Uttar Dinajpur: ব্যাগের ভিতর মৃত সন্তান, অ্যাম্বুল্যান্সের টাকা না দিতে পারায় বাসে করে ফিরলেন বাবা

Uttar Dinajpur: সূত্রের খবর, কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মুস্তাফানগর গ্রামপঞ্চায়েতের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মার স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দেন। পাঁচ মাস পর দুই শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়ে।

Uttar Dinajpur: ব্যাগের ভিতর মৃত সন্তান, অ্যাম্বুল্যান্সের টাকা না দিতে পারায় বাসে করে ফিরলেন বাবা
ব্যাগে ছেলে নিয়ে ফিরছেন বাবা।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 14, 2023 | 6:22 PM

উত্তর দিনাজপুর: আবারও শিউরে ওঠার মতো ঘটনা। জলপাইগুড়ির পর এবার কালিয়াগঞ্জ (Kaliagang)। টাকার অভাবে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করতে পারেননি বাবা। পাঁচ মাসের সন্তানের মৃতদেহ ব্যাগে বয়ে নিয়ে এলেন কালিয়াগঞ্জ পর্যন্ত। সমাজ কতটা অমানবিক হতে পারে, আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা। অভিযোগ, টাকার অভাবে অ্যাম্বুল্যান্স না পেয়ে মৃত শিশুকে ব্যাগে করে শিলিগুড়ি থেকে কালিয়াগঞ্জে নিয়ে আসেন অসহায় বাবা। এই ঘটনা জানাজানি হতেই জেলা জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।

সূত্রের খবর, কালিয়াগঞ্জ ব্লকের মুস্তাফানগর গ্রামপঞ্চায়েতের ডাঙ্গিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অসীম দেবশর্মার স্ত্রী যমজ সন্তানের জন্ম দেন। পাঁচ মাস পর দুই শিশুই অসুস্থ হয়ে পড়ে। গত রবিবার তাদের দু’জনকেই কালিয়াগঞ্জ ষ্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাদের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। যদিও শেষমেশ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে দুই শিশুকে।

গত বৃহস্পতিবারই এক শিশুকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন অসীম দেবশর্মার স্ত্রী। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাতে আরেক শিশুর মৃত্যু হয়। অসীমবাবু পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। অর্থের অভাবে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কোনও অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করতে পারেননি বলে জানান। এরপর রবিবার ভোরে মৃত ছেলের মৃতদেহ একটি ব্যাগে ভরে বেসরকারি বাসে করে রায়গঞ্জ পৌঁছন তিনি।

সেখান থেকে আরেকটি বাসে চেপে কালিয়াগঞ্জে পৌঁছন। অসীম দেবশর্মা জানিয়েছেন, মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা ৮ হাজার টাকা দাবি করেন। এমনিতেই চিকিৎসা বাবদ অনেকটা খরচ হয়ে গিয়েছে তাঁর। প্রায় সর্বস্বান্ত। এরপর আর সন্তানের দেহ এত টাকা খরচ করে আনার মতো সামর্থ্য ছিল না হতভাগ্য বাবার। তাই একটি কাঁধ ব্যাগে ছেলের দেহ ভরে নিয়ে বাসে উঠে পড়েন বাবা।

অসীম দেবশর্মা বলেন, “যেই অফিসে গাড়ির জন্য লেখালেখি করে সেখানে বললাম কালিয়াগঞ্জ যাব। জানতে চাইল রোগী কে? বললাম রোগী না, মারা গিয়েছে। শুনে বলল দেহ নিয়ে যাওয়ার অনুমতি নেই। তাই টাকা লাগবে। বলল ৮ হাজার টাকা লাগবে। দু’জনকে বললামও। শিলিগুড়ি থেকে তাই বাসে উঠে পড়লাম। রায়গঞ্জে নেমে আবার বদলালাম বাস। কাউকে জানাইনি বাসে কী আছে। কালিয়াগঞ্জে বিবেকানন্দ মোড়ে নামার পর গৌরাঙ্গ দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেন। তাতেই বাড়ি ফিরি।”

এই গৌরাঙ্গ দাস স্থানীয় বিজেপি নেতা। তিনি বলেন, “এটা খুবই কষ্টদায়ক ঘটনা। ঘটনার খবর পেয়েই কোনও রাজনৈতিকভাবে নয় মানবিকতার খাতিরে একটি অ্যাম্বুলেন্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। অন্তত বাড়ি অবধি মৃত শিশুটিকে অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যেতে পারে শিশুটির অসহায় বাবা।” অন্যদিকে এ নিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় ব্লক সভাপতি নিতাই বৈশ্য বলেন, “ঘটনাটি খুবই দুঃখদায়ক। তবে পরিবারের লোকেরা আমাদের সঙ্গে যদি যোগাযোগ করতেন আমরা ব্যবস্থা নিতাম।” কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেন নেতাদের আলাদা করে যোগাযোগ করতে হবে? সরকারি এত প্রকল্প থাকার পরও কেন টাকার অভাবে কাউকে মায়ের মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে, কাউকে সন্তানের নিথর শরীর ব্যাগে ভরে নিয়ে ফিরতে হবে?

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কনকনে শীতে জলপাইগুড়ির লক্ষ্মীরানীদেবীর দেহ কাঁধে নিয়ে ফিরেছিলেন তাঁর ছেলে। জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে মারা গিয়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। দেহ বাড়ি অবধি নিয়ে যেতে ৩ হাজার টাকা চেয়েছিল স্থানীয় অ্যাম্বুলেন্স। টাকা দেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় নিহতের ছেলে ও স্বামী কাঁধে দেহ নিয়ে ফেরেন। তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য। পাঁচ মাসের মাথায় আবারও সেই দৃশ্য এ রাজ্যেই!