
কয়েক বছর আগেই ভারতে পুরনো এক ব্র্যান্ডের কোল্ডড্রিঙ্কস নতুন করে লঞ্চ করল রিলায়েন্স। অন্যান্য ঠান্ডা পানীয়ের তুলনায় প্রায় হাফ দামে। আর মানুষ সেই ক্যাম্পা কোলাকে পছন্দও করল দারুণভাবে। যে কারণে, প্রতিযোগিতা বজায় রাখতে অন্যান্য কোল্ড ড্রিঙ্ক সংস্থাও কমিয়ে দিল তাদের পানীয়ের দাম। আর হবে নাই বা কেন? ভারতের মতো সংবেদনশীল বাজারে কোনও পণ্য কিছুটা সস্তায় পাওয়া গেলে তাতে খুশিই হয় আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষ।
কিন্তু এই ব্যাপারটা বদলে যায় যখন গাড়ি বা মোবাইল ফোন কেনার বিষয় আসে। আর এর একটা বড় কারণ হল আমাদের দেশের মানুষের দেখনদারির স্বভাব। তথ্য বলছে, ২০০৮ সালে যখন বিশ্বজুড়ে ধাক্কা খেল অর্থনীতি, তখন ভারতে সবচেয়ে সস্তা চারচাকার গাড়ি ন্যানো লঞ্চ করল টাটা। দাম, মাত্র ১ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে, ভারতে সেই সময় একটা সাধারণ হ্যাচব্যাক গাড়ির দাম ছিল প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। আর সেই ন্যানো পরবর্তী ১০ বছরে ৩ লক্ষ ইউনিটও বিক্রি হয়নি। উল্টোদিকে, ২০০৮ সালে ভারতে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মারুতি সুজুকি অল্টোর দাম ছিল ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বেশি। যা সেই বছর প্রায় ৩ লক্ষ ইউনিট বিক্রি হয়েছিল।
তথ্য বলছে, ২০২৪ অর্থবর্ষে ভারতে গাড়ি বিক্রি হয়েছে প্রায় ৪২ লক্ষের বেশি। যা তার আগের অর্থবর্ষের তুলনায় ৮.৭৪ শতাংশ বেশি। আর মধ্যে আবার আরও একটি প্যাটার্ন দেখা গিয়েছে। এসইউভি সেগমেন্ট যা সাধারণ হ্যাচব্যাকের তুলনায় একটু বেশি দামি, তার বিক্রি এই সময়ের মধ্যে বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ। কম দামের হ্যাচব্যাকের বিক্রি কমেছে। আর এর সবচেয়ে বড় কারণ হল, আমাদের দেশে ছোট থেকে ফাইন্যান্সিয়াল লিটরেসি বা অর্থনৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে কোনও ধ্যানধারণাই দেওয়া হয় না। আর এ দেশে গাড়ি কেনা একটা বিরাট লাইফস্টাইল আপগ্রেড বলে মনে করে মানুষ। মানুষ মনে করে গাড়ি কিনলে সোশ্যাল স্টেটাস বাড়ে। ঠিক যেমন মানুষ মনে করে আইফোন কেনার ক্ষেত্রে।
অন্যদিক দিয়ে দেখলে ভারতে গাড়ির দামের উপর এত ধরণের কর বসে, যা গাড়িকে সাধারণ মানুষের হাতের নাগালের বাইরে বের করে দেয়। একটা অল্টো যার বেস মূল্য ৩ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা তার উপর ২৮ শতাংশ বা প্রায় ৯৩ হাজার টাকা জিএসটি বসে। এর উপর আরটিও ও রোড ট্যাক্স বসে প্রায় ৫৭ হাজার টাকা। বিমা হয় প্রায় ৩১ হাজার টাকার। এর বাইরে অন্যান্য খরচ হয় আরও হাজার দুয়েক টাকার মতো। সব মিলিয়ে গাড়ি রাস্তায় নামার সময় তার দাম গিয়ে দাঁড়ায় ৫ লক্ষ ১২ হাজার টাকার আশেপাশে। যা কিনা গাড়ির বেস মূল্যের ৫০ শতাংশেরও বেশি।