ভাঙড়: বৃহস্পতিবার তৃণমূল নেতা সওকত মোল্লার নেতৃত্বে তৃণমূলের মৌন মিছিল নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজু করল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার তৃণমূলের মিছিলে কোনও বৈধ অনুমতি ছিল না। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীন মিছিল হয়েছে। বোর্ড পরীক্ষা চলাকালীন কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই অনুমতি দেয় না প্রশাসন। এক্ষেত্রে অভিযোগ, অনুমতি না নিয়েই তৃণমূল মিছিল করেছে। শুধু তাই নয়, পুলিশের বক্তব্য, মৌন মিছিল নামেই ছিল। আসলে সেই মিছিল থেকে মাঝেমধ্যেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তৃণমূল কর্মী সমর্থকরা। সেই মিছিল থেকে চিৎকার চেঁচামেচি হয়েছে বলে পুলিশের কাছে খবর আছে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা চলাকালীন দীর্ঘক্ষণ বাসন্তী হাইওয়ের মত ব্যস্ত সড়ক অবরুদ্ধ করে মিছিল করা হয় বলে অভিযোগ। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তৃণমূলের মিছিলের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার রাতে ফুরফুরা শরিফে গিয়ে চোর চোর স্লোগানের মুখে পড়তে হয়েছিল সওকত মোল্লাকে। অভিযোগ, তিনি যখন ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে দেখা করে ফুরফুরা মাজার শরিফ এলাকায় ঘুরছিলেন, তখন একদল লোক তাঁকে দেখে চোর চোর বলে চেঁচিয়ে ওঠেন। সেই ঘটনার প্রতিবাদেই ভাঙড়ে মিছিলের ডাক দেন সওকত। তা নিয়ে আগেই প্রতিবাদ করেন আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকি। তিনি প্রশ্ন তোলেন পুলিশ কীভাবে এই মিছিলের অনুমতি দিল? কিন্তু পুলিশের অনুমতি যে ছিলই না, তা তোয়াক্কাই করেনি তৃণমূল। উল্লেখ্য পুলিশকেও কার্যত সেভাবে বৃহস্পতিবারের মিছিলে বাধা দিতে দেখা যায়নি। তারপরই মামলা রুজু। পুলিশের বক্তব্য, গত ২১ জানুয়ারি হাতিশালায় তৃণমূল ও আইএসএফের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধের ঘটনায় এলাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হয়। সেই ঘটনার বিষয়টি নজরে রেখেই তৃণমূলের কর্মসূচিতে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
কিন্তু রাজনৈতিক মহলেই প্রশ্ন উঠছে, হঠাৎ কেন ভাঙড়ে এত সক্রিয় পুলিশ। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব উঠে আসছে।
২০২১ এর বিধানসভা ভোটের পর ভোট পরবর্তী হিংসা ছড়ানোর ঘটনায় ভাঙড়-কাশীপুর থানার পুলিশের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করেছে আইওসএফ-সিপিআইএম সহ বিরোধী দল গুলি। পাশাপাশি এই আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ার কারণ দেখিয়েই গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বামেদের কর্মসূচিতে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তৃণমূলের মিছিল নিয়ে কোনও পদক্ষেপ না করলে, ফের বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হত পুলিশ প্রশাসনকে। বারুইপুর পুলিশ জেলার অতিরিক্ত সুপার মাকসুদ হাসান বলেন, ‘‘আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ যদিও মিছিলের উদ্যোক্তা সওকতের বক্তব্য, “মিছিলের অনুমতি আমরা চেয়েছিলাম, পুলিশ তা দেয়নি। মৌন মিছিল করার কথা ছিল, সেটাই হয়েছে।”
সিপিআইএম নেতা তুষার ঘোষ বলেন, “পুলিশ প্রশাসন বরাবরই তৃণমূলের হয়ে কাজ করে আসছে। দলদাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে। আমরা ভাঙরের নানা বিষয় নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। তৃণমূলের মিটিং নিয়ে প্রশাসন কী করছে জানি না। নিশ্চিত পরীক্ষা চলাকালীন কোনও মিছিল মিটিং হওয়া কাম্য নয়। প্রশাসন প্রশাসনের কাজ করছে। তারা জানে সেটা তবে আমাদের উপর অত্যাচার হলে আমরা আবারও আদালতের দ্বারস্থ হব।”