পলাশীপাড়া: একদিকে যখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সরকারি জমি জবর দখল উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে উঠল গুরুতর অভিযোগ। রাতারাতি বিক্রি হয়ে যাওয়ার অভিযোগ বাম আমলে তৈরি হওয়া বাসস্ট্যান্ড। জানা যাচ্ছে, সরকার জমি অধিগ্রহণ করলেও রেকর্ড পরিবর্তন না করায় এই বিপত্তি। অগত্যা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে শরণাপন্ন পলাশী পাড়ার মানুষজন।
অঞ্জুশ্রী সাহা। তিনি কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা। অভিযোগ, জমিটি তিনিই কিনেছেন। যদিও অঞ্জুশ্রী দেবীর দাবি তিনি কাগজপত্রের মাধ্যমেই এই সম্পত্তি কিনেছেন। অঞ্জুশ্রী বলেন, “পলাশীপাড়ার ওই জায়গাটা আমার নামে রয়েছে। সমস্ত নথিও আছে। আমরা কেস করে জায়গাটা উচ্ছেদের জন্য বলেছিলাম। জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সব আছে। গত বছরের নভেম্বর মাসে আমরা এটা কিনেছিলাম।”
এলাকাবাসী সূত্রে খবর, ১৯৭৯ সালের ১ জুলাই পলাশীপাড়ায় জলঙ্গি নদীর উপর দ্বিজেন্দ্রলাল সেতুর সূচনা হয়। সেই সময় সেতুর দু’পাশে বেশ কিছু জমি দুই পাশে রাস্তা করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। কয়েকদিন পর ওই জায়গাতে অর্থাৎ সেতুর ঠিক দক্ষিণ পাশে পাকা রাস্তার পশ্চিম দিকে তৈরি হয় পলাশীপাড়া বাস স্ট্যান্ড। তৎকালীন সময়ে রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ এই বাসস্ট্যান্ডের উদ্বোধন করেছিলেন বলে জানা যায়।
বাসস্ট্যান্ডের সামনে পিডব্লিউডির জায়গায় ধীরে ধীরে গজিয়ে ওঠে বেশ কিছু ছোট ছোট দোকান। হঠাৎ কয়েক মাস আগে বাসস্ট্যান্ডের সামনে থাকা ব্যবসায়ীদের কাছে উচ্ছেদের জন্য হাইকোর্টের নোটিস আসে। সেই নোটিসের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ীরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন সেতুর দুই পাশে রাস্তা করার জন্য যে সমস্ত জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছিল সেই সমস্ত জমির রেকর্ড পূর্বতন জমির মালিকদের নামেই রয়ে গিয়েছে। সেই মালিকদের কোনও একজন ওয়ারিশ সূত্রে বাসস্ট্যান্ডের সেই জমি কোন এক জনের কাছে বিক্রি করে দেয়।
বর্তমান এই জমির কাগজ পত্রে দেখা যায়, ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে সেই জন্য প্রোমোটারের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। সে রেকর্ডার বলে সেই জানৈক ব্যক্তি রাস্তার পাশে থাকা এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করার জন্য হাইকোর্টে উচ্ছেদের মামলা করেন। এই মামলার কপি কয়েক মাস আগে ব্যবসায়ীদের কাছে এসে পৌঁছয়। মামলা এখনো হাইকোর্টে চলছে। এই ঘটনায় পর জেলার প্রশাসনে কাছে জানতে গেলে কোনও আধিকারিক প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি।
তবে তেহট্ট ২ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি বলেন, “তখন সরকারে যারা ছিল বাসস্ট্যান্ড করেছিল। তবে অফিশিয়ালি মিসটেক হয়েছে। এখন জানছি হঠাৎ করে শুনছি জমি দখল হয়েছে। এটা শুনে বিডিও ও লোকাল থানাকে জানিয়েছি। ওই মহিলাকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে।” স্থানীয় ব্যবসায়ী সোমনাথ হাইত বলেন, “আমরা জানতাম সেতু তৈরির সময় জমি অধিগ্রহণ হয়েছিল। সেই জমি সরকার গ্রহণ করলেও রেকর্ড পুরনো মালিকের নামে রয়ে গিয়েছে। সেই রেকর্ড বলে বর্তমানে একজন জমি কিনে দাবি করছেন জমি তাঁর। এখানে বাসস্ট্যান্ড তৈরি হয়েছে। এখন নোটিস দেওয়া হয়েছে আমাদের।” বাস মালিক সমিতির সম্পাদক বলেন, “আমরা জানি যে এখানে বাসস্ট্যান্ড হবে। এই বিষয়ে আগের বছর প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাপজোপ হয়েছিল। হঠাৎই শুনছি এটা কোনও ব্যক্তির জায়গা।”