
আচ্ছা আধার কার্ডে আপনার নামের বানান ভুল এসেছে? বা ঠিকানা? আর বদলাতে অনেক হ্যাপা, সেই কারণেই কি বদলানো হয়ে ওঠেনি এখনও? না না চিন্তার কোনও কারণ নেই। আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষ এমনই করে থাকে। করব করব ভেবে আর করা হয়ে ওঠে না। আসলে এই ধরনের ডকুমেন্টে বদল করতে গেলে, এত ঘুরতে হয়, সে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে যায়। তবে, আর এমন হবে না। UIDAI-এর এই সংক্রান্ত একটি আপডেট দিয়েছে।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মূল ভিত্তি হল আধার কার্ড। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৪২ কোটি আধার কার্ড চালু রয়েছে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা থেকে সিম কার্ড, সরকারি ভর্তুকি বা ভাতা, সবেতেই এখন জরুরি আধার কার্ড। আধার কার্ড নাগরিকদের জন্য এক অভূতপূর্ব একক ডিজিটাল পরিচপত্র। তবে, ওই যে বললাম সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আধার সংক্রান্ত তথ্য আপডেট করা জরুরি। বিশেষত ঠিকানা পরবর্তন হলে তা আপডেট করা ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো হয়ে যাওয়া বায়োমেট্রিক তথ্যও আপডেটের প্রয়োজন হয়।
আধার কর্তৃপক্ষ অর্থাৎ UIDAI তথ্য আপডেটের প্রক্রিয়ায় গতি নিয়ে এসেছে। বর্তমানে অনলাইনে সহজেই ঠিকানা পরিবর্তন করা যায়। ‘My Aadhaar’ পোর্টাল ও mAadhaar অ্যাপের মাধ্যমেই এই আপডেট করা যায়। আবার ঠিকানার পরিবর্তনের জন্য চার্জ নিলেও, পরিচয়ের প্রমাণ বা ঠিকানার প্রমাণপত্র আপডেট করতে কোনও চার্জ লাগে না। আর এই আপডেটের মাধ্যমে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ও ঠিকানা সংক্রান্ত ডেটাবেস যেন সব সময় নির্ভুল থাকে, সেই চেষ্টা করে চলছে UIDAI। বর্তমানে লক্ষ লক্ষ শিশুর জন্য বাল আধারও তৈরি হচ্ছে, যা নিশ্চিত করে আধারের উপর কতটা গুরুত্ব আরোপ করছে দেশের সরকার।
আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বর পরিবর্তন একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয়। ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড বা OTP-র মাধ্যমে যে সব অনলাইন অথেনটিকেশন করা হয়, তার ভিত্তি এই ফোন নম্বরটাই। ফলে, আপনার নিরাপত্তার স্বার্থে, ফোন নম্বর বদলানো শুধুমাত্র আধার পরিষেবা কেন্দ্রে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের মাধ্যমেই করা হয়। UIDAI এই প্রক্রিয়াকে অনলাইনে আনার পরিকল্পনা করেছিল। তবে, এই ক্ষেত্রে তথ্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করা খুবই কঠিন। কারণ, কোনও ভুল বা প্রতারণামূলক পরিবর্তন কোটি কোটি নাগরিকের তথ্যের সুরক্ষার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
নাম বা জন্মতারিখের মতো মৌলিক তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে UIDAI এখন অত্যন্ত কড়া। ছোটখাটো সংশোধনের সুযোগ থাকলেও, নামে বড় কোনও পরিবর্তন বা জন্মতারিখ সংশোধন এক বা দু’বারের বেশি করা যায় না। জন্মতারিখ সংশোধনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি শংসাপত্র প্রয়োজন। এই ভাবে আধারের তথ্যের সংশোধনের অপব্যবহার ঠেকাতে বদ্ধপরিকর কেন্দ্র। এই কড়াকড়ি তথ্যগত ত্রুটি কমিয়ে আধার ডেটার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সাহায্য করেছে।
আধার অথেনটিকেশনকে আরও সুরক্ষিত করতে UIDAI ফেস অথেনটিকেশনের সুবিধা যুক্ত করেছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা আইরিসের পাশাপাশি এখন মুখের ছবি স্ক্যান করেও তথ্য যাচাই করা যায়। নতুন ডিভাইসগুলিতে ‘লাইভনেস’ চেক যুক্ত করা হয়েছে। যাতে প্রতারকরা অন্য কারও স্টিল ছবি ব্যবহার করে প্রতারণা না করতে পারে। আর এই Two-Factor Authentication আধারের সুরক্ষাকে আরও মজবুত করেছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ১০ কোটিরও বেশি আধার অথেনটিকেশন সফলভাবে হচ্ছে। যা থেকে বোঝা যায় আধার পরিকাঠামো কতটা নির্ভরযোগ্য।
০ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের জন্য ‘বাল আধার’ চালু থাকলেও, তাদের বায়োমেট্রিক তথ্য নেওয়া হয় না। কিন্তু শিশুর বয়স যখন ৫ বছর পূর্ণ হয়, তখন প্রথমবার এবং ১৫ বছর পূর্ণ হলে দ্বিতীয়বার ম্যান্ডেটরি বায়োমেট্রিক আপডেট করানো জরুরি।
ভবিষ্যতে, ডিজিটাল পার্সোনাল ডেটা প্রোটেকশন (DPDP) আইন আধার ইকোসিস্টেমে যে তথ্য রয়েছে তার সুরক্ষাকে আরও জোরদার করবে। মৃত ব্যক্তির আধার ডি-অ্যাক্টিভেট করার উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে, যা সিস্টেমের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। আধার ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণের মূল চাবিকাঠি। এমন এক ভারত যেখানে নাগরিক পরিষেবা হবে আরও দ্রুত, নিরাপদ ও ঝামেলামুক্ত।