Bangladesh Politics: বাবা থেকে মেয়ে, আন্দোলনই বারবার পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশকে
Sheikh Hasina: বাংলাদেশ তো সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আন্দোলন দেখে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বিভিন্ন সময়ে একাধিক গণআন্দোলন হয়েছে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে। সেই সব আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলেও দিয়েছে। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করতে হচ্ছে, এ পরিস্থিতির সাক্ষী আগে থাকেনি বাংলাদেশ। আসুন এক নজরে দেখে নিই কীভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তন হয়েছে বারবার। কীভাবে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে।
বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ও নাগরিকদের একাংশের আন্দোলনের জেরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হয়ে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। জানুয়ারি মাসে তথা কথিত সাধারণ নির্বাচনে জিতে টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রীর পদে বসেছিলেন হাসিনা। এই নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল প্রচুর। সেই নির্বাচনের মাস ছয় কাটতে না কাটতেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। কোটা সংস্কার আন্দোলন ক্রমেই কার্যত হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়। আন্দোলনকারীরা হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে সরব হয়েছিলেন। কার্ফু জারি করেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি হাসিনা। অবশেষে ৫ অগস্ট দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিশেষ হেলিকপ্টারে ত্রিপুরার আগরতলায় আসেন শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা। সেখান থেকে সেনার বিমানেই ভারতের উত্তর প্রদেশে অবতরণ করেছেন মুজিব-কন্যা। এ পর্যায়ের আন্দোলনকে অভূতপূর্ব বলা হচ্ছে। কিন্তু, বাংলাদেশ তো সৃষ্টির আদিকাল থেকেই আন্দোলন দেখে আসছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর বিভিন্ন সময়ে একাধিক গণআন্দোলন হয়েছে সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে। সেই সব আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনীতির প্রেক্ষাপট বদলেও দিয়েছে। কিন্তু দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে ইস্তফা দিয়ে দেশত্যাগ করতে হচ্ছে, এ পরিস্থিতির সাক্ষী আগে থাকেনি বাংলাদেশ। আসুন এক নজরে দেখে নিই কীভাবে বাংলাদেশে রাজনৈতিক পটভূমির পরিবর্তন হয়েছে বারবার। কীভাবে ক্ষমতার হাতবদল হয়েছে ভারতের এই প্রতিবেশী দেশে।
বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে গত পঞ্চাশ বছরে যাঁরা সরকার প্রধান ছিলেন তাদের মধ্যে কেউ রাষ্ট্রপতি, কেউ প্রধানমন্ত্রী, কেউ প্রধান উপদেষ্টা আবার কেউ সামরিক শাসন জারি করে প্রশাসক হিসেবে দেশ শাসন করেছেন। স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁকে পাকিস্তানের জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এর পর লন্ডন ও দিল্লি ঘুরে তিনি ঢাকায় পৌঁছন। ১২ জানুয়ারি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বেই বাংলাদেশে গঠিত হয় প্রথম মন্ত্রিসভা।
শেখ মুজিবর রহমান
স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের পর প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৩ সালে। ৩০০ আসনের মধ্যে ২৯৩টি আসনে জয়ী হয় আওয়ামি লিগ। এরপরই স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবথেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল বাকশাল গঠন। স্বাধীনতার চার বছরের মধ্যে সংবিধান সংশোধন করে একদলীয় ব্যবস্থা চালু করা হয়। বাংলাদেশ ‘কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লিগ’ নামে একটি রাজনৈতিক ব্যানারে এই একদলীয় সরকার পরিচালন পদ্ধতি চালু করা হয়। দেশের বাকি সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। মুজিবর রহমানের এই পদক্ষেপ নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনাও হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু বাকশাল গঠনের পর ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের উন্নতির জন্য একাধিক পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি। সে জন্যই তাঁকে বঙ্গবন্ধু হিসাবে অভিহিত করা হয়। কিন্তু ১৯৭৫ সালেই খুন হতে হয় বঙ্গবন্ধুকে। সেনাবাহিনীর কিছু অফিসার ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের ১৬ জন সদস্যকে হত্যা করে।
জিয়াউর রহমান
