলপুরে জেলবন্দি মৌলভী এবং মালদায় জেলবন্দি বিহারের দূস্কৃতী, শার্প শুটার লালু সাহানিকে ইতিমধ্যেই সুপারি দেওয়া হয়েছে তাঁকে খুনের জন্যে। কিছু সূত্রের মাধ্যমে তিনি সেটা জানতে পেরেছেন। তারপরে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। ইমেইল মারফত জানিয়েছেন মালদহের পুলিশ সুপারকেও।
প্রশ্ন উঠেছে, যদি অভিযোগ সত্যি হয়, তবে দাপুটে এই নেতাকে কারা খুনের চক্রান্ত করছে? কেনই বা চক্রান্ত করছে? এই নিয়ে ক্যামেরার সামনে স্পষ্ট করে কিছু বলতে চাননি ওই নেতা। তবে এর পেছনে দলের একাংশের যোগের কথা তিনি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেননি। বুলবুল খান বলেন, “সূত্র মারফত খবর পেয়েই বিস্তারিতভাবে প্রশাসনকে জানিয়েছি। অন ক্যামেরা আমি কারও নাম জানাব না। আমরা যেটা খোঁজ পেয়েছি, বিহারের দুষ্কৃতী রয়েছে।” দলের ভিতরে কেউ রয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে বলেন, “দলের গোষ্ঠীকোন্দল বলে তেমন তো কিছু নেই। একটা বড় বাড়িতে সামান্য ঘটনা ঘটতেই পারে। এই নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। ঘটনা যারা ঘটাচ্ছে, তারা নিজেদের স্বার্থ দেখছে। দলের দিক চিন্তা করছে না।”
চলতি বছরের শুরুতেই মালদহ শহরে খুন হন তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি দুলাল সরকার। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন ইংরেজবাজার শহর তৃণমূলেরই সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তিওয়ারি। আবার সম্প্রতি মানিকচকে তৃণমূল কর্মী খুনে গ্রেফতার হয়েছেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত সদস্য। হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তথা প্রতিমন্ত্রী তাজমুল হোসেনের সঙ্গে ইদানিংকালে বারবার বুলবুল খানের সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। এই ঘটনাগুলোকে হাতিয়ার করেই বিরোধীদের অভিযোগ এটা টিকিট নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যেখানে তৃণমূল নেতারা নিজেরাই নিরাপদ না। সেখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা তারা কীভাবে দেবে, প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মুস্তাক আলম বলেন, “নিজেরা নিজেদের খুন করছেন। তৃণমূলে যে টাকা বেশি দেবেন, তিনি টিকিট পাবেন। অন্য কিছু নয়। এই নিয়ে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব হতেই পারে। শুটারের কাছে যেতেই পারে। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক।” জেলা বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ীও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁর কটাক্ষ, “মালদহে তৃণমূলের নেতারাই সুরক্ষিত নন।”
যদিও দ্বন্দ্বের বিষয় মানতে নারাজ জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাদের দাবি, বিজেপি শাসিত বিহার থেকে দুষ্কৃতীদের পাঠানো হচ্ছে জেলাকে অশান্ত করার জন্য। যদিও এই চক্রান্ত নিয়ে ভয় পেতে নারাজ বুলবুল। পুলিশের উপর তিনি ভরসা রাখছেন। তবে পরিবার আতঙ্কে রয়েছে সেই কথাও জানিয়েছেন। সমগ্র ঘটনা নিয়ে তুঙ্গে উঠেছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তদন্ত শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।