
ঝাড়গ্রাম: বিধানসভা নির্বাচনের আগে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ টেনে আনলেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর বিস্ফোরক অভিযোগ, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ষড়যন্ত্রে তৃণমূল জড়িত। তাঁর আরও বক্তব্য, জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় জড়িতরা এখনও তৃণমূলে রয়েছেন। ছত্রধর মাহাত তৃণমূলের নয়নের মণি বলেও উল্লেখ করেন শুভেন্দু। ঝাড়গ্রামের গোপীবল্লভপুরের সভা থেকে তোপ দেগেছেন শুভেন্দু অধিকারী।
ছত্রধর মাহাতর প্রসঙ্গ তুলে শুভেন্দু বলেন, “তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যের নাকি সম্পাদক, সেই ছত্রধর মাহাত, এখানে জনসাধারণের কমিটি তৈরি করেছিলেন। সালটা ২০০৭-০৮। কীভাবে মাইলের পর মাইল জঙ্গলমহলের বৃদ্ধবৃদ্ধাদের হাঁটাতেন মিছিলে। সেই ছত্রধর মাহাত এখন তৃণমূল কংগ্রেসের নয়নের মনি।”
সেই কথা প্রসঙ্গেই শুভেন্দু বলেন, “জ্ঞানেশ্বরী হত্যাকাণ্ড, যেখানে ১০০-র বেশি নিরীহ যাত্রী খুন হয়েছিলেন। তাঁরা আজকে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা।” এসআইআর আবহে বঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা কার্যত বেজে গিয়েছে। যুযুধান দুই পক্ষ নিজেদের জনসংযোগ প্রচারে নজর দিয়েছে, নতুন করে ঘুঁটি সাজাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের মাটিতে দাঁড়িয়ে এতদিন পর জ্ঞানেশ্বরী-নাশকতা প্রসঙ্গ উত্থাপনের পিছনে যে বিরোধী দলনেতার বৃহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটা স্পষ্ট রাজনৈতিক মহলের কাছে।
এপ্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সহ সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদারের পাল্টা খোঁচা, “ঘটনাটি ২০১০ সালের। সে সময়ে কেন্দ্রে কংগ্রেস, আর বাংলায় কমিউনিস্ট সরকার ছিল। সেক্ষেত্রে হঠাৎ শুভেন্দু সব ভুলে গিয়ে এর সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকে জড়াচ্ছেন কীভাবে? এরপর তো বলবেন চিনের যে ‘৬২ সালের যুদ্ধ, তার জন্যও তৃণমূল দায়ী। এত আজগুবি কথা কীভাবে বলেন।” তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, “২০১০ সালের ২৮ মে ঘটনা ঘটেছে। সে সময়ে শুভেন্দু দাবি করছেন, তিনি জঙ্গলমহলের দায়িত্বে ছিলেন। তাহলে তো তাঁর এতদিনে বলা উচিত ছিল।”
এদিকে, কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, “আমরা তো এই অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে করে এসেছি। শুভেন্দু অধিকারী তো এখন ভয়ঙ্কর কথা বলছেন। আজকে উনি অন্য দলে গিয়ে অন্য কথা বলছেন, সেটা আলাদা প্রশ্ন। কিন্তু সে সময়ে তো তিনি তৃণমূলেই ছিলেন। এতদিনে কেন মুখ খোলেননি। তাহলে এখন তিনি মামলা করুন, রাজসাক্ষী হয়ে যান।”
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৮মে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহার রাজাবাঁধ এলাকায় লাইনচ্যুত হয় জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। সেই সময়ে ডাউন লাইনে উল্টো দিক থেকে আসা একটি মালগাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের। এই রেল দুর্ঘটনায় ১৪৫ জন মারা গিয়েছিলেন বলে খবর। একে একে ১৪৫ জনের দেহ এবং দেহাংশ উদ্ধার হয়েছিল দুর্ঘটনাস্থল থেকে। এর মধ্যে ৩৭ জনের দেহ শনাক্ত করা যায়নি।