Post Poll Violence: ‘শুভেন্দুর চক্রান্তে সিবিআই তলব’! হাজিরা এড়ালেন ৩ তৃণমূল নেতা

CBI: বৃহস্পতিবার সকালে কার্যত দেখা যায় দশটা বাজলেও সিবিআই ক্যাম্পে হাজিরা দেননি ওই তৃণমূল নেতা

Post Poll Violence: 'শুভেন্দুর চক্রান্তে সিবিআই তলব'! হাজিরা এড়ালেন ৩ তৃণমূল নেতা
সিবিআই ক্যাম্পে হাজিরা দিলেন না ৩ তৃণমূল নেতা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 18, 2021 | 2:09 PM

পূর্ব মেদিনীপুর: ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে নন্দীগ্রামে বিজেপি নেতা (BJP leader) দেবব্রত মাইতি খুনে সিবিআই (CBI) দফতরে হাজিরা এড়ালেন নন্দীগ্রামের তিন তৃণমূল নেতা। বৃহস্পতিবার, সকাল দশটায় হলদিয়ার সিপিটি গেস্টহাউসে সিবিআইয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল অভিযুক্ত তিন তৃণমূল নেতার। কিন্তু, সময় পেরলেও তাঁদের দেখা যায়নি। কেন হাজিরা দিলেন না ওই তিন নেতা তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

সিবিআই সূত্রে খবর, বুধবারই মেইল মারফত নন্দীগ্রামের তিন তৃণমূল নেতা আবু তাহের, কালিচরণপুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শেখ সাইয়ুম কাজি ও নন্দীগ্রামের ১ নম্বর ব্লকের বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ শেখ খুশনবীকে-সহ আরও কয়েকজনকে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালে কার্যত দেখা যায় দশটা বাজলেও সিবিআই ক্যাম্পে হাজিরা দেননি ওই তৃণমূল নেতা। সূত্রের খবর, ওই তিন তৃণমূল নেতা সিবিআই দফতরে এদিন হাজিরা দিতে পারবেন না। কিন্তু, কেন তাঁরা আসতে পারবেন না তা স্পষ্ট নয়। এ বিষয়ে ওই তৃণমূল নেতাদের বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।

আগে শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে সিবিআই দফতরে হাজিরা এড়িয়েছিলেন তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ান। ফের তৃণমূল নেতাদের হাজিরা না দেওয়ায় প্রশ্ন উঠছে। এর আগে দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় শেখ সুফিয়ানের জামাই-সহ মোট ১১ জন তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। সেকারণেই কি এ বার হাজিরা এড়াচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব?

যদিও তৃণমূল নেতা আবু তাহের বলেন, “নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দুর চক্রান্তে সিবিআইয়ের জালে পড়তে হচ্ছে নন্দীগ্রামের একাধিক তৃণমূল নেতাকে। তবে কী কারণে সিবিআই তলব করেছে জানা নেই। তাই কারণ জানতে চেয়ে আমি চিঠি পাঠিয়েছি। এ নিয়ে আমার মুখ্য়মন্ত্রী ও ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথাও হয়েছে।”

আগেই নন্দীগ্রামে ভোট পরবর্তী হিংসা তদন্তে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় আগেই সুফিয়ানের জামাই-সহ ১১ জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। আগেই ওই মামলায় চার্জশিট পেশ করেছিল সিবিআই। সেই চার্জশিটে নাম ছিল শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদের পরেই তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা যায়, তৃণমূল নেতা সুফিয়ানের জামাই শেখ বায়তুল ইসলাম নন্দীগ্রামের দুই নম্বর অঞ্চলের প্রধান। বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি খুনে বায়তুল ইসলামের হাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তিনি ছাড়াও আরও ৯জন তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা হলে এলাকায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।

