
সুন্দরবন: শীত সেভাবে না পড়লেও ঠান্ডাভাব একটা অনুভূত হচ্ছেই। আর এই মরশুমে পর্যটকদের ঘুরতে যাওয়ার অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান সুন্দরবন। বাঙালি মূলত ‘জলে কুমির আর ডাঙায় রয়্যাল বেঙ্গল’-এর দর্শন পেতে যান সেখানে। তবে জানেন কি সুন্দরবনের এই অরণ্যেই লুকিয়ে আছে পর্যটকদের অজানা সুস্বাদু এক ফল? সেখানে গেলে যা খেতে পারবেন আপনিও। ফলের নাম কী জানেন?
শীতের নলেন গুঁড়ের স্বাদকে হার মানাবে গোল পাতার ফল। সুন্দরবনের প্রায় সর্বত্রই গোলপাতার ফলন হয়ে থাকে। এখানে ছোট বড় মিলে প্রায় ৪৫০ এর মতো নদী ও খাল জালের ন্যায় বিন্যস্ত হয়ে আছে। আর সেই নদী ও খালের ধারেই গোলপাতা গাছ শোভা পায় অনবরত। গোলপাতা সুন্দরবনের একটি সম্ভাবনাময় ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি সুন্দরবনের একটি অতি মূল্যবান প্রাকৃতিক অর্থকরী সম্পদ।
এটি পামের একমাত্র প্রজাতি যা ম্যানগ্রোভ অঞ্চলে মেলে। সুন্দরবন বিষয়ে গবেষক অনিবেশ মণ্ডল বলেন, “মূলত স্বল্প ও মধ্যম লবণাক্ত অঞ্চলে এই গাছ দেখতে পাওয়া যায়। এর পাতা প্রায় ৩-৯ মিটার লম্বা হয়। দেখতে এটি নারকেল পাতার সাদৃশ্য। কিন্তু নারকেল পাতার চেয়ে এটা মজবুত। এবং স্বল্প সময়ে এটি পচন ধরে না।” এলাকার স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরের চালায় ছাউনি হিসেবে এটির ব্যপক চাহিদা রয়েছে।
কেমন দেখতে এই ফল?
বসিরহাটের সুন্দরবনের হিঙ্গলগঞ্জে, হাড়োয়া, মিনাখাঁ ও সন্দেশখালির পাশাপাশি পর্যটন কেন্দ্র টাকির মিনি সুন্দরবনের গেলে অসংখ্য গোলপাতা গাছ সহ গোলপাতার ফল দেখা যায়। তাল বা নারকেলের মতো এর ভিতরেও জল ও শাস সবই আছে। স্থানীয় মানুষের কাছে এই ফলের ভিতরে শাস খুবই প্রিয়। তবে এর আরও একটি বৈশিষ্ট ও গুণাবলী রয়েছে। এটি তালের মত কেটে তারপর এর থেকে রস ঝরানো যায়। ঠিক যেমন খেজুর ও তালের রস ব্যবহৃত হয়, সেই রকমই এটি খাদ্যে ব্যবহৃত হয়। এমনকী এই রস দিয়ে বিভিন্ন মিষ্টি সামগ্রী সহ গুড় তৈরি করা যায়।
উদ্ভিদবিদ রঞ্জিত মুখোপাধ্যায় বলেন, “সুন্দরবনের গোলপাতা গাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, একদিকে পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচাতে প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন ত্যাগ করে। পাশাপাশি জঙ্গলে বাঘ হরিণদের আত্মরক্ষার জায়গা এই গোলপাতা গাছ অপরিহার্য। পাশাপাশি এর যে ফল গুণগতমান অত্যন্ত বেশি জঙ্গলে থাকা পশু পাখি থেকে শুরু করে কীটপতঙ্গরা এই ফলের রস খায়। অন্যদিকে বাস্তু তন্ত্র রক্ষা করার অত্যন্ত উপযোগী এই গোলপাতার গাছ এছাড়াও দৈনন্দিক ও সামাজিক জীবনে গোলপাতার ফল অত্যন্ত সুস্বাদু এবং এই ফলের রস খেজুরের রসের গুণগতমান থেকে অনেকটাই বেশি।”