
চোপড়া: প্রথমে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভিন রাজ্যে পাড়ি। সেখানেই হাতে কলমে প্রতারণার প্রশিক্ষণ। তারাই আবার গ্রামে ফিরে খুলে বসত প্রতারণার পাঠশালা। প্রতারণার হাব উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ায় প্রত্যেক বাড়িতে ঢুঁ মেরে তদন্তকারীদের হাতে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। তদন্তকারীদের হাতে তথ্য এসেছে, কেরল, রাজস্থানে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়ে সাইবার অপরাধ জগতে হাত পাকাচ্ছে প্রত্যন্ত গ্রামের যুবকরা। তারপর কয়েক মাস পর নিজেদের গ্রামেই ফিরে আসছে। প্রত্যন্ত গ্রামের এখন অনেক শিক্ষিতের সংখ্যা বেড়েছে, যারা চাকরি জোগাড় করতে পারেনি। মূলত প্রতারকরা তাদেরকেই টার্গেট করছে। প্রথমে তাদের ‘ব্রেন ওয়াশ’ করানো হয়, তারপর চলে প্রশিক্ষণ। মোটা টাকার বেতনের চাকরি দেওয়ার টোপ দেওয়া হত। বেশিরভাগেরই পা পিছলে যায় সেই প্রতারণার ফাঁদে। তারাই আবার বাকিদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।
তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই প্রতারকদের তিন চাঁইকে গ্রেফতার করেছে। সব থেকে উল্লেখ্যযোগ্য, ধৃতদের মধ্যে যে সবচেয়ে বয়সে বড়, সেই বছর কুড়ির এক যুবক। আরেক জনের বয়স পনেরো। তদন্তকারীরা মনে করছেন, সাইবার ক্রাইমে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতের অপরাধ জগতের একটা অংশ জড়িয়ে রয়েছে। সেখান থেকেই বায়োমেট্রিক জালিয়াতি, আধার জালিয়াতি শিখে আসছে। কেউ ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়েছে, কেউ মাধ্য়মিকের গণ্ডি পেরিয়েছে। তারা মূলত ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের কাজে গিয়ে প্রতারণার ‘টেকনিক্যাল’ বিষয়ে হাত পাকিয়ে আসছে। তাদের প্রত্যেকেরই কম্পিউটার সম্পর্কে একটা সম্যক অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা গ্রামে বসে শিক্ষিক লোকেদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ফাঁকা করছে বলে দাবি তদন্তকারীদের।
তদন্তকারীরা মনে করছে, প্রথম প্রথম পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভিন রাজ্যে যাচ্ছেন বাংলার কিশোর-যুবকরা। সেখানে গিয়েই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে যাচ্ছে। তারপরই চেইন মারফত সেই সিস্টেম এগোচ্ছে। এখন বিষয়টি একটা ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ জেনেবুঝেই সাইবার প্রতারণার খুঁটিনাটি শিখতে ভিন রাজ্যে যাচ্ছে বাংলার যুব সমাজ।
আপাতত সাইবার বিশেষজ্ঞদের ঘুম উড়িয়েছে চোপড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম নারায়ণপুর। সেই গ্রামে চা বাগানের আড়ালে রীতিমতো কুটিরশিল্পের আকার নিয়েছে সাইবার প্রতারণা। বেশ কয়েকটি বাড়িতে ইতিমধ্যেই তল্লাশি চালিয়েছেন তদন্তকারীরা। উদ্ধার হয়েছে ল্যাপটপ, কম্পিউটার, ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ার মেশিন, আধার কার্ডের থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একাধিক নথি। ইতিমধ্যেই কলকাতা থেকে সিআইডি টিম গিয়েছে ইসলামপুরে। ইসলামপুর সাইবার ক্রাইম থানায় পৌঁছেছেন তাঁরা। চোপড়ায় যৌথ অভিযানের সম্ভাবনা রয়েছে।