
কলকাতা: ওয়াকফের আগুনে পুড়ছে রাজ্য। ওয়াকফ সংশোধনী আইনের বিরোধিতায় রাজ্যের নানা প্রান্তে বিক্ষোভ-অশান্তি। সবথেকে খারাপ অবস্থা মুর্শিদাবাদে। ধুলিয়ান-সুতি, সামশেরগঞ্জ সহ একাধিক জায়গায় সংঘর্ষ হচ্ছে। ভাঙচুর, আগুন লাগানো হয়েছে সরকারি সম্পত্তিতে, এমনটাই অভিযোগ। অশান্তির আঁচ ছড়াচ্ছে রাজ্যের বাকি এলাকাতেও। সন্ত্রস্ত সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতেই প্রশ্ন উঠছে, এই অশান্তি কে করছে? শুধুই কি আইনের বিরোধিতায় মানুষ এতটা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে?
একদিনেই ১১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে রাজ্যে। একাধিক জায়গায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মুর্শিদাবাদের সুতি, ধুলিয়ান, সামশেরগঞ্জ, জঙ্গিপুরের চিত্র দেখে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট একটি শক্তি অশান্তি সৃষ্টি করছে। পুলিশের সঙ্গে একটা বড় অংশ সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। তারাই ভাঙচুর চালাচ্ছে। তবে এলাকাবাসীরা বলছেন, যারা সংঘর্ষে জড়াচ্ছে, তারা মূল মিছিলের অংশ নয়। ওয়াকফ বিরোধী মিছিল শেষ হয়ে যাওয়ার পর বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ এই হিংসা ছড়াচ্ছেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছেন, বোমা ছুড়ছেন, লুটপাট করছেন। তাদের আচরণ দেখে পেশাদার অপরাধীর দক্ষতায় হামলাকারীরা সিসিটিভি খুলে ফেলছে।
এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ নিশ্চয়ই বোমা হাতে মিছিলে বের হবেন না! সাধারণ মানুষের মনস্তত্বে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাথর বা বোমা ছোড়া থাকে না। এখানেই পেশাদার অপরাধীর তত্ত্ব উঠে আসছে। যে সব এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছে, সেখানের বাসিন্দারাও এদের (হিংসায় জড়িত) চিনতে পারছেন না। একাধিক গ্রামবাসী বলছেন, এদের চেনেন না।
বাংলা তথা দেশ আগে এনআরসির বিরুদ্ধে আন্দোলন দেখেছে, কৃষি আইনের বিরোধিতায় আন্দোলন দেখেছে, কিন্তু সেখানেও পথচলতি সাধারণ মানুষকে আক্রমণ করা হয়নি। এর জেরেই উঠে আসছে বহিরাগত তত্ত্ব।
মুর্শিদাবাদ বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া জেলা। এখানে বহিরাগত শক্তি ঢুকে পড়া খুব অস্বাভাবিক নয়। কয়েক বছর আগে কালিয়াচক থানা জ্বালানোর ঘটনাতেও পরবর্তী সময়ে তদন্তে জানা গিয়েছিল, কোনও মৌলবাদী শক্তি নয়, বরং ওই এলাকায় যেহেতু জাল নোট, মাদক পাচার চক্র সক্রিয় ছিল, তার সঙ্গে জড়িত অপরাধীরাই ওই ঘটনায় জড়িত ছিল।
ধুলিয়ান, সুতিও বাংলার অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকা। একদিকে ঝাড়খণ্ড, অন্যদিকে বাংলাদেশ সীমান্ত রয়েছে। মাদক পাচার, জাল নোটের অন্যতম করিডর এটা। সেখানে দাঁড়িয়ে এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলে, এলাকার দুষ্কৃতীরা আরও বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভিন রাজ্যের দুষ্কৃতী বা অন্য দেশের মৌলবাদীদের উসকানির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।