ঢাকা: বামপন্থী মানেই ধর্মনিরপেক্ষ, ধর্মীয় মতবাদ নিয়ে চলা রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে তাদের চরম বিরোধ। দেশ ও সময় ভেদে এই ধারণা সতঃসিদ্ধে পরিণত হয়েছে। কিন্তু, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে এক অদ্ভুত দৃশ্য। তেলে-জলে মিশে যাওয়ার মতোই সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক দলগুলিও হাত মেলাচ্ছে একে অপরের সঙ্গে। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের সময়, এপাড় বাংলায় বামপন্থীরা হাত ধরেছিলেন মূলত ‘ধর্মীয় দল’ হিসেবেই পরিচিত আইএসএফ-এর। এবার, ওপাড় বাংলাতেও ধর্মীয় চরম ডানপন্থী দলগুলির সঙ্গে জোট বাঁধছে বামপন্থী ও চরম বামপন্থী হিসেবে পরিচিত দলগুলি। তাদের দাবি, আওয়ামি লিগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনের কারণেই বাম, ডান, ধর্মীয় দলগুলির পথ একসঙ্গে মিশে গিয়েছে।
বুধবার (২৯ নভেম্বর), ঢাকায় এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামি আন্দোলন। এই অনুষ্ঠান যেমন যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল (সংসদে আসন না থাকলেও) বিএনপি, তেমনই ছিল জেএসডি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, ভাসানী পরিষদের মতো কট্টর বাম ধারার দলগুলি। ছিল ধর্মভিত্তিক দল খেলাফত মজলিস, জামাতে ইসলামির সহযোগী সংগঠন ওলামা মাশায়েখ পরিষদের প্রতিনিধিরাও। আরও যোগ দিয়েছিল এলডিপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের মতো চরম বাম, মধ্য ও মধ্য-ডানপন্থি দলগুলিও।
ধর্মভিত্তিক দলগুলি সঙ্গ একই সভায় যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেছেন, “ঘরে আগুন লাগলে, তা নেভাতে পাড়া-প্রতিবেশিকেও ডাকতে হয়। দেশে আগুন লেগেছে বলেই, প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক ও ইসলামি ধারার সবাই একত্রিত হয়েছে।” গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি তথা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সহ-শবাপতি নুরুল হক নুর বলেন, “২০১৪ সালে নির্বাচন প্রতিহত করা যায়নি। এই সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কিছু হবে না। সবাইকে দল-মত নির্বিশেষে রাজপথে নামতে হবে।” অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আওয়ামি লিগ সরকারের জুলুম-নির্যাতনে বাম, ডান, ধর্মীয় দল সবাই এখন এক সঙ্গে।” আয়োজক দল, বাংলাদেশ ইসলামি আন্দোলনের নেতা আমির সৈয়দ মহম্মদ ফয়জুল করিম বলেছেন, “ডামি প্রার্থী দেওয়ার নামে আওয়ামি লিগ সাজানো নির্বাচন করতে চলেছে। স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও গণতন্ত্র রক্ষায় বাম-ডান সব দলের এক টেবিলে বসতে পারা অনেক বড় বিষয়।”
এই অনুষ্ঠানে ইসলামি আন্দোলনের নেতা আমির চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম, তাঁদের সম্মিলিত ১১ দফা দাবি তুলে ধরে করেন। এর মধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে আসন্ন নির্বাচন বর্জন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ‘স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী’দের ‘অত্যাচারী’ সরকারের সঙ্গে হাত না মেলানোর এবং ‘নীল নকশার নির্বাচনে’ অংশ না নেওয়ার বার্তা দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী তফশিল বাতিল করে এবং বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরির দাবি জানানো হয়েছে। সংসদ ভেঙে দিয়ে একটি নিরপেক্ষ সরকারের আওতায় নির্বাচন করারও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সভার শেষে নেতারা জানিয়েছেন, সব পক্ষ থেকে আসা মতামত নিয়ে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঠিক করা হবে।