
নদিয়া: তিন দশক আগের কথা। তখন তৃণমূল ছিল না। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ যুব কংগ্রেসের নেত্রী। রাজ্যের ক্ষমতা ছিল বামেদের দখলে। আর মুখ্য়মন্ত্রী পদে ছিলেন জ্যোতি বসু। এখন যেমন বিরোধীরা নবান্ন অভিযান করেন। তখনও সেই শাসকদলের বিরুদ্ধে মহাকরণ অভিযান নেমেছিলেন বিরোধী মমতা। কিন্তু গোটা মিছিল ক্ষণিকের মধ্য়ে ভেসে যায় রক্তে। ছড়ায় উত্তেজনা।
অভিযোগ, অভিযান রুখতে গুলি চালায় পুলিশ। মৃত্য়ু হয় ১৩ জনের। যাদের স্মরণ করেই কয়েক দশক ধরে ধর্মতলায় পালন হয়ে আসছে তৃণমূলের শহিদ দিবস। সেদিনের ওই উত্তেজনার কবলে পড়়েছিলেন কল্যাণীর দীপক দাসও। মহাকরণ অভিযানে তাকেও সম্মুখীন হতে হয়েছিল বর্বরতার। কিন্তু সেই দিনকে কেন্দ্র করেই যখন প্রতিবছর সেজে ওঠে ধর্মতলা। তখন সেখানে দেখা মেলে না দীপকের।
কিন্তু কেন? সেই মহাকরণ অভিযানে যে শুধু যোগ দেওয়াই নয়। কল্যাণীর ওই বাসিন্দা দীপক দাস জানিয়েছেন, এককালে বিরোধী নেত্রী মমতার বাড়িতেও যাতায়াত ছিল তার। এমনকি, সেদিনের অভিযানে পুলিশের গুলিতে জ্ঞান হারিয়েছিলেন বলেও জানান তিনি। দীপকের কথায়, ‘গুলি লাগার পর সবাই ভাবে মারা গিয়েছি। আমাকে পিজি হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। কিন্তু পরিবার দেহ আনতে গেলে, চিকিৎসক দেখেন যে দেহে প্রাণ রয়েছে। তারপর চিকিৎসা পাই। জীবনও ফিরে পাই।’
সেই ‘জুলাই আন্দোলনের’ জন্য এত ত্য়াগ এদিকে ধর্মতলায় প্রতি বছর ঘটা করে আয়োজিত শহিদ সভায় কেন যান না তিনি? প্র্রশ্নের উত্তরে দীপক বলেছেন, ক্ষোভের কথা। তাঁর দাবি, ‘আমি এখন স্বর্গরথ চালিয়ে পেটে ভাত জোগাই। অন্য কোনও দল করি না। কিন্তু একুশের সভাতেও যাই না। কারণ যারা মারা গিয়েছেন তাদেরই সম্মান রয়েছে। আমাদের কোনও সম্মান নেই। ওই সময়কালে মদন মিত্র দেড় হাজার টাকা দিয়েছিল। কিন্তু রাজ্য় সরকারের তরফ থেকে কোনও সম্মান দেওয়া হয়নি। যারা সিপিএম করেছে, বিজেপি করেছে বড়লোক হয়েছে। যারা আহত হয়েছেন তাদের একটা সার্টিফিকেট ছাড়া কিছু দেওয়া হয়নি।’
এই প্রসঙ্গে কল্যাণী তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিপ্লব দে বলেন, ‘আমি জানতাম না ব্যাপারটা। তবে উনি মিথ্য়া হয়তো বলছেন না। আমি ওনার ছেলেকে ডেকে পাঠিয়েছি। দেখছি কোনও সাহায্য করা যায় কিনা।’