
জয়ন্ত বিশ্বাস
দুর্গাপুর ও আসানসোল: গরু পাচারের অভিযোগ। রাস্তায় গরু ভর্তি গাড়ি আটকে কয়েকজনকে হাত বেঁধে মারধর। কান ধরে রাস্তায় হাঁটানোও হল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল সেই ছবি। দুর্গাপুরের এই ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করল কোকওভেন থানার পুলিশ। ধৃতদের নাম দীপক দাস ও অনীশ ভট্টাচার্য। এই ঘটনায় বিজেপির যুব মোর্চার নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। শুক্রবার রাতে আসানসোলে এক সাংবাদিক বৈঠকে একথা জানালেন আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুনীল কুমার চৌধুরী।
গতকাল পুলিশ কমিশনার বলেন, গরু বোঝাই ওই গাড়িটি বৈধ ছিল। কাগজপত্র সব ঠিকঠাক ছিল। কোনও গরু পাচারের ঘটনা নয়। বাঁকুড়ার একটি হাট থেকে দুর্গাপুর হয়ে গাড়িটি জেমুয়া যাচ্ছিল।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিপিএল টাউনশিপ এলাকায় গরু ভর্তি গাড়ি আটকে হাতে দড়ি বেঁধে গাড়িতে থাকা বেশ কয়েকজনকে মারধর, কান ধরে অত্যাচারের অভিযোগ উঠে বিজেপি নেতা পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়-সহ বেশ কিছু বিজেপি কর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে। এই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের কোকওভেন থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সভাপতি তথা পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। অভিযোগ দায়েরের পর তিনি বলেন, “কিছু গরিব মানুষ হাট থেকে গরু কিনে ফিরছিলেন। এখানে কিছু দুষ্কৃতী তাঁদের ধরে। তাঁদের বেঁধে মারধর করে। তাঁদের টাকাপয়সা কেড়ে নেয়। এ তো ভয়াবহ জিনিস শুরু হয়েছে।” এরপরই বিজেপিকে তোপ দেগে তিনি বলেন, “অভিযুক্তরা বিজেপি করে। আমরা থানায় এসেছি। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে হবে।”
তারপরই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। শুক্রবার রাত দশটা নাগাদ আসানসোলে তড়িঘড়ি নিজের চেম্বারে প্রেসমিট করে পুলিশি তৎপরতা ব্যাখ্যা করলেন পুলিশ কমিশনার। তিনি বলেন, “দীপক দাস ও অনীশ ভট্টাচার্য নামে দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁরা স্থানীয় বিজেপি নেতা। আর পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায় রাজ্য যুব মোর্চার সদস্যও। তাঁদের সঙ্গে যে ১৫-২০ জন সমর্থক ছিলেন, তাঁদের আমরা চিহ্নিত করেছি। আমরা কড়া পদক্ষেপ করছি। এইসব কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। যাঁরা এই ঘটনায় জড়িত, তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেফতার করা হবে। এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” পারিজাতকে এখনও গ্রেফতার না করতে পারার কারণ হিসেবে পুলিশ কমিশনার বলেন, “পুলিশ তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়েছিল। তবে তাঁকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। খুব শীঘ্রই ধরা হবে।”
পারিজাত গঙ্গোপাধ্যায়
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের ঘটনার পর পারিজাত বলেছিলেন, গরু ভর্তি গাড়ির চালক ও খালাসির কাছ থেকে গরুর বৈধ কাগজ দেখতে চাওয়া হয়েছিল। ওরা দেখাতে পারেনি। সেই জন্য প্রতিবাদ করা হয়েছিল। এইভাবে গরু পাচার দিনের পর দিন ধরে চলেই যাচ্ছে। তিনি গরু পাচারের বিরুদ্ধে সবসময় রুখে দাঁড়াবেন বলে জানান। ঘটনাস্থলে তাঁকে ও তাঁর সঙ্গীদের জয় শ্রীরাম বলতেও শোনা গিয়েছিল। তিনি গ্রেফতারিতে ভয় পান না বলেও জানিয়েছিলেন। বলেছিলেন, “গ্রেফতার করা হলে জেল থেকে বেরিয়ে আবার গরু পাচার আটকাব।”