হরিশ্চন্দ্রপুর: পঞ্চায়েত ভোটের এখনও ঢের দেরি রয়েছে। তবে তার আগে প্রার্থী বাছাই নিয়েই সংঘর্ষে জড়াল তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী। একেবারে বুথ কমিটির বৈঠকেই সংঘর্ষে জড়ায় দু-পক্ষ। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, এই সংঘর্ষে দু-পক্ষের ৬ জন গুরুতর আহত হয়েছেন। তারপর পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। শনিবার বিকালে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায় এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় মোতায়েন রয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। সবমিলিয়ে, পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে শাসক শিবির।
পুলিশ সূত্রে খবর, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর বুথে সংঘর্ষ ঘটে। তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী, মহম্মদ মুজাহিদ এবং জাকির হোসেনের মধ্যে সংঘর্ষ হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় ৬ জন আহত হয়েছেন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-১ নম্বর ব্লকের অন্তর্গত মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মহেন্দ্রপুর বুথে তৃণমূলের বুথ কমিটির বৈঠক চলছিল। মহেন্দ্রপুর হাই স্কুল ময়দানে বৈঠক বসেছিল। মূলত, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের জন্য বুথস্তর থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম সংগ্রহ করতেই এই বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে মহেন্দ্রপুর কেন্দ্রের প্রার্থীর নাম দেওয়া নিয়েই বিবাদের সূত্রপাত।
মহেন্দ্রপুরের প্রার্থী হিসাবে নাম উঠে আসে দুইজনের। একজন বর্তমান পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ মুজাহিদ এবং অন্যজন তৃণমূলের পাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা জাকির হোসেন। বৈঠকের মধ্যেই দু-পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। এরপরেই দুই গোষ্ঠীর অনুগামীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এমনকি বৈঠক শেষে মহম্মদ মুজাহিদ এবং তাঁর অনুগামীরা বাড়িতে চড়াও হয় বলেও জাকির হোসেনের অভিযোগ। তিনি জানান, তাঁর ছেলে সোয়েল আক্তার, স্ত্রী এবং তাঁকে বেধড়ক মারধর করা হয়। তারপর প্রতিবেশীরা তাঁদের হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং তাঁর ছেলে ও স্ত্রীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাকির হোসেন। মহম্মদ মুজাহিদের অনুগামীরাই মারধর করেছে অভিযোগ তুলে তাঁর গ্রেফতারিরও দাবি তুলেছেন জাকির হোসেন।
যদিও জাকির হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঞ্চায়েত সদস্য মহম্মদ মুজাহিদ। তাঁর পাল্টা দাবি, জাকির হোসেন মারধরের নাটকের চক্রান্ত করে তাঁকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। বৈঠকে একপ্রস্থ বাদানুবাদ হলেও সংঘর্ষের কোনও ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি মুজাহিদের।
তবে এদিনের ঘটনায় শাসকদলের অভ্যন্তরীণ সংঘাত প্রকাশ্যে এসে পড়েছে বলে তোপ দেগেছেন বিরোধীরা। তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে মহেন্দ্রপুর অঞ্চল কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুস শোভান। কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, এখন চারিদিকে এটা হবে। মানুষ এদের জবাব দেবে। যদিও পঞ্চায়েত সদস্যের সুরেই সংঘর্ষের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু। তিনি বলেন, তৃণমূল কংগ্রেস বৃহত্তম দল। এভাবেই বুথ স্তর থেকে প্রার্থী বাছাই করে। অনেক জনপ্রিয় নেতা রয়েছেন। প্রার্থী বাছাই নিয়ে এদিনের বৈঠকে বাদানুবাদ, মতান্তর হয়েছিল। ব্লক সভাপতি নিজে উপস্থিত থেকে মতান্তর মিটিয়ে দিয়েছেন। কোনও সংঘর্ষ ঘটেনি। বিরোধীরা রং চড়াচ্ছে। দলে কোনও গোষ্ঠী কোন্দল নেই বলেও দাবি জানিয়েছেন তিনি।