নয়া দিল্লি: হঠাৎ করেই বাড়ল সোনা চোরাচালান। হলুদ ধাতুর প্রতি ভারতীয়দের বরাবরই অমোঘ আকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু, চলতি বঠরে যেভাবে চোরা পথে সোনা আমগানি বেড়েছে, তা আগে কখনও দেখা যায়নি। এমনটাই জানাচ্ছেন শুল্ক বিভাগের কর্তারা। বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পাচার হওয়া সোনা বাজেয়াপ্তের পরিমাণ, গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪৩ শতাংশ বেড়েছে! বিভাগীয় কর্তাদের মতে, এর বেশিরভাগটাই আসছে মায়ানমার, নেপাল এবং বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত দিয়ে।
সেন্ট্রাল বোর্ড অব ইনডিরেক্ট ট্যাক্সেস অ্যান্ড কাস্টমস বা সিবিআইসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সলের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে মোট ১,৪০০ কেজি সোনা বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। আর গোটা ২০২২-২৩ অর্থবর্ষের হিসেবটা হল, প্রায় ৩,৮০০ কেজি। সেখানে চলতি বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাজেয়াপ্ত হয়েছে ২০০০ কেজি সোনা! মূলতঃ, ভারতে সোনা আমদানির চড়া শুল্কের জন্যই চোরাচালানও উৎসাহ পায় ভারতে। তবে, শুল্ক বিভাগের কর্তাদের মতে, সেটাই একমাত্র কারণ নয়। সিবিআইসির চেয়ারম্যান সঞ্জয় কুমার আগরওয়াল বলেছেন, “গত বছর থেকে সোনা আমদানির শুল্ক কাঠামোতে কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। তবে, চোরাচালান আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাজারে সোনার দামের উপরও নির্ভর করে। ভারতে সোনা পাচারের প্রবণতা অনেকটাই দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দামের উপর নির্ভরশীল।শুধুমাত্র সোনার উপর যে শুল্ক আরোপ করা হয়, তার উপর নির্ভর করে না।”
সঞ্জয় আগরওয়াল আরও জানিয়েছেন, এই সোনা আসছে মূলত মায়ানমার, নেপাল ও বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত দিয়ে। তাঁর দাবি, সোনা পাচার রোধ করতে, শুল্ক বিভাগ কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করছে। স্থল সীমান্ত, বিমানবন্দর বা অন্য যে কোনও পথেই সোনা আসুক না কেন, তা আটকানোর জন্য বিস্তৃত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজস্ব বিভগের গোয়েন্দা দফতরের কর্তারা লাগাতার নজরদারি চালান। কে কে ওই সমস্ত পথে আসা-যাওয়া করছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁরা। কোন কোন গাড়িতে কী মাল আসছে, সেদিকেও নজর রাখা হয়। প্রয়োজন বুঝলে কড়া পদক্ষেপও নেন তাঁরা।
সোনা আমদানিতে চড়া শুল্ক
ভারতে সোনার উপর মৌলিক শুল্ক ১২.৫ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। এর সঙ্গে, সোনা আমদানি করতে গেলে কৃষি পরিকাঠামো উন্নয়নের সেস হিসেবে আরও ২.৫ শতাংশ আর আমদানি করা সোনার উপর আরও ৩ শতাংশ আইজিএসটি দিতে হয়। সব মিলিয়ে সোনা আমদানি করতে গেলে ১৮.৪৫ শতাংশ শুল্ক বা কর দিতে হয়। আসলে ভারতে সোনা উৎপাদন হয় না বললেই চলে। এদিকে, সোনার চাহিদা বিপুল। সেই চাহিদা মূলত আমদানির মাধ্যমেই পূরণ করা হয়। এই বিপুল কর ফাঁকি দিতেই চোরাপথে সোনা আনতে চায় মানুষ।