
গোবরডাঙা: ছেলেটার বয়স বেশি না। মোটে তেরো। হাতে তুলে নিয়েছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী। সেগুলি নিয়েই প্রতিদিন ওঠে লোকাল ট্রেনে। তারপর কোনওটা কুড়ি টাকা, কোনওটা তিরিশ আবার কোনওটা একশো টাকায় বিক্রি করে বিক্রম সুতা। শুধুমাত্র পেট চালানোর জন্য। বনগাঁ-হাবরা লোকালে যে সকল যাত্রীরা রোজ যাতায়াত করেন, তাঁরা হয়ত দেখেও থাকবেন এই নাবালককে। হকারি করেই পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে সে….আজ সেই ছেলেই ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়। তবে বাচ্চাটির আক্ষেপ, সবাই এসে ছবি তোলে কিন্তু কেউ সাহায্য করে না…।
ছোট্ট বিক্রমের বাড়ি চাঁদপাড়ায়। বাড়িতে রয়েছে মা আর চার বছরের বোন। নাবালক জানায়, বোন হওয়ার পরই ছেড়ে চলে গিয়েছে বাবা। মা দুই ছেলে-মেয়েকে মানুষ করছিলেন। কিন্তু অভাবের সংসার, পেট চলছিল না তিনজনের। তাই তেরো বছর বয়সেই হাল ধরতে হল তাঁকে।
লোকাল ট্রেনে ঘুরে ঘুরে কখনও বাদাম, কখনও ঝুড়িভাজা,আবার কখনও ছোটখাটো নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করেই চালাচ্ছে নিজের সহ ছোট বোন ও সংসারের খরচ। মা কাজ করেন লোকের বাড়িতে। স্কুলে যাওয়ার থেকে তাই টাকার প্রয়োজনে লোকাল ট্রেনকেই বেশি আপন করে নিয়েছে বছর তেরোর এই ছেলেটি। তাঁর কথায়, স্কুলে গেলে মেলে না টাকা। কিন্তু লোকাল ট্রেনে হকারি করলে হাতে আসে সংসার চালানোর মূলধন।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে বিক্রমের এই লড়াই হয়ে যায় ব্যাপক ভাইরাল। এখন সকাল থেকে রাত লোকাল ট্রেনই তার বাজার, কামরাই তার দোকান। বনগাঁ লোকাল হোক বা গোবরডাঙা, হাবরা যাত্রীদের ভিড়ই তার বিক্রির ভরসা। তবে সব কামরায় সমান সাড়া না মেলায়, এখন বেশির ভাগ সময় লেডিস কামরায় ওঠে সে।
দিনভর ট্রেন বদল করে। এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশন। দুপুরে পেটের দায়ে কখনও হোটেলে,কখনও কালিদির হোটেলে গিয়ে জুটে যায় এক বাটি ভাত-বিনামূল্যে। বিক্রম বলেন, “আমি মা আর বোন থাকি বাড়িতে। বোন হওয়ার পরই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে যায়। মায়ের টাকায় সংসার চলে না। তাই আমিও করি। আমরা দু’জন মিলে সংসার চালাই। হাবরা থেকে বনগাঁ প্রতিনিয়ত যাই।”