
কিভ: দশ মাসের অধিক সময় ধরে নেই কোনও নিরাপত্তার চাদর। উন্মুক্ত হয়ে পড়ে রয়েছে ইউক্রেনে স্থিতু চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্র। রুশ ড্রোনের হাতছানি ছিঁড়ে দিয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তার চাদরগুলি। সম্প্রতি International Atomic Energy Agency বা আইএইএ এই জায়গায় গিয়ে গোটা বিষয়টা নিয়ে পরীক্ষা করেছে। তাঁরাই জানিয়েছে, চেরনোবিলের রেডিয়েশন শিল্ড একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এখনই মেরামত না করা গেলে যে কোনও দিন বড় বিপদ হাতছানি দিতে পারে।
কিন্তু কীভাবে হল এমনটা? ১৯৮৬ সালে দু’-দু’টি ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে পারমাণবিক শক্তি কেন্দ্রটির পরমাণু চুল্লি। সেই বিস্ফোরণে চুল্লির উপরের প্রায় দু’হাজার টন ওজনের ধাতব ঢাকনা উড়ে যায়। তারপর গোটা এলাকা জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। সেই থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে পারমাণবিক কেন্দ্রটি। তারপর থেকে বয়ে গিয়েছে কত জল। চেরনোবিল পরিণত হয়েছে ধ্বংস স্তূপে। ভেঙেছে সোভিয়েন ইউনিয়ন। শুরু হয়েছে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ। যার জেরে চেরনোবিল নিয়ে নতুন করে দানা বেঁধেছে দুঃস্বপ্ন।
গত বছরের অক্টোবরের কথা। এই চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে ড্রোন হামলা চালায় রুশ সেনা। আত্মঘাতী ড্রোন হামলায় বেশ কয়েক ঘণ্টার জন্য ওই এলাকায় বিদ্যুত্ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে যে রুশ হামলায় কি চেরনোবিল থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ার বিপদ বাড়ল? রাশিয়া ওই দিনই সেই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিল। তবে গোটা বিষয়টি এখানেই থেমে থাকেনি।
দিন কয়েকের মধ্যেই চেরনোবিল হামলাকে কেন্দ্র করে সুর চওড়া করেন একাংশের পরমাণু বিজ্ঞানী। দাবি করেন আন্তর্জাতিক তদন্তের। এরপরই এই নিয়ে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন ও আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে তাঁরা। দাবি একটাই রুশ ড্রোনের হামলা তেজস্ক্রিয় নিরাপত্তার চাদর ছিঁড়ে গিয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। পরিস্থিতির গুরুত্ব বুঝে সরেজমিনে তদন্তে নামে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশন।
এরপরই প্রকাশ্যে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। রুশ হামলায় যে সত্যিই বড় ক্ষতি হয়ে গিয়েছে, তা জানিয়ে দিয়েছে তাঁরা। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই একটি বিবৃতি জারি করেছে আইএইএ। তাতে তারা জানিয়েছে, ‘পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার আগে পারমাণবিক কেন্দ্রের নিরাপত্তা শিল্ডটিকে মেরামত করতে হবে। না হলে বড় বিপদ ঘটে যেতে পারে।’