
বীরভূম: বাড়িতে টাকা রাখা যাচ্ছে না, টাকা হাতে নিয়ে বেরনোও যাচ্ছে না। গয়না-গাটি তো বাড়িতে রাখাই দুষ্কর হয়ে উঠেছে। শীত বাড়তেই বাড়ছে চুরি! গত ১৫ দিনে এমন সব ঘটনা সামনে এসেছে, যা দেখে ছিঁচকে চোরের কীর্তিও বলা যায়। আবার বড়সড় চুরি হয়নি, এমনটাও নয়। বছরের শুরুতেই একের পর এক চুরির ঘটনা সামনে আসছে বিভিন্ন জেলা থেকে। অনেকেই বলেন, শীতের রাতে চোরেদের বেশ কিছু সুবিধা হয়। যেমন রাত বড় হওয়ায় সময় পাওয়া যায় অনেকটা। আর লেপের তলায় গভীর ঘুম ভাঙেও না চট করে। দেখা যাচ্ছে, শুধু বাড়িতে নয়, বীরভূমের স্কুলে চুরি, হুগলির মোবাইল দোকানে চুরি, মন্দিরে ঠাকুরের গয়না চুরি, মাছের ভেড়িতে চুরি- সর্বত্র যেন বেড়েই চলেছে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব। পাড়ায় পাড়ায় লোকজন প্রশ্ন তুলছেন, কোথায় পুলিশ? কোথায় নিরাপত্তা?
আলমারি ভেঙে চুরি
সপ্তাহ খানেক আগে একদল ‘চোর’ হানা দেয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশতলায়। একটি বাড়ি থেকে দিনের আলোতেই খোয়া যায় ১ লক্ষ টাকা, সঙ্গে উধাও ৭-৮ লক্ষ টাকার সোনার গয়না। সকাল বেলায় ভাঙা আলমারি দেখে বাড়ির মালিকের চক্ষু চড়কগাছ। স্ত্রীর অপারেশনের জন্য ওই টাকা তুলে বাড়িতে রেখেছিলেন তিনি। দিন-দুপুরে এমন চুরির ঘটনা দেখে শিউরে ওঠেন প্রতিবেশীরাও। তাঁরা বলছেন, বাড়িতে টাকা-পয়সা রাখাই তো দায় হয়ে পড়েছে! মহেশতলা থানা এলাকার নুঙ্গি সুভাষপল্লীর বাটানগরের ঘটনা।
উধাও নগদ ২৪ লক্ষ, গয়না
ব্যাঙ্কের লোন মেটানোর জন্য টাকা রেখেছিলেন ঠাকুরপুকুরের শাহারউদ্দিন। ভোর রাতে কাপড় ব্যবসার কাজে হাটে গিয়েছিলেন তিনি। বাড়ি ফাঁকা ছিল। ফিরে এসে যা দেখলেন, তাতে পথে বসে যাওয়ার অবস্থা। আলমারির লকার ভাঙা। চুরি হয়ে গিয়েছে প্রায় ২৪ লক্ষ টাকা। স্ত্রীর গয়নাও উধাও। ঠাকুরপুকুর মহেশতলা ব্লকের চট্টা চণ্ডীগড়ের ঘটনা।
চুরি গেল রান্নাঘরের তেলের প্যাকেটও
গত রবিবার মেদিনীপুরের নীলকমল অট্ট ও প্রণতি অট্ট গিয়েছিলেন বিয়েবাড়ি। ফিরে এসে ঘরের হাল দেখে তাঁরা অবাক হয়ে যান। টাকা তো বাড়িতে বেশি ছিল না, চোরেরা তাহলে নিল কী? রান্নাঘরের তেলের প্যাকেট, খাবারের প্যাকেট, ফ্রিজে রাখা মিষ্টি, চকোলেট- যা ছিল সব। লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না নিয়ে পালিয়ে যায়নি দুষ্কৃতীরা। ঘরের অবস্থাই বলে দেয়, তারা বলে মিষ্টি, চকোলেট পেট ভরে খেয়ে তবে বেরিয়েছে।
লঙ্কা গুঁড়ো চোখে ছু়ড়ে চুরি
ঘড়িতে সকাল সাড়ে ১১ টা। রাস্তায় ভরা লোক। পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডালের মদ ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল ৪ লক্ষ টাকা নিয়ে ব্যাঙ্কে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ কয়েকটা স্কুটি এসে দাঁড়িয়ে পড়ল। হতভম্ব ব্যবসায়ী কিছু বুঝে ওঠার আগেই চোখে এসে পড়ল লঙ্কার গুঁড়ো। হাতের টাকা নিয়ে ধাঁ দুষ্কৃতীরা। অন্ডালের উখরা বাজার এলাকার লোকজন তো রাস্তায় টাকা হাতে বেরতেই ভয় পাচ্ছে এরপর থেকে।
গেটের তালা ভেঙে চুরি
স্ত্রী মালেখাকে নিয়ে হুগলির চণ্ডীতলার সেলিম মল্লিক বাড়ি ঢোকেন সন্ধ্যায়। তার মধ্যে যা ঘটার ঘটে গিয়েছে। গত ২০ জানুয়ারির ঘটনা। আলমারি ভেঙে চুরির ঘটনা ঘটে হুগলির চণ্ডীতলা থানা এলাকার কৃষ্ণপুর দক্ষিণ পাড়ায়। পিছনের গেটের তালা ভেঙে, আলমারি ভেঙে চুরি হয় সেখানে।
মাছের ভেড়িতে চুরি
বাড়িতে ঢুকে চুরির ঘটনা তো ঘটছেই, এবার চোর হাজির ভেড়িতেও। সন্দেশখালির ঘটনা। মাছের ভেড়িতে চুরি করতে গেলে হাতে নাতে দুষ্কৃতীদের ধরে ফেলে স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে সন্দেশখালিতে এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রায় প্রতিটি ভেড়িতেই হানা দিচ্ছে দুষ্কৃতীরা। চুরি হয়ে যাচ্ছে মোটর পাম্প। মেশিনপত্র রাখাই দায় হয়ে উঠেছে ভেড়ির মালিকদের। ওই এলাকার লোকজন বলছেন, এটা একজন বা দুজনের ব্যাপার নয়। পুরো একটা গ্যাং এই কাজ করছে।
খোয়া গেল শেষ সম্বলও
রাজীব ও রুমা মল্লিকের গ্রামের বাড়ি ফাঁকাই থাকে। তাঁরা বাস করেন বাঁকুড়া শহরে। কিছু টাকা রাখা ছিল সেই গ্রামের বাড়িতে। ফিরে গিয়ে তাঁরা দেখেন লকার ফাঁকা। কষ্ট করে জমানো ২ লক্ষ টাকাই চুরি হয়ে গিয়েছে। সম্বল বলতে ছিল ৬ ভরি গয়না। সেটাও খোয়া গিয়েছে।