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর অস্থির অবস্থা তৈরি হয়েছিল বাংলাদেশে। মুজিব হত্যার পর সামরিক অভ্যুত্থান হয় সে দেশে। সামরিক অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্যেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে নিজের জায়গা তৈরি করে নেন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান। ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বরের পর তিনি রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। চিফ অব আর্মি স্টাফ পদ ফিরে পান তিনি। ১৯৭৭ সালের এপ্রিল মাসে সায়েমকে সরিয়ে রাষ্ট্রপতির পদে বসেন তিনি। এর এক বছর পর ফের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আয়োজন করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে ফের রাষ্ট্রপতির পদেও বসেন। বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করতেও উদ্যোগী হন জেনারেল জিয়া। এই সময় নিজের রাজনৈতিক দল বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন তিনি। যদিও জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকার সময় সেনা ও বিমানবাহিনীতে একাধিক অভ্যুত্থান ঘটে। সে সব অভ্যুত্থান কড়া হাতে দমন করেছিলেন তিনি। ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে আততায়ীদের হাতে খুন হয়েছিলেন তিনি।
জিয়াউরের মৃত্যুর পর প্রথমে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি এবং পরে স্থায়ী রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পান বিচারপতি আব্দুস সাত্তার। সেনাপ্রধান হুসেন মহম্মদ এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে সরে যেতে হয় তাঁকে। এর পর বিচারপতি আবুল ফজল মোহাম্মদ আহ্সান উদ্দীন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি হন। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়েছিল তাঁকে।
হুসেন মহম্মদ এরশাদ
হুসেন মহম্মদ এরশাদ ১৯৮২ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের ক্ষমতা দখল করেন। নিজেকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসাবে ঘোষণা করেন। এরশাদের ক্ষমতা দখলে দ্বিতীয়বারের মতো সামরিক শাসন জারি হয় বাংলাদেশে। ১৯৮৬ সালে নির্বাচনের আয়োজন করে এরাশাদ রাষ্ট্রপতি হয়েছিলেন। তাঁর আমলেই বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রধর্ম হিসাবে ইসলামকে যুক্ত করা হয়। এরশাদই ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবথেকে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা সামরিক শাসক। কিন্তু যত দিন যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলি এরশাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে আন্দোলনের ঝাঁঝ ততই তীব্র করে। গণআন্দোলনের চাপে পড়ে ১৯৯০ সালে ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন এরশাদ।
১৯৯১ সালের নির্বাচন
১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসে নিঃসন্দেহে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এটি ছিল বাংলাদেশের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন। অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে একাধিক কারচুপি এবং অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু এই নির্বাচনকে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ‘অবাধ ও স্বচ্ছ নির্বাচন’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। এই নির্বাচনে আওয়ামী লিগকে হারিয়ে জয় লাভ করে বিএনপি। খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
খালেদা জিয়া
বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার আমলে বাংলাদেশের সংবিধানে একাধিক সংশোধনী আনা হয়েছিল। এই সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রধান হন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রপতিকে করা হয় রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান। জাতীয় সংসদদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টিও বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অনেকটা ভারতের ঢঙে রচিত হয় বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থা। ১৯৯১ সালের পর ১৯৯৬ সালে সাধারণ নির্বাচনেও জিতেছিলেন খালেদা জিয়ার বিএনপি। কিন্তু এই নির্বাচন আয়োজনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে সরব হয় আওয়ামি লিগ-সহ একাধিক রাজনৈতিক দল। নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে সরে দাঁড়ায় অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। এর জেরে একতরফা ভোট হয়েছিল। সরকার বিরোধী আন্দোলন সে সময়ও চরমে পৌঁছেছিল বাংলাদেশে। যার জেরে দ্বিতীয় বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কিছুদিন পরই পদত্যাগ করতে হয়েছিল খালেদা জিয়াকে।
শেখ হাসিনা
খালেদা জিয়া সরকারের পতনের পর বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়।ষ সেই সরকার ১৯৯৬ সালের জুন মাসে সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করেন। সেই নির্বাচনে জয় লাভ করে আওয়ামী লিগ। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম সরকার গড়েছিল আওয়ামি লিগ। তার পর প্রায় ২১ বছর পর ফের ক্ষমতায় আসে বঙ্গবন্ধুর দল। প্রধানমন্ত্রী হন মুজিবুর রহমানের মেয়ে শেখ হাসিনা। সে বারই প্রথমবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন হাসিনা।
খালেদা জিয়া
হাসিনার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিচারপতি লতিফুর রহমানের অধীনে ২০০১ সালে সাধারণ নির্বাচন হয় বাংলাদেশে। সেই নির্বাচনে প্রায় দুই তৃতীয়াংশ আসনে জেতে বিএনপি। বিপুল জয়ের পর ফের প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। তাঁর এই আমলের শেষের দিকে তীব্র আন্দোলন শুরু হয় বাংলাদেশে। রাজনৈতিকভাবে আরও একবার অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। যদিও চাপের মুখে পড়েও নিজের মেয়াদ শেষ করতে পেরেছিলেন খালেদা। তার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
