
আসানসোল: পুরনিগম কেন টাকা নিচ্ছে! বিস্ময় প্রকাশ করে সরাসরি এফআইআর করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এক বেসরকারি কারখানার করা মামলায় বেনজির নির্দেশ আদালতের। ‘আজই এফআইআর (FIR) করে আসুন’ বললেন বিচারপতি। শুক্রবার আসানসোল পুরনিগমের বিরুদ্ধে এমনই নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্টের বিচারপতি গৌরাঙ্গ কান্ত। তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে দাবি পুরনিগমের মেয়র বিধান উপাধ্যায়ের।
জামুরিয়ার এক বেসরকারি ইস্পাত কারখানার করা মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের এই কড়া নির্দেশ। বিচারপতি বলেন, “কীভাবে আসানসোল পুরসভা ২০ লক্ষ টাকা নেয়? আজই আসানসোল পুরসভার বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR) করে আসুন। ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করুন। আজই FIR করুন।” আগামী সোমবার মামলার জরুরি ভিত্তিতে শুনানি হবে কলকাতা হাইকোর্টে।
ঠিক কী ঘটেছে?
জামুরিয়া রানিগঞ্জের ১১ টি কারখানাকে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগে নোটিস দিয়েছে আসানসোল পুরনিগম। বলে দেওয়া হয়েছে, কারখানাগুলি বেআইনি, তাই ভেঙে ফেলা হবে। অভিযোগ, এরপরই বুলডোজার নিয়ে জরিমানা আদায় শুরু করেছে পুরনিগম। সেই জরিমানার আর্থিক অঙ্ক প্রায় ৫০০ কোটি। হাইকোর্টের প্রশ্ন, ‘জরিমানা আদায় হলেই কি বেআইনি নির্মাণ আইনি হয়ে যায়? এই প্রক্রিয়া অবৈধ।’ পুরনিগমের জরিমানার কথা শুনে বিস্মিত বিচারপতি।
কারখানার মালিকদের দাবি, পুর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে জরিমানা দিলে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা হবে না। কিন্তু জরিমানার রিসিভ কপি দিলেও পুর কর্তৃপক্ষ লিখিত ভাবে নিশ্চিত করছে না ভবিষ্যতে ওই নির্মাণ আর ভাঙা হবে না। তাই প্রশ্ন উঠেছে, লাখ লাখ টাকা কীসের জন্য আদায় করছে পুরনিগম?
অভিযোগ, জামুরিয়া ও রানিগঞ্জে পুরনিগমের অনুমতি না নিয়ে অবৈধ নির্মাণ করেছে এমন কারখানার সংখ্যা ১১ টি। বেসরকারি ইস্পাত কারখানাগুলিকে ২ বছর আগেই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল ভেঙে ফেলা হবে অবৈধ নির্মাণ। এবার পুরনিগমের বুলডোজার পৌঁছে যাচ্ছে কারখানায়। প্রতিদিন চলছে জরিমানা দিয়ে দরাদরি।
জামুরিয়ার ‘মান’ ইস্পাত কারখানা আদালতকে জানিয়েছে, গত ৫ জুলাই পুরনিগমকে ২০ লক্ষ টাকা দেওয়ায় ভাঙা বন্ধ হয়। পরে আবার ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে পুরনিগম। এরপর হাইকোর্টে মামলা করে ওই ইস্পাত সংস্থা। সেই মামলার জরুরি শুনানি চেয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সংস্থার আইনজীবী হরেরাম সিং। পুরো অভিযোগ বিস্মিত হন বিচারপতি।
দু’বছর আগে নোটিস জারি করেও চুপ ছিল পুরনিগম। আসানসোল পুরনিগমের নিষ্ক্রিয় ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিরোধীরা। পুর কর্তৃপক্ষের আইনি উপদেষ্টা তখন বলেছিলেন, ‘আমরা শিল্প বিরোধী নই। বহু মানুষ এখানে চাকরি করেন। তাদের রুজি-রুটির কথা ভেবে শিল্প সংস্থাগুলিকে জোর না দিয়ে, বল প্রয়োগ না করে জরিমানা আদায় হচ্ছে।’
এদিকে, আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র তথা বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তিওয়ারি বলেন, ‘আমরা না সামনে আনলে বিষয়টি কেউ জানত না। গরিবের ঘর অনায়াসেই বুলডোজার দিয়ে ভাঙা যায়। কিন্তু কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পুরনিগমের এখানে সেটিং চলছে। যাতে অবৈধ নির্মাণ ভাঙা না হয় আবার কারখানা মালিকদের টাকা দিতেও না হয়।’
মেয়র বিধান উপাধ্যায় বলেন, “পুরনিগমের তরফ থেকে পরিদর্শন করে মাপজোপ করেছি আমরা। তারপর অবৈধ নির্মাণ ভাঙার অর্ডার দেওয়া হয়েছে। তবে হাইকোর্টের অর্ডার এখনও পাইনি।” টাকা দিলে অবৈধ নির্মাণ বৈধ হয়ে যাচ্ছে, এ কথা মানতে নারাজ তিনি।