বিচিত্র সেলুকাস! এই দেশে কেউ ঘুষ নেন না! বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ধনীদের!

এ দেশের মানুষ ঘুষ খান না শুনলে খোদ আলেকজ়ান্ডারও হয়ত বলে উঠতেন, সেলুকাস, কী বিচিত্র দেশ!

বিচিত্র সেলুকাস! এই দেশে কেউ ঘুষ নেন না! বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ধনীদের!
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 20, 2021 | 4:42 PM

ফিনল্যান্ড: এই দেশে নচিকেতা জন্মালে হয়ত লিখতেন না, প্রকাশ্যে চুমু খাওয়া এই দেশে অপরাধ, ঘুষ খাওয়া কখনওই নয়। ঘুষ খাওয়া অপরাধ তো দূর, ঘুষ খাওয়া বা নেওয়ার প্রবৃত্তিই নেই এই দেশের। ভারতের বুকে দাঁড়িয়ে আপনার মনে হতেই পারে, এই দেশ কি মঙ্গলে অবস্থিত? আজ্ঞে না। এই ধরাধামেই। বাল্টিক সাগরের তীরে প্রায় ৩ লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের ছোট্ট দেশ। ফিনল্যান্ড (Finland)। এ দেশের মানুষ ঘুষ খান না শুনলে খোদ আলেকজ়ান্ডারও হয়ত বলে উঠতেন, সেলুকাস, কী বিচিত্র দেশ!

যাঁরা ঘুষে বিশ্বাস করেন না, তাঁরা যে সুখী হবেন এ তো বলাবাহুল্য। তাই, পরপর দু’বছর বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তকমা জিতে নেয় ফিনল্যান্ড। পরিসংখ্যান সংস্থা গ্যালিপের সমীক্ষায় শীর্ষে এই ইউরোপীয় দেশ। ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ পরপর তিন বছর এই দেশকে বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশের তকমা দিয়েছে রাষ্ট্রসঙ্ঘ। কিন্তু কেন?

কলোম্বিয়ার এক অধ্যাপক ও ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টের’ কো এডিটর ডেফ্রিসেক্সের মতে ফিনল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে সুখী দেশ। কারণ জীবন ও কাজের মধ্য়ে সমতা বজায় রেখে চলেন সে দেশের নাগরিক। তাঁদের ধনী হওয়ার কোনও ইচ্ছে নেই। আর যদি কেউ ধনী হয়েই যান, বিড়ম্বনায় পড়তে হয় তাঁকে।

২০১২ সাল থেকে শুরু হয় ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট।’ এই সমীক্ষায় মূলত ১৫৬ টি দেশের মধ্যে ৬ টি বিষয় নিয়ে তুলনা করা হয়। সেগুলি হল জিডিপি, সামাজিক সহযোগিতা, চাহিদা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, উদারতা, অপরাধ। জিডিপি বেশি হলেই যে সে দেশের প্রত্যেকে খুশি হবেন, এমন কোনও মানে নেই। বরং সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে তুলনামূলক কম জিডিপির দেশে জনগণ বেশি খুশি।

অর্থম অনর্থম: ২০১৯ সালের হিসাবে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জিডিপি আমেরিকার। কিন্তু ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে’ ২০১৯ সালে ১৮ থেকে ১৯ নম্বর স্থানে নেমে যায় আমেরিকা। ফিনল্যান্ডে ৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন এনজিওর সঙ্গে যুক্ত। সহজ করে জীবন পালনেই তাঁরা উৎসাহী। ফিনল্যান্ডের নাগরিকরা মনে করেন একখণ্ড জমি ও একটি বাড়ি থাকলেই তাঁরা খুশি।

উচ্চ শিক্ষা: ফিনল্যান্ডে শিক্ষা সকলের জন্মগত অধিকার। ৭-১৬ বছর বয়সীদের জন্য এই দেশে শিক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ বছর ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৩ বছর লেখাপড়া করা সকলের জন্য বাধ্যতামূলক।

পরিবেশ: ফিনল্যান্ড সবুজে ঘেরা একটি দেশ। যার প্রতি বর্গ কিলোমিটারে মাত্র ১৬ জন বসবাস করেন। চারিদিকে হ্রদ আর অরণ্য। তাই ফিনল্যান্ডকে ‘সবুজ সোনা’ বলা হয়। ফিনল্যান্ডের জনগণ এই সবুজের মধ্যে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

অপরাধ: ফিনল্যান্ডে অপরাধ, ষড়যন্ত্র, খুনোখুনি অন্যান্য দেশের থেকে অনেক কম। ২০১৬ সালে ১ লক্ষ মানুষের মধ্যে খুনের হার ছিল মাত্র ১.১৪। ২০১৮ সালের হিসাবে সারা বছরে ধর্ষণ হয়েছিল মোট ১৩৯৩ টি। যার মধ্যে ২৭ শতাংশের জন্য দায়ী বিদেশিরা। ২০১৭ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী যেখানে প্রতি ১০ হাজারে আফগানিস্তানে যৌনতা সংক্রান্ত অপরাধ ১৩৮.১২, সেখানে ফিনল্যান্ডে ৩.৩৩। ফিনল্যান্ডে ঘুষ নেওয়ার হার ০ শতাংশ। জালিয়াতি বা পুলিশি অত্যাচার সে দেশে হয় না বললেই চলে।

আইন ব্যবস্থার উপর আস্থা ও সরকারি সুবিধা: ফিনল্যান্ডের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণ আস্থা রাখেন দেশের আইন ব্যবস্থায়। বিভিন্ন সরকারি সুবিধায় তাঁরা অত্যন্ত খুশি। বিনামূল্যে শিক্ষা, পিতৃত্বকালীন ছুটি ও কাজের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ সুনিশ্চিত করতে বদ্ধ পরিকর সে দেশের সরকার। একজন কর্মরতা মা ও নারীর জন্য অত্যন্ত নিরাপদ এই দেশ। ফিনল্যান্ডে সাধারণ মানুষকে বেশি কর দিতে হয়। কিন্তু সেই করই তাঁদের পরিষেবায় খরচ হয়। প্রত্যেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। এমনকি সেখানে বেড়াতে যাওয়া ব্যক্তিদেরও বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হয়। সে দেশে বাসস্থান নেই এমন মানুষের সংখ্যা খুব কম।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা: সে দেশে নিয়ন্ত্রণ নেই বললেই চলে।  বাক স্বাধীনতা সকলের জন্য। ২০১৭ সালে সে দেশে ১০০ বছরের স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হল।

‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্টে’ ভারত ১৩৯-তম স্থানে। পাকিস্তান ১০৫ নম্বরে। প্রথম দিকে সবকটিই নর্ডিক দেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,মার্কিন সমাজ যখন সোশ্যাল মিডিয়া, ভিডিয়ো গেম, অস্বাস্থ্যকর খাবার নিয়ে মত্ত তখন ফিনল্যান্ড জীবন ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে খুশির শীর্ষে।

আরও পড়ুন: ভারতের থেকে সুখী পাকিস্তান, আরও সুখী বাংলাদেশ