২০২১-র এপ্রিলের মধ্যেই অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে পারে ভারত, জানালেন সিরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজগুলি স্বাস্থ্যকর্মী, করোনা যোদ্ধা ও বয়স্ক ব্যক্তিরাই পাবেন, শিশুদের সুরক্ষার তথ্য না পাওয়া অবধি তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান সংস্থার প্রধান।

২০২১-র এপ্রিলের মধ্যেই অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন পেতে পারে ভারত, জানালেন সিরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 2:46 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: ২০২১ সালের এপ্রিল মাসের মধ্যেই অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন (Vaccine) পাবে ভারত, জানালেন সিরাম ইন্সটিটিউট অব ইন্ডিয়া(Serum Institute of India)-র প্রধান আদার পুনাওয়ালা(Adar Poonawalla)। তিনি জানান, ট্রায়ালের চূড়ান্ত ফলাফল ও ছাড়পত্রের উপর নির্ভর করে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই স্বাস্থ্যকর্মী ও বয়স্ক মানুষদের জন্য এবং এপ্রিল মাসের মধ্যে সকল জনসাধারণের জন্য এই ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। দুটি ডোজের এই ভ্য়াকসিনের দাম হবে এক হাজার টাকার মধ্যে।

গতকাল হিন্দুস্তান টাইমস লিডারশিপ সামিট ২০২০ (Hindustan Times Leadership Summit2020)-র অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ভারতের অন্যতম ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থার সিইও (CEO)। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন,”সকল ভারতবাসীকে ভ্যাকসিন দিতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যাবে। কেবলমাত্র উৎপাদন বা সরবরাহ নয়, পাশাপাশি তথ্যপ্রমাণ, পরিকাঠামোরও প্রয়োজন। এছাড়া সাধারণ মানুষকেও ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রাজি করাতে হবে। এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখেই বলা যায়, মোট জনসংখ্যার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ জনসংখ্য়া ভ্যাকসিন পাবে। ২০২৪ সালের মধ্যে সকলেই ভ্যাকসিন পেয়ে যাবে।”

দামের বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি জানান, প্রতিটি ডোজের দাম পাঁচ থেকে ছয় ডলারের মধ্যে হবে, ভারতে দুটি ডোজের এই ভ্যাকসিনের দাম এক হাজার টাকার মধ্যেই হবে। পুনাওয়ালা বলেন,”ভারত সরকার যেহেতু একসঙ্গে বিশাল সংখ্যক পরিমাণে এই ভ্যাকসিন কিনছে, তাই দাম অনেকটাই কম পড়ছে, প্রতি ভ্যকসিনের দাম তিন থেকে চার ডলার নেওয়া হচ্ছে, যেই দামে কোভ্যাক্সাজারে যে ভ্যাকসিনটি পেয়েছে। বর্তমানে বাজারে যেই ভ্যাকসিনগুলি রয়েছে, তার তুলনায় অনেকটাই কম দাম রাখা হয়েছে এই ভ্যাকসিনের।”

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সম্পর্কে তিনি বলেন, “অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন (Oxford-Astrazeneca Vaccine) বর্তমানে বয়স্কদের উপরও কাজ করছে, যা প্রথমদিকে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ভ্য়াকসিন প্রয়োগে টি-সেল ভাল সাড়া দিচ্ছে, যা দীর্ঘকালীন রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। তবে এই মূহুর্তেই নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়, একমাত্র সময়ই বলতে পারবে এই ভ্যাকসিন দীর্ঘসময়ের জন্য সুরক্ষা দিতে সক্ষম কিনা।”

ভ্যাকসিনের সুরক্ষার ক্ষেত্রটিও তুলে ধরে তিনি জানান, আপাতত সুরক্ষা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই। ভ্যাকসিনের অনাক্রমতা ও কার্যকারিতার ফল দেড় মাসের মধ্যেই জানা যাবে। ব্রিটিশ সরকার ও ইউরোপিয়ান মেডিসিনস ইভ্যালুয়েশন এজেন্সি আপৎকালীন ব্যবহারের অনুমতি পেলেই সিরাম ইন্সটিটিউটও ড্রাগ নিয়ামক সংস্থার কাছে আপৎকালীন ব্যবহারের (Emergency Use) অনুমতি চেয়ে আবেদন জানাবে।

ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজগুলি স্বাস্থ্যকর্মী, করোনা যোদ্ধা ও বয়স্ক ব্যক্তিরাই পাবেন, শিশুদের সুরক্ষার তথ্য না পাওয়া অবধি তাদের আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান সংস্থার প্রধান। পুনাওয়ালা বলেন,”আমরা প্রথমেই বয়স্ক মানুষ ও অন্যান্য ব্যক্তি, যাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি, তাদেরই ভ্যাকসিন দিতে চাই। শিশুদের উপর প্রয়োগে সুরক্ষার প্রয়োজনীয় তথ্য পেলে তবেই তাদের উপর প্রয়োগেও সম্মতি দেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন: “১৮ দিন কীসের অপেক্ষা করছিলেন?” করোনার প্রকোপ বাড়ায় সরকারকে তুলোধনা দিল্লি হাইকোর্টের

অক্সফোর্ড ভ্যাকসিনের প্রশংসা করে সিরাম ইন্সটিটিউটের প্রধান জানান, এই ভ্যাকসিন সহজলভ্য, সুরক্ষিত এবং দুই থেকে আট ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করা যায়, যা ভারতের হিমঘরগুলির জন্য আদর্শ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে সিরাম ইন্সটিটিউট প্রতি মাসে ১০ কোটি ভ্যাকসিন উৎপাদনের পরিকল্পনা করছে। তবে কতগুলি ডোজ ভারত পাবে, সেই বিষয়ে এখনও কোনও চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি, আলোচনা চলছে বলেই জানান সংস্থার সিইও। তিনি বলেন,”ভারত জুলাই মাসের মধ্যে ৪০ কোটি ডোজ চাইছে। সবকটিই আমাদের সংস্থা থেকে নেওয়া হবে কিনা, তা জানা নেই। তবে আমরা এই বিপুল সংখ্যক ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং জুলাই-অগস্টের মধ্যে কয়েক কোটি ভ্যাকসিন প্রস্তুত হয়ে যাবে।”

অন্যান্য দেশের সঙ্গে এখনই কোনও চুক্তি না করে ভারতকেই গুরুত্ব দিতে চান তারা বলে জানান পুনাওয়ালা। তিনি বলেন,”আমরা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনও দেশকে ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রুতি বা চুক্তি স্বাক্ষর করিনি। আমরা একাধিক দেশের সঙ্গে চুক্তি করতে চাই না,কারণ তাদের দেওয়ার মতো প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন মজুত থাকবে না। ভারতকেই আমরা অগ্রাধিকার তালিকায় একনম্বরে রাখছি। পাশাপাশি আফ্রিকাতেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করা হবে। এগুলির পর বাকি দেশগুলির দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে।”

আরও পড়ুন:করোনার কোপে ভারতের আর্থিক ক্ষতিই সবচেয়ে বেশি, ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে অনেকটাই

ওই সম্মেলনে অন্য একটি আলোচনাসভায় এআইআইএমএস(AIIMS)-র ডিরেক্টর ডঃ রণদীপ গুলেরিয়া জানান,ভ্য়াকসিন নিয়ে ভারতের সঙ্গে ফাইজার সংস্থার আলোচনা হলেও মডার্নার সঙ্গে বিশেষ কোনও আলোচনা হয়নি।