Gold: পাকিস্তানের এই অঞ্চলে রোজই প্রায় ৫-৭ গ্রাম করে সোনা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ, কারণ জানলে অবাক হবেন
Gold in Pakistan: আগে যেখানে সারাদিন পরিশ্রম করে মাত্র এক গ্রাম সোনা পাওয়া যেত সেখানে এখন আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ গ্রাম পর্যন্ত সোনা তুলতে পারছে অনেকেই। নদীর তীরে বসানো হয়েছে শত শত মেশিন, যা কয়েক ঘণ্টাতেই এত পরিমাণ বালি ছেঁকে ফেলছে যা আগে সারাদিনেও সম্ভব হতো না।

পাকিস্তান অধিকৃত গিলগিট বালতিস্তানের ডায়মার জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে সিন্ধু নদী। আর এই নদীতে নাকি এখন শুধু জল নয়, কার্যত সোনাও পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে এই অঞ্চলে নদীর বালি ছেঁকে সোনা তোলার কাজ যেভাবে বেড়েছে, তাতে বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা, আবার একই সঙ্গে বাড়ছে পরিবেশগত উদ্বেগও।
BBC উর্দুর এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ডায়মার ও চিলাস এলাকার কিছু উপজাতি বহু প্রজন্ম ধরে সিন্ধু নদীর তীরে হাতেই বালি ছেঁকে সোনা তুলত। এটিই ছিল তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা, জীবিকার একমাত্র উৎস। কিন্তু গত দুই থেকে তিন বছরে এই চিত্রেই ব্যাপক বদল এসেছে।
প্রতিদিন পাওয়া যাচ্ছে ৫ থেকে ৭ গ্রাম পর্যন্ত সোনা
আগে যেখানে সারাদিন পরিশ্রম করে মাত্র এক গ্রাম সোনা পাওয়া যেত সেখানে এখন আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে প্রতিদিন ৫ থেকে ৭ গ্রাম পর্যন্ত সোনা তুলতে পারছে অনেকেই। নদীর তীরে বসানো হয়েছে শত শত মেশিন, যা কয়েক ঘণ্টাতেই এত পরিমাণ বালি ছেঁকে ফেলছে যা আগে সারাদিনেও সম্ভব হতো না।
BBC উর্দুর প্রতিবেদন বলছে, এই যন্ত্র বসানোর মূল নিয়ন্ত্রণ রয়েছে নদীর তীরবর্তী জমির মালিকদের বা বাইরে থেকে আসা বিনিয়োগকারীদের হাতে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের বড় অংশ নিজেদের জমি ভাড়া দিয়ে বা লাভের ভাগ নিয়ে কোনওরকমে কাজ চালাচ্ছেন। তবে যেসব উপজাতির কাছে নদীর ধারে জমি নেই কিংবা যন্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই, তারা পিছিয়ে পড়ছেন। একসময় যারা নিজেরাই সোনা তুলতেন, এখন তারা দিনমজুর হিসেবে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
কেন পাওয়া যায় সোনা?
বিশেষজ্ঞরা বলেন সিন্ধু নদীতে, বিশেষ করে গিলগিট-বাল্টিস্তানের ডায়ামার এলাকার কাছে সোনা পাওয়ার পেছনে একটি প্রাকৃতিক কারণ রয়েছে। সিন্ধু নদীর উৎপত্তি হয়েছে হিমালয় অঞ্চলে, অর্থাৎ ভারত ও তিব্বতের পাহাড়ি এলাকায়। এই পাহাড়গুলোর ভেতরে সোনাযুক্ত শিলা ও খনিজ রয়েছে। নদীর প্রবল স্রোতে সেই পাহাড়ি শিলাগুলিতে ধীরে ধীরে ক্ষয় ধরে। ক্ষয়ের ফলে শিলা থেকে খুব ছোট ছোট সোনার কণা আলাদা হয়ে নদীর জলে ভেসে যায়। এই সোনার কণাগুলিকে বলা হয় প্লেসার গোল্ড। নদীর স্রোতের সঙ্গে এগুলো বহু দূর পর্যন্ত ভেসে আসে এবং যেখানে নদীর গতি ধীর হয়ে যায়, যেমন বাঁক, অগভীর এলাকা বা নদীর তলদেশে জমে যায়। শীতকালে নদীর জলস্তর কমে গেলে নদীর তলদেশ অনেকটাই উন্মুক্ত হয়। তখন এই জমে থাকা সোনার কণাগুলো বালি ও পলির সঙ্গে দেখা যায়। সেই সময় স্থানীয় মানুষ বালি ছেঁকে বা আধুনিক যন্ত্রের সাহায্যে নদীর তলদেশ থেকে সোনা সংগ্রহ করতে পারে।
যদিও এখন যান্ত্রিক উপায়ে সোনা তোলার ফলে পরিবেশের উপর ভয়াবহ প্রভাবের আশঙ্কাও করা হচ্ছে। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা এই যান্ত্রিক সোনা উত্তোলন নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ড়িজ়েল জেনারেটর ও ভারী যন্ত্রপাতি থেকে নির্গত ধোঁয়া আশপাশের হিমবাহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। একইসঙ্গে নদীর জল দূষিত হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মাছ ও জলজ প্রাণী। দীর্ঘমেয়াদে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ ও পরিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে।
সমস্যা কোথায়?
এর জন্য ওয়াকিবহাল মহলের বড় অংশই আইনের অস্পষ্টতা, নজরদারির ঘাটতিকেই দুষছেন। বর্তমানে গিলগিট বালতিস্তান নদী থেকে সোনা উত্তোলনের জন্য আলাদা কোনও স্পষ্ট আইন নেই। বিষয়টি সাধারণ খনন আইনের আওতায় পড়ে। যদিও প্রশাসনের দাবি, অবৈধভাবে বসানো যন্ত্রগুলিকে আইনি কাঠামোর মধ্যে আনার প্রক্রিয়া চলছে। তবে বাস্তব চিত্র বলছে, নজরদারি এখনও যথেষ্ট দুর্বল। নিয়ন্ত্রণের অভাবে যত্রতত্র বসানো হচ্ছে যন্ত্র। মানা হচ্ছে না পরিবেশ আইন। অন্যদিকে উপজাতিদের দাবি ঐতিহ্য বাঁচুক, প্রকৃতিও রক্ষা পাক। স্থানীয় উপজাতিরা সরকারের কাছে দরবারও করেছেন এ নিয়ে। সাফ কথা, তাদের যেন পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাঁদের বক্তব্য, এতে একদিকে যেমন শতাব্দীপ্রাচীন সোনা তোলার ঐতিহ্য রক্ষা পাবে, তেমনি অন্যদিকে প্রকৃতির উপর অতিরিক্ত চাপও পড়বে না।
