
টোকিও: তাইওয়ান ঘিরে যন্ত্রণা দুই দেশের মধ্যে। ফিরে আসবে না তো ৮ দশক আগের স্মৃতি? আপাতত চিন ও জাপানের পরিস্থিতি দেখে এমনই প্রশ্ন করছে আন্তর্জাতিক মহল। কিন্তু হঠাৎ কী নিয়ে বিবাদ? মাঝে তাইওয়ান এল কেমন করে?
সম্প্রতি চিনের দূত ডেকে কড়া কথা শুনিয়েছে জাপান। চিনও সুর চড়াই রাখছে। চিনা বিদেশমন্ত্রকের বক্তব্য, বিষয়টা হাতের বাইরে গেলে সেই দায়িত্ব জাপানের। জাপানি আগ্রাসন দেখালে বা চিনের নিজস্ব ব্যাপারে ঢোকার চেষ্টা করলে চরম শিক্ষা দেওয়া হবে। এই বিবাদের সূত্রপাত একটা সামরিক মহড়া ঘিরে। সম্প্রতি জাপানি সেনার একটি মহড়ার সময় হঠাত্ করেই বিমানের ফায়ার এলার্ম সিস্টেম লক হয়ে গিয়েছিল। জাপানের অভিযোগ, মহড়ার সময় তাদের দু’টি যুদ্ধবিমানের ফায়ার কন্ট্রোল রেডার লক করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি অর্থাৎ চিন। যা ঘিরে তুঙ্গে বিবাদ।
একাংশ বলছেন, মহড়া নিয়ে বিবাদটা আসলেই প্রাথমিক, লোক দেখানোর জন্য। এর গভীরে রয়েছে তাইওয়ান তত্ত্ব। এই তাইওয়ান নিয়ে বরাবরই আগ্রাসী মনোভাব রয়েছে চিনের। সংশ্লিষ্ট দ্বীপরাষ্ট্রকে শিয়ের সরকার বরাবর নিজেদের এলাকা বলেই দাবি করে এসেছে। যা মানতে নারাজ তাইওয়ান। এবার তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছে জাপান।
জাপানের দাবি, প্রজাতান্ত্রিক চিনের বাইরে থাকা তাইওয়ানের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সব দেশের কর্তব্য। আর কর্তব্যের থেকেও বড় কথা, এটা দেশগুলির সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন। জাপানের নতুন সরকার এই ব্যাপারে বেশ রণংদেহি মনোভাব দেখিয়ে যাচ্ছে। এখানেই চিনের আশঙ্কা। জাপান যদি খোলাখুলি তাইওয়ানের পাশে দাঁড়িয়ে যায়, তা হলে তো মহা-বিপদ। তাইওয়ান দখল মোটেও ততটাই সহজ হবে না। কেননা জাপান জড়িয়ে পড়লে আমেরিকাও আসবে। একেবারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় সংঘাতের সম্ভাবনা তৈরি হবে। আর যত দিন এগোচ্ছে, ততই যেন এই সংঘাতের সম্ভবনা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইতিমধ্যেই জাপানকে কেন্দ্র করে সামরিক চাপ বাড়ানো শুরু করেছে পিপলস লিবারেশন আর্মি। জাপানের একাধিক পণ্য চিনে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। পাল্টা চিনা পণ্যেও বিধিনিষেধ জারি করেছে জাপান। এক ধাপ এগিয়ে পুরোদমে সামরিক মহড়া শুরুরও নির্দেশ দেন জাপানের মহিলা প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি। ১৯৪৫ সালে বিশ্বযুদ্ধের হারের পর জাপানের উপর এখনও একাধিক সামরিক নিষেধাজ্ঞা চেপে আছে। জাপানে একাধিক মার্কিন সেনা, নৌ এবং বায়ুসেনা ঘাঁটি। সুতরাং ওই দেশে আমেরিকার চোখে ধুলো দিয়ে কিছু করা সম্ভবও নয়। আমেরিকার অনুমতি ছাড়া জাপানি প্রশাসন বা সেনা বড় কোনও সিদ্ধান্তও নিতে পারেনা। এবার জাপান যা করছে, আমেরিকার সম্মতি নিয়ে করছে বলেই মনে করছেন একাংশ।