নয়া দিল্লি: আগামী মাসেই কেন্দ্রীয় বাজেট (Budget 2022)। করোনাকালে দেশের অর্থনীতির হাল ধরতে বাজেট কেমন হবে, তার দিকেই তাকিয়ে রয়েছে গোটা দেশ। তবে এবারের বাজেটের সামনে অন্যতম দুটি চ্যালেঞ্জ হল চাকরি সঙ্কট (Job Crisis) ও ক্রমবর্ধমান দারিদ্রতা বৃদ্ধি (Poverty)। গত বাজেটেও এই দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে আশা করা হলেও, তা হয়নি। তবে এবারের বাজেটে এই দুটি বিষয়দুটি এড়িয়ে যাওয়া আর সম্ভব নয়।
যে কোনও আর্থিক সহায়তা বা বড় বিনিয়োগের ঘোষণা দেশের অর্থনীতির সংস্কার করতে পারবে না, যতক্ষণ অবধি সাধারণ জনগণের জন্য কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা না করা হচ্ছে। দেশের একটি বড় অংশের জনসংখ্যার জীবনই স্বল্প আয়ের উপর অতিবাহিত হয়। যতক্ষণ গ্রাহকের চাহিদা বাড়বে না, ততক্ষণ উন্নয়নের ইঞ্জিনও চালু হবে না। এদিকে, আয় কম হলে, বাজারে চাহিদা বাড়ারও কোনও সম্ভাবনা নেই।
বিগত ১৫ বছর ধরে অর্থাৎ ২০০৫-০৬ অর্থবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১৯ অর্থবর্ষ অবধি দেশের জিডিপি বা আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার গড় ৭ শতাংশে আটকে ছিল। ২০২০ সালে করোনা সংক্রমণের ধাক্কায় তা ৪ শতাংশে নেমে আসে এবং তা পরে আরও কমতে শুরু করে। ২০২২ সালে ৯.২ শতাংশ আর্থিক প্রবৃদ্ধির আশা করা হয়েছে, তবে ঘাড়ের উপর বিপদের নিশ্বাস ফেলছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট। ফলে ফের একটি করোনার সম্ভাব্য ঢেউয়ের ধাক্কা সামলিয়ে অর্থনীতি কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
করোনা সংক্রমণ আসার আগেও দেশের কর্মক্ষেত্রে চরম সঙ্কট ছিল। ২০১৭-১৮ সালের পেরিওডিক লেবার ফোর্স সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, দেশের বেকারত্বের হার বিগত ৪৫ বছরে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছেছিল। এরপর করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তেই আরও বৃদ্ধি পায় বেকারত্বের সমস্যা। দেশজুড়ে লকডাউনের জেরে স্তব্ধ হয়ে যায় কল-কারখানা। কাজ হারান লক্ষাধিক মানুষ। ২০১১-১২ অর্থবর্ষ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবর্ষে প্রায় ৯০ লক্ষেরও বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ২০১৮-১৯ সালে কর্মক্ষেত্রে সামান্য উন্নতি দেখা দিলেও করোনার দুটি ঢেউয়ে সেই উন্নতি সম্পূর্ণ রূপে ধুয়েমুছে গিয়েছে।
দেশের শ্রম মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ৯৪ শতাংশ কর্মীই কোনও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের সঙ্গে জড়িত নয়। ভারতের কর্মী জনসংখ্যার হারের সঙ্গে এই কর্ম সংস্থানের হারেও কোনও মিল নেই। ২০১৯-২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে এই কর্মসংস্থানের হার ৪৬.৭ শতাংশ, সমস্ত বয়সীদের মধ্যে এই হার ৩৫ শতাংশ।
বাকি উন্নত দেশগুলির মতো ভারতে অবসরের কোনও নির্দিষ্ট বা সুস্পষ্ট ধারণা নেই। সেই কারণেই তারা যতদিন শারীরিকভাবে সক্ষম রয়েছেন, তারা কাজ করে যান। কিন্তু বর্তমানে দেশের ৫০ শতাংশ জনগণই, যাদের বয়স কাজ করার, তারা কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে রয়েছেন। মহামারির কারণে কর্মক্ষেত্রের পাশাপাশি ব্যবসাগুলিও চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। অনেকেই কাজ খুইয়ে বিকল্প আয়ের চেষ্টা করলেও, পর্যাপ্ত আর্থিক মূলধন না থাকায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান তৈরি। কারণ বাকি দেশের মতো ভারতে কোনও কাজ থেকে তৈরি বা সংরক্ষণ করা নেই। কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকারি ক্ষেত্রগুলিতেও নিয়োগ প্রক্রিয়া নানা জটে থমকে রয়েছে। বড় সংস্থাগুলিও আপাতত নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রেখেছে।