
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স এই মুহূর্তে হয়তো গোটা পৃথিবীর কাছে সবচেয়ে অবাক করার মতো বিষয়। প্রতি পদে আমাদের অবাক করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আর সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি বিভিন্ন ধরনের চ্যাটবট বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে রয়েছে চ্যাট জিপিটি, জেমিনাই গ্রক বা পারপ্লেক্সিটির মতো এআই লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল। আমরাও বিভিন্ন কাজে আমাদের এই ডিজিটাল সহকারীর উপর নির্ভর করি। যেমন ইমেল লিখতে বা দ্রুত কোনও প্রশ্নের উত্তর পেতে। আর যে কোনও উত্তরের সঙ্গে সঙ্গে এর যে মানুষের মতো রিপ্লাই, সেটা দেখে আমরা আরও নির্ভরশীল হয়ে পড়ি এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের এই নিরাপদ বোধ হওয়া আসলে একটা মারাত্মক বিভ্রম। কারণ, অনেক এমন তথ্য আমরা গল্পচ্ছলে এই এআই চ্যাটবটকে জানিয়ে ফেলি যা আসলে অন্য কাউকে জানানোর কথাই নয়। হয়তও আমার মাসিক উপার্জন কিম্বা আমার কোনও ব্যক্তিগত ছবি। আর সেই তথ্য ওই এআই চ্যাটবটকে আমরা দিচ্ছে, তার অর্থ এই সব কিছুই দেখতে পাচ্ছে স্ক্রিনের ওপারে বসে থাকা মানুষজন। আর আমাদের এই অসতর্কতার ফলে, ফাঁস হয় গোপন অনেক কিছু, চুরি হয় পরিচয়, অপব্যবহার হয় আমাদের সংবেদনশীল তথ্যের। কিন্তু, চ্যাটবটকে কী কী বলবেন না, জানেন কি?
কোনও চ্যাটবটকে আপনার কোনও অ্যাকাউন্টের লগইন ক্রেডেনশিয়াল দেবেন না। আপনার ব্যাঙ্কিং বা সোশ্যাল মিডিয়া; কোনও ধরনের অ্যাকাউন্ট ডিটেল ফাঁস হয়ে যেতে পারে যে কোনও মুহূর্তে। ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর, ক্রেডিট কার্ড বা আধার অথবা প্যান কার্ডের মতো সরকারি আইডি চ্যাটবটে দেওয়া মানে জালিয়াতির রাস্তা খুলে দেওয়া।
আপনার ব্যক্তিগত ছবি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স কিম্বা কোনও অফিসিয়াল রিপোর্ট এআই চ্যাটবটে আপলোড করা একেবারেই সুরক্ষিত নয়। ডিলিট করার পরেও এই সব তথ্যের ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট থেকে যায়। অফিসের কৌশল বা ট্রেড সিক্রেটও কেউ যদি শেয়ার করেন, সেই ক্ষেত্রে কর্পোরেট সুরক্ষা বিঘ্নিত হতে পারে।
রোগের লক্ষণ বা চিকিৎসার বিষয়ে পরামর্শের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ডাক্তারের কাছে যান। ওষুধ বা স্বাস্থ্যের রেকর্ড চ্যাটবটে শেয়ার করা বিপজ্জনক। আপনার পুরো নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর বা ইমেলও কিন্তু এখানে শেয়ার করবেন না। কারণ, আপনার দেওয়া টুকরো টুকরো তথ্য জোড়া লাগিয়ে আপনার সম্পর্কে এমন অনেক কিছু এআই চ্যাটবট জেনে নিতে পারে, যা হয়তও আপনি নিজেও জানেন না।
মনে রাখবেন, চ্যাটবট কিন্তু আপনার বন্ধু বা থেরাপিস্ট নয়। নিজের ব্যক্তিগত গোপন কথা বা আইনি বিরোধের বিশদ তথ্য এখানে দিলে তা রেকর্ড হয়ে যাবে। এ ছাড়াও কোনও চ্যাটবটের আইনি পরামর্শ প্রায়শই অসম্পূর্ণ হয়। আর আইনি পরামর্শের জন্য পাশ করা উকিল থাকার পরও আপনার সেই বিষয়ে চ্যাটবটয়ের সঙ্গে কথা বলা একেবারে ঠিক নয়।
আপনার এআই চ্যাটবটের সঙ্গে কী নিয়ে কথা বলবেন, আর কী নিয়ে কথা বলবেন না সেটা ঠিক করা কিন্তু খুব একটা কঠিন নয়। আপনি যা যা অনলাইনে পোস্ট বা শেয়ার করতে পারেন, শুধু সেই সবই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। এ ছাড়াও, এআইকে দেওয়া আপনার প্রতিটি ইনপুটই পাবলিক হয়ে যেতে পারে, এই কথা মাথায় রেখেই চ্যাট করুন।