Bangladesh News: বাংলাদেশে জুড়ে পালিত হচ্ছে ৫৩ তম স্বাধীনতা দিবস, শ্রদ্ধা জ্ঞাপন প্রধানমন্ত্রী-রাষ্ট্রপতির
Bangladesh News: বাংলাদেশের আজ ৫৩ তম স্বাধীনতা দিবস। আজ ভোরে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি।
ঢাকা: আজ ২৬ মার্চ। বাংলাদেশের ৫৩ তম স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের ভোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতার ঘোষণা হয়ে গেলেও চূড়ান্ত জয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত তিনি সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ডাক দেন। তারপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঐ বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পূর্ণ স্বাধীনতা অর্জন করে। আজ ভোরেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৭১ এর ২৫ মার্চের রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালিদের ওপর অতর্কিতে গণহত্যা, ‘অপারেশন সার্চলাইট’ শুরু করে। পরে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। গ্রেফতারের আগে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ রাতের দিকেই ঢাকা থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ১৯৭০-র সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে নির্বাচনে জয়ী হলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে তারা বাংলাদেশের বুকে গণহত্যা শুরু করে। তাদের এ অভিযানের মূল লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগসহ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল সব রাজনৈতিক নেতাকর্মী এবং সব সচেতন নাগরিককে নির্বিচারে মেরে ফেলা। ওই ঘোষণা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রচারিত হয়।
শেখ মুজিব তাঁর ধানমন্ডির বাসভবন থেকে গ্রেফতারের আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পাশাপাশি যেকোনও মূল্যে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। মুহূর্তের মধ্যেই বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণা ওয়্যারলেসের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বাস্তবতা ও নিরাপত্তা জনিত কারণে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার এই ঘোষণা নথি সংরক্ষণ করা সম্ভব ছিল না। পরবর্তী সময়ে সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৎকালীন ইপিআর-র ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। পরে চট্টগ্রামের স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ ও ২৭ মার্চ শেখ মুজিবরের হয়ে জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মূল্যবান দলিলটি সেখানে লিপিবদ্ধ হয়েছে এভাবে, ‘ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। শেখ মুজিবুর রহমান। ২৬ মার্চ, ১৯৭১।’ ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত বাংলাদেশ ডকুমেন্টস-এ ওই ঘোষণার পূর্ণ বিবরণ প্রকাশিত হয়। ঘোষণায় বলা হয়, ‘এই-ই হয়তো আপনাদের জন্য আমার শেষ বাণী হতে পারে। আজকে থেকে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন দেশ। আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, যে যেখানেই থাকুন, যে অবস্থাতেই থাকুন এবং হাতে যার যা আছে তাই নিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলুন। ততদিন পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান-যতদিন না দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর শেষ সৈনিকটি বাংলাদেশের মাটি থেকে বহিষ্কৃত হচ্ছে এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হচ্ছে।’ তারপর দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধর পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে এক ভূখণ্ডের। যার নাম বাংলাদেশ।
আজ ৫৩ তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এদিন ঢাকাসহ সারাদেশে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিনের সূচনা হয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এ উপলক্ষে সব সরকারি,আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পতাকা এবং ঢাকা শহরে সহজে দৃশ্যমান ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। ভোর ৫টা ৫৭ মিনিটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। দেওয়া হয় গার্ড অব অনারও। সেখানে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তাঁরা। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে করুণ সুর। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দলের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা। সঙ্গে ছিলেন দলের শীর্ষ নেতারা। বাংলাদেশে অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিকরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।