ভোট পরবরর্তী হিংসা (Post Poll Violence) তদন্তে শুক্রবারই আরও একটি চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। নন্দীগ্রামে বিজেপি কর্মী দেবব্রত মাইতি হত্যা মামলায় তিন জনের বিরুদ্ধে সেই চার্জশিটে নাম ছিল। লক্ষ্যণীয়ভাবে, এই মামলা থেকে কার্যত একরকম মুছে যায় তৃণমূল নেতা তথা নির্বাচনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য় এজেন্ট শেখ সুফিয়ানের (Seikh Sufiyan) নাম। এই ‘বাদটুকু’ নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক মহলের। উঠেছে নানা প্রশ্নও।

কিন্তু, সব ছাপিয়ে ফের তৃণমূল নেতাকে তলবের ঘটনায় কপালে ভাঁজ রাজনৈতিক মহলের একাংশের। একইসঙ্গে সুফিয়ানের হাজিরা না দেওয়ায় আরও জটিল হয় পরিস্থিতি। ওয়াকিবহাল  মহলের একাংশের অনুমান, জিজ্ঞাসাবাদের দায় এড়াতেই অসুস্থতার সার্টিফিকেট জমা দেওয়া হয়েছে তৃণমূল নেতার পক্ষ থেকে।

নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর নন্দীগ্রামের চিল্লোগ্রামের বাসিন্দা তথা বিজেপি সমর্থক দেবব্রত মাইতিকে খুনের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। সেই খুনের কাণ্ডে নাম জড়ায় সুফিয়ানেরও। নিহত দেবব্রতের পরিবার মানবাধিকার কমিশনের কাছে তৃণমূল নেতার নামে অভিযোগও দায়ের করেন।

খোদ নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী প্রকাশ্য জনসভায় স্পষ্টতই হুমকি দিয়ে বলেছিলেন, ‘অপরাধীদের প্রত্যককে খুঁজে বের করা হবে।’ এমনকী, বিজেপির তরফে অভিযোগ করে বলা হয়েছিল, দেবব্রত মাইতি খুনের ঘটনায় তৃণমূলেরই প্রভাবশালী নেতার হাত রয়েছে। এরপর সিবিআইয়ের হাতে তদন্তভার যাওয়ার পর তৃণমূল নেতা শেখ সুফিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে সিবিআই। এমনকী সুফিয়ান-সহ আরও দুই তৃণমূল নেতাকে তলব করা হয়।

টানা সাড়ে চারঘণ্টার ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদের পর সুফিয়ান নিজেই জানান, তিনি সবরকমভাবে তদন্তকারীদের সাহায্য করবেন। একইসঙ্গে এও অভিযোগ তোলেন যে  বিজেপি বিধায়কের অঙ্গুলিহেলনেই সুফিয়ানকে তলব করা হয়েছে। এমনকী, নিহত দেবব্রত মাইতি তৃণমূলের সমর্থক বলেও দাবি করেন এই দুঁদে তৃণমূল নেতা।

এরপর, তদন্ত এগোলেও  যখন কার্যত চার্জশিট পেশ হয় তখন দেখা যায় সেখানে অভিযুক্তের তালিকায় তো বটেই এমনকী সন্দেহভাজনের তালিকা থেকেও বাদ গিয়েছেন সুফিয়ান। শুধু সুফিয়ান নন, বাদ গিয়েছেন অন্য দুই তৃণমূল নেতাও যাঁদের সুফিয়ানের সঙ্গে একই দিনে তলব করা হয়েছিল। বদলে প্রকাশ্যে এসেছে তিনটি নতুন নাম। শেখ ফতেনুর, শেখ মিজানুর ও শেখ ইমদুলাল ইসলাম। যদিও এখনও এদের রাজনৈতিক কোনও পরিচয় সামনে আসেনি। কিন্তু,  পরে সম্পূর্ণ বদলে যায় ছবিটা। খোদ তৃণমূল নেতার জামাইকে গ্রেফতার করায় কার্যত রাজনৈতিক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়।

আরও পড়ুন: BSF: ‘মহিলাদের শ্লীলতাহানি করা হয় না, সবটাই ভিত্তিহীন অভিযোগ’