সুমনকল্যাণ ভদ্র: সম্প্রতি বঙ্গ সফরে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলে যান, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তারপর রাজ্যে সিএএ বলবৎ করা হবে। এরপর থেকেই টানা কয়েকদিন ধরে নরমে গরমে দেখা যাচ্ছিল বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুরকে। দলের প্রতি খানিক অসন্তোষও ধরা পড়ছিল তাঁর গলায়। একাধিকবার শান্তনুকে বলতে শোনা যায়, সিএএ না হলে আগামী নির্বাচনে নিজেদের অবস্থান ভেবে দেখতে হবে মতুয়া সমাজকে। শান্তনুর এই অবতারে তৈরি হয়েছিল নানা জল্পনা। কিন্তু চলতি সপ্তাহে হঠাৎই বিজেপি নেতা মুকুল রায় তাঁকে পাশে বসিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে শান্তনুকে বলতে শোনা যায়, জানুয়ারিতে অমিত শাহ ঠাকুরনগরে যাবেন এবং সিএএ বলবৎ হওয়া নিয়ে বিস্তারিত জানাবেন। এই সাংবাদিক সম্মেলনের পরই প্রশ্ন ওঠে, হঠাৎ এমন কী হল যে শান্তনু নিজের সুর নামিয়ে ফেললেন। অবশেষে সামনে এল এর নেপথ্যে এক ‘গোপন বৈঠক’।
মতুয়া সমাজের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে কিছুদিন আগেই কোচবিহার গিয়েছিলেন শান্তনু ঠাকুর। সেখানে সিএএ প্রসঙ্গ নিয়ে তিনি বেশ কড়া বার্তাই দেন। খবর পৌঁছয় দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে তড়িঘড়ি ময়দানে নামানো হয় কৈলাস বিজয়বর্গীয়, নিশীথ প্রামাণিকদের। সেদিন রাতেই শিলিগুড়ির এক হোটেলে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের ব্যবস্থা করা হয়। কলকাতা থেকে বিমানে উড়ে যান বিজেপির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত কৈলাস বিজয়বর্গীয়। রাত ১০টায় ওই হোটেলে শুরু হয় গোপন বৈঠক। কাকপক্ষীও টের পায়নি সেদিনের বৈঠকের।
সূত্রের খবর, শান্তনুকে বোঝাতে সবরকম চেষ্টা চালান কৈলাস। সঙ্গে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথও ছিলেন। বহু আলোচনার পর শান্তনুর মন খানিক নরম হয় বলে সূত্রের খবর। এরপরই নিজের কঠোর অবস্থান থেকে কিছুটা সরে দাঁড়ান বনগাঁর সাংসদ। এরপরের ঘটনা তো সকলেরই জানা। হেস্টিংসে বিজেপির নির্বাচনী কার্যালয়ে সাংবাদিক বৈঠকে মুকুলের পাশে বসে শান্তনু বলেন, তাঁর দল যখন সিএএ নিয়ে লড়েছে, আইন পাস করিয়েছে তা নিশ্চয়ই বলবৎ হবে। তৃণমূলে যোগদানের জল্পনা উড়িয়ে বনগাঁর সাংসদ বলেন, “আমাদের দাবি তো সিএএ বলবৎ করা নিয়ে। যে দল সিএএ বিরোধী সেখানে যাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।” একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে অমিত শাহ ঠাকুরনগরে গিয়ে বিশদে বিষয়টি জানাবেন। অতিমারির কারণে কিছুটা সময় লাগলেও সিএএ বলবৎ হবেই।