
চিনা যন্ত্রপাতি নিয়ে একটা অভিযোগ প্রায়শই ওঠে। চিনা জিনিসের কোয়ালিটি নাকি খুব একটা ভাল হয় না। এই অভিযোগ আদপে কতটা সত্যি তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। কিন্তু যে ঘটনা ঘটেছে ২ ইউরোপীয় দেশে, তা নিয়ে কোনও বিতর্ক এই মুহূর্তে নেই। আসলে নরওয়ে ও ডেনমার্কের মতো একাধিক ইউরোপীয় দেশে চিনা সংস্থার তৈরি বাস চলে। আর এবার সেই বাস নিয়েই শোরগোল।
নরওয়ের রাজধানী অসলোর রাস্তায় চলাচলকারী চিনা বৈদ্যুতিক বাসে এমন এক ত্রুটি খুঁজে পাওয়া গেল যা রীতিমতো ঘুম কেড়ে নিয়েছে দেশ সহ গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের। নরওয়ের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অপারেটর রুটার সম্প্রতি একটি নিরাপত্তা অডিটে দেখেছে যে চিনা কোম্পানি ইউটংয়ের তৈরি বাসে গোপন সিম কার্ড এবং রিমোট সফটওয়্যারের অ্যাক্সেস রয়েছে। এর ফলে, প্রস্তুতকারক চিন থেকে যেকোনও মুহূর্তে বাসগুলিকে বন্ধ করে দিতে পারে। এই আবিষ্কারের পরেই নড়েচড়ে বসেছে ডেনমার্কের সংস্থা মোভিয়াও। তারা তাদের কাছে থাকা ৪৬৯টি চিনা বাসের নিরাপত্তা খতিয়ে দেখছে।
একই ভাবে চিন যুদ্ধাস্ত্রও তৈরি করে। চিনে তৈরি সস্তা অস্ত্র ব্যবহার করে একাধিক দেশ। আর সেই সব অস্ত্রে এই ধরনের ‘রিমোট কিল-সুইচ’ কি থাকতে পারে? চিন থেকে কেনা জেএফ-১৭ ফাইটার জেট বা টাইপ ০৫৪এ/পি ফ্রিগেটেও কি এমন ব্যাকডোর লুকিয়ে রয়েছে? বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সাধারণ বাসে যদি এমন অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে সামরিক সরঞ্জামেও তা থাকা অসম্ভব নয়। বিশেষ করে, চিনের উইং লুং সিরিজের ড্রোনগুলিতে ‘জিওফেন্সিং’ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ড্রোনকে নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে উড়তে দেওয়া হয় না। এটি প্রমাণ করে, রিমোট কন্ট্রোল করার প্রযুক্তি চিনের হাতে রয়েছে।
যদিও এখন পর্যন্ত চিন কোনও সামরিক সরঞ্জাম দূর থেকে বন্ধ করে দিয়েছে—এমন কোনও প্রমাণিত ঘটনা নেই। তবুও এই ঘটনা সাপ্লাই চেন ও চিনা সফটওয়্যারের দুর্বলতাগুলি সামনে এনে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন সামরিক চুক্তিগুলির ক্ষেত্রে শুধু খরচ নয়, ডিজিটাল ও সফটওয়্যারের নিরাপত্তা নিয়েও অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিটি দেশকে নিজেদের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য বিদেশ থেকে আমদানি করা সরঞ্জামের সফটওয়্যারের সোর্স কোড গভীর ভাবে পরীক্ষা করা আবশ্যক। ভবিষ্যতে এটিই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।