ফখরুদ্দিন আহমেদ
খালেদা জিয়ার মেয়াদকাল যখন শেষ হচ্ছে তখন বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের সহিংস হয়ে ওঠে। তখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের প্রাক্তন কর্তা ফখরুদ্দিন আহমেদ সেনাবাহিনীর সমর্থনে সরকার পরিচালনা করেন। যদিও প্রধান উপদেষ্টা হিসাবেই সরকারের প্রধান ছিলেন তিনি। তাঁর আমলেই ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচন হয় বাংলাদেশে। সেই নির্বাচনে জেতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ।
শেখ হাসিনা
২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সাধারণ নির্বাচনে জেতার পর ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে ফের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই বাংলাদেশের শাসনভার ছিল হাসিনার দখলে। ২০০৯ সাল থেকে টানা চার বার প্রধানমন্ত্রীর পদে শপথ নেন হাসিনা। এই সময়কালে বাংলাদেশে যেমন একাধিক উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ করা হয়েছে, তেমনই বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধের অভিযোগও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যায় লিপ্তদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসেই সেই কাজ শুরু করে তিনি। এই বিচারের বিরুদ্ধে সরব হয় জামায়াতে ইসলামি। এই দলের প্রচুর নেতা দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন। তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদও করেন। কিন্তু হাসিনা সরকার কড়া হাতে তার মোকাবিলা করেছিল।
২০১১ সালে সংবিধানে সংশোধনী আনেন শেখ হাসিনার সরকার। নির্দলীয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহলে আপত্তি উঠেছিল। সেই আপত্তি অগ্রাহ্য করেই হাসিনা সরকার এই নিয়মের পরিবর্তন করে। বিএনপি এবং অন্যান্য দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফেরানোর দাবিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু তা করেও বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি তাঁরা। তখন বিএনপি-র নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচন বয়কট করেন। একতরফা সেই নির্বাচনে জেতে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে ফের আসীন হন হাসিনা। এই নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। যদিও তাতে আমল না নিয়েই ক্ষমতার রাশ আরও কড়া হাতে ধরেন হাসিনা।
২০১৮ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলি সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু সেই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলেন বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। এই নির্বাচনেও জয়ী হন হাসিনা। এই সময়কালে বাংলাদেশে বিভিন্ন ইস্যুতে একাধিক আন্দোলন হয়েছে। যদিও তাতে হাসিনার গদি টলমল হওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি। যদিও আন্দোলনকে দমন করতে হাসিনার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রশক্তির ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বার বার।
এ পরিস্থিতিতেই ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ফের সাধারণ নির্বাচন হয় বাংলাদেশে। বিরোধীদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মানেননি হাসিনা। এক তরফা নির্বাচনে জিতে ফের ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করেন তিনি, এমনটাই আভিযোগ। চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর পদে বসলেও বাংলাদেশের মধ্যে হাসিনা বিরোধী মনোভাব ক্রমশ চরমে ওঠে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে তা প্রথম প্রকাশ্যে আসে। শেখ হাসিনার ‘রাজাকার’ মন্তব্যের পর আন্দোলনে ঝাঁজ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অবশ্য সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কোটায় আসে পরিবর্তন। কিন্তু এর পরও আন্দোলনে ভাটা পড়েনি। ছাত্রদের শুরু করা আন্দোলনে হাসিনা বিরোধী সাধারণ বাংলাদেশবাসীদের একাংশ জড়িয়ে পড়েন। দিনে দিনে হাসিনা বিরোধিতার সুর আরও চড়া হতে থাকে। পরিস্থিতির মোকাবিলায় সেনা নামানো হয়। জারি হয় কার্ফু। পুলিশকে গুলি চালানোর নির্দেশও দেওয়া হয়। জামাতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই আন্দোলন এবং আন্দোলন দমনে শতাধিক প্রাণ জলাঞ্জলি যায়। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। উল্টে হাসিনার পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হয়েছে। ক্রমশ বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজপথের দখল নিয়েছে আন্দোলনকারীরা। সে রকমই পরিস্থিতি ৫ অগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন শেখ হাসিনা। তার পর তিনি দেশ ছাড়েন। বাংলাদেশ থেকে হেলিকপ্টারে আসেন আগরতলায়। সেখান থেকে সেনার বিমানে যান উত্তরপ্রদেশ।
সাধারণ মানুষের আন্দোলনের সামনে শাসকের প্রতাপ যে তুচ্ছ হয়ে যায়, তার সাক্ষী অতীতে একাধিকবার থেকেছে দুনিয়া। হাসিনাকে যে ভাবে বিদায় নিতে হল, তাতেও ফের ফিরে এল ইতিহাসের সেই শিক্ষাই যার সঙ্গে অতি পরিচিত বাংলাদেশ।