
২০১৭ সালে ISRO বা ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা একসঙ্গে ১০৪টি স্যাটেলাইট পাঠিয়েছিল মহাকাশে। আর এইভাবে বিশ্ব রেকর্ড করেছিল তারা। কিন্তু তাদের এই সাফল্যের নেপথ্যে ছিল আরও এক সংস্থা। সেই সংস্থার সদর দফতর আবার গুজরাটের আমেদাবাদে। এই সংস্থার ‘হাতযশ’ ছাড়া কোনও রকেট উড়তে পারে না।
সংস্থার নাম ‘সাংভি এরোস্পেস’। আমেদাবাদের সানন্দের গুজরাট ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন বা GIDC-তে রয়েছে এদের কারখানা। চন্দ্রযান হোক বা মঙ্গলযান, প্রতিটি ভারতীয় রকেট বা স্যাটেলাইটের স্নায়ুতন্ত্রের মতো কাজ করে এই সংস্থার তৈরি করা তার।
জানা যায়, ১৯৯২ সালে এই সংস্থা তৈরি হওয়ার আগেই ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাকি যোগাযোগ করে কেতনভাই সাংভির সঙ্গে। পরমাণু পরীক্ষার পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আশঙ্কা ছিল। আর সেই কারণেই দেশীয় প্রযুক্তিতে তার তৈরির চ্যালেঞ্জ নেয় ‘সাংভি এরোস্পেস’। ১৯৯৩ সাল থেকেই ইসরোর সঙ্গে সম্পর্কের শুরু এই তার প্রস্তুতকারক সংস্থার।
আজ সংস্থার টার্নওভার প্রায় ৫০ কোটি টাকা। আর তাদের ব্যবসার ৫০ শতাংশই আসে ISRO-র থেকে। বাকি ৫০ শতাংশ আসে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র থেকে। তেজস, সুখোই যুদ্ধবিমান থেকে শুরু করে সেনা হেলিকপ্টার, সবেতেই ব্যবহৃত হয় এই সংস্থার তৈরি তার।
‘সাংভি এরোস্পেসের’ তৈরি এই তার সাধারণ নয়। মাইনাস ৬৫ থেকে ২৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এই সংস্থার তৈরি করা তার। মানুষের চুলের মতো সরু হলেও ৮০০০ ভোল্ট পর্যন্ত চাপ নিতে সক্ষম। আর এই তারের বিশেষত্ব হল এর রেডিয়েশনরোধী ক্ষমতা এবং আল্ট্রা-হাই ভ্যাকুয়াম সামলানোর গুণ।
সংস্থার বর্তমান ডিরেক্টর ভূষণভাই সঙ্ঘভি জানান, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ নীতির পর ছবিটা বদলেছে। আগে বিদেশি যন্ত্রাংশের উপর নির্ভরতা ছিল। এখন দেশীয় সংস্থাই অগ্রাধিকার পাচ্ছে। এর ফলে দেশের মধ্যেই একটি শক্তিশালী পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, মাত্র আট জনের একটি অত্যন্ত দক্ষ টিম এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। ভারত বছরে ১০-১২টি স্যাটেলাইট পাঠায়। অন্যদিকে, আমেরিকা বা চিনের মতো দেশ সপ্তাহে এক-দুটি স্যাটেলাইট পাঠায়। আর তাদের স্তরে পৌঁছতে অবশ্যই সময় লাগবে ভারতের। কিন্তু সঙ্ঘভি অ্যারোস্পেসের মতো সংস্থাগুলিই ইসরোর সেই ভবিষ্যতের ভিত তৈরি করছে।