
ঢাকা: ঘন কুয়াশায় পদ্মা তে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। একেবারে আক্ষরিক অর্থে তীরে এসে ডুবল তরী। বুধবার (১৭ জানুয়ারি), সকাল নটা নাগাদ বাংলাদেশের মানিকগঞ্জ জেলার পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়ার সময় বেশ কয়েকটি ট্রাক এবং বহু যাত্রী নিয়ে ডুবে গেল একটি ফেরি। দুর্ঘটনার পর, ‘রজনীগন্ধা’ নামের ফেরিটির ১০ জন যাত্রীকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। তবে, বাকিদের এখনও কোনও খোঁজ নেই। ঘন কুয়াশায় দেখতে না পেয়ে ঘাটের একটি অংশে ধাক্কা মেরে ফেরিটি ডুবে গিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় ডুবুরি-সহ উদ্ধারকারীদের দল। নৌকোটিতে পদ্মা পারাপারের জন্য যানবাহন-সহ বহু মানুষ উঠেছিলেন বলে জানা গিয়েছে। কাজেই এই ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশকে মোটামুটিভাবে আড়াআড়ি ভাগ করেছে পদ্মা নদী। বর্তমানে পদ্মা সেতু হয়ে গেলেও, এখনও বহু মানুষ ফেরি যোগেই নদী পার হন। সূত্রের খবর, মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) ভোর রাত প্রায় ১টা নাগাদ রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে সাতটি ছোট ট্রাক ও দুইটি বড় ট্রাক এবং আরও বহু মানুষ নিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের উদ্দেশে রওনা হয়েছিল রজনীগন্ধা নামের ফেরিটি। ঘন কুয়াশায় পথের সন্ধান না পেয়ে, মাঝ নদীতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিল ফেরিটি। পরে কুয়াশা কিছুটা পরিষ্কার হলে, সেটি পাটুরিয়া ঘাটের দিকে এগিয়ে আসে। কিন্তু, তখনও কুয়াশা পুরোটা কাটেনি। তাই, তীরে ভেড়ার সময় পাটুরিয়া ঘাটের ৫ নম্বর ঘাটের কাছে বাল্কহেড নামে এক অংশের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ফেরিটি ডুবে যায়।
উদ্ধার হওয়া মহম্মদ নাজমুল হোসেন বলেছেন, “আমার গাড়িতে বস্তাভর্তি লোহা ছিল। সেগুলি কাচপুরের এক কারখানায় নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। রাত ১২টা নাগাদ ৯টি পণ্যবাহী যানবাহন নিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে রজনীগন্ধা ফেরিটি পাটুরিয়ার দিকে রওনা দেয়। কিন্তু ঘন কুয়াশার পাটুরিয়া ঘাটে যাওয়ার আগেই ফেরিটি নোঙ্গর করা হয়। ফেরিটি পানিতে ডুবে যাওয়ার সময় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটতে থাকি। পরে একটি ট্রলার এসে আমাকে উদ্ধার করে নদীর পাড়ে আনে।”
পদ্মায় ধীরে ধীরে ডুবছে ফেরি, নদী উজার করে চলছে উদ্ধারকাজ
মানিকগঞ্জের আরিচা জমকল বিভাগের ডুবুরি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করছে। পাশাপাশি ঢাকা থেকেও দমকলের ডুবুরি ইউনিট ঘটনাস্থলে ছুটে এসেছে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১০ জনকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা গিয়েছে। মানিকগঞ্জের জেলাশাসক রেহানা আখতার জানিয়েছেন, ১০ জনের মধ্যে চারজন সাঁতরে পারে চলে এসেছিলেন। বাকি ছয়জনকে উদ্ধার করেছেন দমকলের ডুবুরিরা। তিনি আরও জানিয়েছেন, এই ঘটনার তদন্তের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিসট্রেট সানজিদা জেসমিনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে, পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে, ফেরিটিতে অতিরিক্ত মাল নেওয়া হয়েছিল।
উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীও। ডুবে যাওয়া ফেরিটি উদ্ধারের জন্য নারায়ণগঞ্জ থেকে ‘হামজা’ নামে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ রওনা দিয়েছে। ঢাকা দমকল বিভাগের সহকারি পরিচালক আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, দমকল, পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী মিলে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে। নিখোঁজ ব্যক্তিদের-সহ ডুবে যাওয়া যানবাহনগুলি উদ্ধারের চেষ্টা করা হচ্ছি।