কলকাতা: কাঁধে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে পাহারা দিচ্ছে কেন্দ্রীয় বাহিনী, তালা খুলে তল্লাশির চেষ্টা করছে ইডি-র অফিসারেরা। কিন্তু ভিতরে প্রবেশ করা তো দূরের কথা, প্রাণ বাঁচাতে পালাতে হল সেই দুঁদে আধিকারিকদের। এমনকী কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান যাঁরা নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষিত, তাঁদেরকেও পালাতে হল এলাকা ছেড়ে। শুক্রবার সকালের ছবিটা দেখে অনেকেরই মনে পড়ছে অজয় দেবগণের RAID ছবির কথা। আয়কর দফতরের অফিসারদের বের করার জন্য যেভাবে ‘রামেশ্বর সিং’-এর লোকজন হামলা চালিয়েছিল, যেন তারই পুনরাবৃত্তি দেখা গেল সন্দেশখালির সরবেড়িয়ায়। এই ঘটনার ‘রামেশ্বর সিং’ হলেন শেখ শাহজাহান।
কে এই শাহজাহান, যাঁর জন্য এত মানুষ সাত সকালে হুড়মুড়িয়ে চলে এল ইডি-কে সরাতে? এমনিতে তিনি জেলা পরিষদের একজন কর্মাধ্যক্ষ। গত নির্বাচনেই জয়ী হয়ে এই পদ পেয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি ছিলেন পুরসভার চেয়ারম্যান। তবে বেশিদিনের ‘তৃণমূলী’ তিনি নন। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, একসময় সিপিএম-এর সমর্থক ছিলেন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরই তিনি হয়ে গেলেন ‘তৃণমূল।’ তবে প্রভাব সেই একই। বরং দিনের পর দিন বাড়ছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
কেউ কেউ বলেন, শাহজাহানের কথা ছাড়া নাকি একটা পাতাও নড়ে না সন্দেশখালিতে। তাঁর বাড়িতে যেতে গিয়ে আগেও আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। সুতরাং প্রশাসনের অজানা কিছুই নয়। কিন্তু শাহজাহানের তাতে কিছুই যায়-আসেনি। সবাই সব জানার পরও অনায়াসে একের পর এক পদ পেয়ে যাচ্ছেন তিনি। শোনা যায়, দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেও অনেক সময় তোয়াক্কা করেন না শাহজাহান। কিন্তু ‘বাহুবলী’ নেতার কদর কমে না। ভোটব্যাঙ্কও নাকি থাকে তাঁর হাতেই। একসময় হেরোইন-এর ব্যবসা করার অভিযোগও উঠেছিল শাহজাহানের বিরুদ্ধে। সে সব গায়েই মাখেন না তিনি।
বালু মল্লিকের ঘনিষ্ঠ বলেই শাহজাহানকে চিনতেন অনেকে। সন্দেশখালির একাধিক ভেড়ি, ইট ভাটার মালিক এই শাহজাহান আসলেই ‘নবাব’। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় তাঁর সম্পত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার দাবি ছিল, আসলে যত সম্পত্তি আছে, তা নাকি হলফনামায় দেখাননি শাহজাহান। তিনি একটি শপিং মলের মালিক বলেও দাবি করেছিলেন শুভেন্দু, পার্ক সার্কাসে নাকি রয়েছে তাঁর কোটি টাকার বাড়ি।