অল্পবয়সী মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব, তারপর নেশা করিয়ে যৌন নির্যাতন! ফাঁস কলঙ্কজনক অধ্যায়
Assault: ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের চিফ ছিলেন আজকের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি সেই সময়ে গ্রুমিং গ্যাংয়ের একাধিক সদস্যকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দেন। ফলে এই মুহূর্তে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ব্রিটেনের বিরোধী দলগুলো সরব।
লন্ডন: দুনিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জনস্বাস্থ্য বিপর্যয়, ব্রিটেনের রক্ত কেলেঙ্কারির কথা অনেকের জানা। এবার সামনে এল বিলেতের মাটিতে প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা যৌন নির্যাতনের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়ের কথা। যার শিকার প্রায় দেড় হাজার স্কুল পড়ুয়া কিশোরী। আসলে সংখ্যাটা ৪০ হাজারেরও বেশি। দেড় হাজার কেস শুধুমাত্র রেজিস্টার্ড হয়েছে বলে অফিসিয়ালি বলা হচ্ছে। আর এই নিয়ে এখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মারের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ব্রিটেন। আসরে নেমে পড়েছেন ইলন মাস্কও।
ঘটনাগুলো সব ঘটেছিল ১৯৯৭ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে। মূলত ব্রিটেনের ওয়েস্ট ইয়র্কশায়ার কাউন্টির হাডারসফিল্ড, রদারহ্যাম এবং ওল্ডহ্যাম শহরে। এখানে কাজ করত গ্রুমিং গ্যাং নামে একটা সংগঠিত অপরাধ চক্র। যে চক্রের ৯০ শতাংশেরও বেশি সদস্য পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত। এই গ্রুমিং গ্যাংয়ের মেম্বাররা সকলেই ছিল কথাবার্তায় পটু। তারা বিভিন্ন স্কুলের সামনে দামী গাড়ি ও উপহার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী মেয়েদের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতো। তারপর, তাদের ভুলিয়ে নিয়ে গিয়ে মদ ও মাদকের নেশা ধরানো হত। চলত যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ। এবং তারপর এই মেয়েদের অনেককে পাচার করে দেওয়া হত।
২০১৪ সালে টমি রবিনসন নামে এক সাংবাদিকের রিপোর্ট থেকে বিষয়টা প্রথম বড় আকারে সামনে আসে। শুরু হয় তদন্ত। রবিনসন একজন ফার-রাইট অ্যাক্টিভিস্টও। এই সংক্রান্ত কিছু ঘটনায় আপাতত তিনি জেলে আছেন। ২০২১ সাল পর্যন্ত তদন্ত এবং মামলা চলে। এসব ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৪১ জনের শাস্তি হয়েছে।
সম্প্রতি এই গ্রুমিং গ্যাং নিয়ে নতুন কিছু রিপোর্ট সামনে আসে। সেখানে দেখা যায়, বেশকিছু মেয়ের মা-বাবা বলছেন, পুলিশ সেইসময়ে তাদের অভিযোগ নিতে চায়নি। আর সবচেয়ে বড় কথা হল, অভিযোগ উঠেছে সেইসময় পুলিশি তদন্তকে ভুল পথে চালিত করেছিল ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস।
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস হল ব্রিটেনের একটা সরকারি সংস্থা। যাদের কাজ হল যে কোনও তদন্তে পুলিশকে আইন-কানুন বুঝিয়ে দিয়ে সাহায্য করা। যাতে পুলিশের ভুলে অপরাধী আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে যেতে না পারে। আর ২০০৮ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত এই ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের চিফ ছিলেন আজকের ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেইর স্টার্মার। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি সেই সময়ে গ্রুমিং গ্যাংয়ের একাধিক সদস্যকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দেন। ফলে এই মুহূর্তে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে ব্রিটেনের বিরোধী দলগুলো সরব।
কেইর স্টার্মারকে গদি ছাড়তে বলে ইলন মাস্ক বিতর্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর পোস্টের পরই ব্রিটেনে সরকারের মুণ্ডপাতের ঝড় উঠেছে। কনজারভেটিভ ও ফার রাইটরা বলছেন, ঘটনা যে সময়ের তখন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন দুই লেবার নেতা টনি ব্লেয়ার ও গর্ডন ব্রাউন। আর ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের চিফ ছিলেন কেইর স্টার্মার। ফলে, স্টার্মার ইস্তফা দিন। আর নতুন করে তদন্ত শুরু হোক।
উল্টো দিকে লেবার নেতারা বলছেন আর তদন্তের দরকার নেই। নতুন করে তদন্ত শুরু হলে নির্যাতিতাদের বিচার পেতে আরও দেরি হবে। তাই, যেসব মামলা এখনও চলছে সেগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি করে দোষীদের আগে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। তাছাড়া ঘটনার সময় কিছুদিনের জন্য হলেও কনজারভেটিভ নেতা ডেভিড ক্যামেরনও ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। লেবারদের আরও অভিযোগ, ব্রিটিশ রাজনীতিতে নাক গলিয়ে সরকার ফেলার চেষ্টা করছেন ইলন মাস্ক।
গোটা ঘটনায় শিবসেনা (ইউবিটি) সাংসদ প্রিয়াঙ্কা চতুর্বেদীর নামও চলে এসেছে। তিনি আগে কংগ্রেসে ছিলেন। এখন শিবসেনা থেকে রাজ্যসভা সাংসদ। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলতে গিয়ে কেইর স্টার্মার একটা শব্দবন্ধ উচ্চারণ করেন এশিয়ান গ্রুমিং গ্যাং। এক্স হ্যান্ডলে প্রিয়াঙ্কা লেখেন, একটা অসত্, বিশৃঙ্খল দেশের জন্য গোটা এশিয়ার বদনাম হবে কেন। বলা হোক, পাকিস্তানি গ্রুমিং গ্যাং। প্রিয়াঙ্কাকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর পোস্টের নীচে ইলন মাস্ক লিখেছেন, ট্রু। এনিয়েও আবার নানাভাবে শুরু হয়েছে আলোচনা।