পশ্চিম মেদিনীপুর: গ্রামের মাতব্বরদের বিধানে এক বছর ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার ডেবরা ব্লকের ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সাতটি পরিবার। অভিযোগ, এ নিয়ে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েও সুরাহা হয়নি। প্রায় দু’বছর ধরে গ্রামের উৎসব থেকে চাষাবাদের কাজ, কোনও কিছুতেই তাদের অংশ নিতে দেওয়া হয়ি বলে অভিযোগ ওই পরিবারগুলির।
জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে গ্রামের মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরিকে কেন্দ্র করে গ্রামের অন্যান্যদের সঙ্গে বচসা জড়িয়ে পড়েন ডুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কালুয়াআকুব গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা। আর তারপর থেকেই গ্রামের মাতব্বরদের নির্দেশে সামাজিক বয়কট করা হয় প্রথমে দুটি পরিবারকে। তারপর সেই সামাজিক বয়কটের শিকার হওয়া পরিবারগুলোর সাথে যাঁরাই কথা বলেছেন, তাঁদেরও বয়রকট করা হয়!
বয়কট হওয়া পরিবারগুলিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে গেলে শাস্তির খাঁড়া ঝুলেছে অন্যান্যদের ওপরও। তাই এর পর আগ বাড়িয়ে আর কেউ সম্পর্ক রাখেননি সাত সাতটি পরিবারের সঙ্গে। এভাবেই গত দুই বছর ধরে সামাজিক বয়কটের শিকার বিশ্বরুপ দাস গোস্বামী ও নকুল হাইতের পরিবার। এবং গত ছ’মাস ধরে আরও পাঁচটি পরিবার বয়কটের শিকার হয়। তাদের মধ্যে রয়েছে নারায়ন চন্দ্র গাঁতাইত, বাদল গাঁতাইত, আশোক গাঁতাইত, অজিত গাঁতাইত, আসিত গাঁতাইতের পরিবার।
সামাজিক কোনও অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে চাষাবাদ কোনটাই তাঁদের করতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি ১০০ দিনের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে না পঞ্চায়েতের তরফ থেকে। এরকমই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ করছেন বয়কটে থাকা পরিবারগুলি।
ইতিমধ্যে এ নিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান, বিডিও, ডেবরা থানায় অভিযোগ জানিয়েছে পরিবারগুলি। কিন্তু এখনও প্রশাসনিকভাবে সাহায্য মেলেনি অভিযোগ।
বর্তমান সমাজে এভাবে সামাজিক বয়কট কীভাবে দিনের পর দিন থাকতে পারে কয়েকটি পরিবার, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও এ প্রশ্নের কোনও উত্তর নেই প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছে। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুন: কসবা-কাণ্ডের জের, কাঁথি পুর এলাকার ৭টি ভ্যাকসিন সেন্টার বন্ধ করল স্বাস্থ্য দফতর!
এ নিয়ে জেলার সমাজকর্মী মনিকাঞ্চন রায় বলেন, একুশ শতকে দাঁড়িয়েও এই ধরনের সামাজিক বয়কট লজ্জার ব্যাপার। এ নিয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ জরুরি। যদি কোনও রাজনৈতিক দলের ইন্ধনেও এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে তবে শীর্ষ নেতাদের উচিত এ নিয়ে পদক্ষেপ করা। মানুষ মানুষের যদি উপকারে না আসে, তাহলে সমাজ ব্যবস্থা চলবে কীভাবে, মন্তব্য তাঁর।