কেউ কথা রাখেনি: কচু-শাকপাতা খেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দিনগুজরান

সরকারি তথ‍্য বলছে, বসিরহাট মহকুমায় মোট পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant Labors) এসেছিল ২৯ হাজার ৩৮৬ জন। তার মধ্যে ১০টি ব্লকে গড়ে কাজ পেয়েছেন ৭৫ থেকে ১০০ জন।

কেউ কথা রাখেনি: কচু-শাকপাতা খেয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের দিনগুজরান
অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Updated on: Mar 17, 2021 | 10:19 PM

বসিরহাট: ২০২০ সালে করোনা মহামারির জেরে ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল সারা বিশ্ব। সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে লকডাউনে বিপুল ক্ষতি হয়েছে অর্থনীতির। রুজিরোজগার হারিয়ে ভিন রাজ্য থেকে বাংলায় ফিরে এসেছেন বহু শ্রমিক। তাঁদের সবার কর্মসংস্থান করতে একশো দিনের কাজের মতো কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বিশেষ জোর দেওয়ার কথা শোনা গিয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)-এর গলায়। বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রুজিরোজগার হারিয়ে বাড়ি ফেরা বসিরহাটের পরিযায়ী শ্রমিক (Migrant workers)পরিবারের অবস্থা ভিন্ন কথা বলছে। কাজের অভাবে দু’বেলা পেট ভরে খাবার পাওয়া তো দূর অস্ত, কচুপাতা, শাকপাতা সেদ্ধ খেয়ে কোনওভাবে দিন কাটছে এলাকার বহু শ্রমিক পরিবারে।

বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে বসিরহাট মহকুমার বসিরহাট দক্ষিণ, বসিরহাট উত্তর, হিঙ্গলগঞ্জ সহ বহু বিধানসভা এলাকা থেকে বহু মানুষ কাজের সন্ধানে পা বাড়িয়েছিল ভিন রাজ‍্যে। কিন্তু করোনা প্রকোপে সারা দেশে লকডাউন জারির প্রেক্ষিতে বহু বেসরকারি ক্ষেত্র বন্ধ হয়ে যায়। আচমকা কাজ হারিয়ে বহু পরিযায়ী শ্রমিক কষ্ট-যন্ত্রণা অতিক্রম করে বাড়ি ফেরেন। কিন্তু তারপর থেকে শুরু হয় আরেক জীবন-যুদ্ধ। সঞ্চিত অর্থে দিন গুজরান করতে করতে একসময়ে সেটাও শেষ হয়ে যায়।

এদিকে কেন্দ্রীয় ও রাজ‍্য সরকারের প্রস্তাবিত কোন কাজ না পাওয়ায় বসিরহাটের এই শ্রমিকরা যখন দিল্লি, মুম্বই ইত্যাদি শহরে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করছেন সেখানেও বাধ সেধেছে দারিদ্র। ভিন রাজ‍্যে ফিরতে গেলেও যে টাকা লাগবে সেটাও তাঁদের হাতে নেই। এদিকে সুদ দিয়ে মহাজনদের কাছে টাকা ধার করতে গেলেও মুখের উপর ‘না’ শুনছেন তাঁরা। মহাজনদের সাফ কথা, টাকা শোধের কোনও গ্যারান্টি কি দিতে পারবে? এসবের মধ্যে এখন রেশন থেকে পাওয়া সামান্য চাল-গম আর বন-বাদাড় থেকে তোলা কচুপাতা ও শাকপাতা সিদ্ধ করে পেট ভরাচ্ছেন এই শ্রমিক পরিবারগুলি। মহকুমা জুড়েই প্রায় একই চিত্র।

এ প্রসঙ্গে বিজেপির বসিরহাট সাংগঠনিক জেলার কিষাণ মোর্চার সাধারণ সম্পাদক প্রণব তরফদার বলেন, “রাজ‍্য সরকার পরিযায়ী শ্রমিকদের যে ১০০ দিনের কাজ সহ যেসব কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা পালন করতে ব‍্যর্থ।” যদিও এই দাবি তৃণমূল পুরোপুরি নস‍্যাৎ করেছে। তৃণমূল নেতা সমীক রায় অধিকারীর কথায়, “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ। ভোটের আগে বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যই এ ধরনের অভিযোগ করছে।”

আরও পড়ুন: কুইক রেসপন্স টিমে এ বার শুধুই কেন্দ্রীয় বাহিনী, আধাসেনা পাচ্ছেন জেলাশাসকরাও

এদিকে সরকারি তথ‍্য বলছে, বসিরহাট মহকুমায় মোট পরিযায়ী শ্রমিক এসেছিল ২৯ হাজার ৩৮৬ জন। তার মধ্যে ১০টি ব্লকে গড়ে কাজ পেয়েছেন ৭৫ থেকে ১০০ জন। তাই এই রাজনীতির আকচা-আকচির মধ্যে অন্ন ও কর্মহীনতায় ভুগছে বসিরহাটের কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিক। ভোটমুখী বাংলায় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়াচ্ছে সব রাজনৈতিক দল। কিন্তু তাঁদের কর্মসংস্থানের সমস্যা মিটবে কি? প্রশ্ন কয়েক হাজার পরিযায়ী শ্রমিকের।