
বর্জ্যপদার্থ একাধিক রকমের হয়। কঠিন বর্জ্য, তরল বর্জ্য বা গ্যাসীয় বর্জ্য তো আমরা বইয়েই পড়েছিলাম ছোটবেলায়। এ ছাড়াও বর্জ্যপদার্থকে আরও একাধিক ভাবে ভাগ করা যায়। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে এক ধরনের বর্জ্য এমন রয়েছে যা সময়ের সঙ্গে হু হু বাড়ছে। আর সেই বৃদ্ধির পিছনে হাত রয়েছে আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষেরও। আর সেটা হল ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্ট বা ই-ওয়েস্ট।
ধরুন, একটা ফোন বেশ কয়েক বছর ব্যবহার করার পর নতুন একটা ফোন কিনলেন। পুরনো ফোনটা কী হল? সেটা এক্সচেঞ্জে অনেকেই দেয় না। রেখে দেয় বাড়িতে। তারপর পড়ে থেকে থেকে সেটা হয়ে যায় ব্যবহারের অযোগ্য। আর তারপরই ফেলে দেওয়া হয় সেই ফোন। আর তখনই তা পরিণত হয় ইলেকট্রনিক্স বর্জ্যে। অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের বিষ যেমন সহজেই দূর হয়, এই ইলেকট্রনিক্স ওয়েস্টের বিষ কিন্তু এত সহজে যায় না। ফলে, আমরা জেনে বা না জেনে ধীরে ধীরে আমাদের বাড়ির আশেপাশেই বিষের পাহাড় তৈরি করে ফেলছি।
গ্লোবাল ই-ওয়েস্ট মনিটরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য তৈরির দৌড়ে ভারত এখন বিশ্বের তৃতীয় স্থানে। ২০২২ সালের হিসেব বলছে, চিন বছরে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-ওয়েস্ট তৈরি করেছে। তার ঠিক পরই রয়েছে আমেরিকা। তারা প্রায় ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন ই-ওয়েস্ট তৈরি করেছে। আর আমরা তৈরি করছি প্রায় ৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন ইলেকট্রনিক বর্জ্য।
ইলেকট্রনিক্স বর্জ্য তৈরি করায় দোষের কিছু নেই। কারণ, ব্যবহারের ফলে সব জিনিসই খারাপ হয়। আর তখন তা চলে যায় বাতিলের খাতায়। কিন্তু আমাদের সমস্যাটা অন্য জায়গায়। আমাদের দেশে এই ধরনের বর্জ্য যে পরিমাণে তৈরি হয়, সেই পরিমাণে তা রিসাইকেল হয় না। ফলে, বেশিরভাগ এমন বর্জ্যই চলে যায় ইনফর্ম্যাল সেক্টরে। আর সেই সব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময়ই মানা হয় না কোনও ধরনের স্বাস্থ্যবিধি বা নিয়মনীতি।
আমাদের কলকাতা বা হাওড়ার মতো শহরের জন্য এই খবর এক প্রকার বিপদঘণ্টা। কারণ, কলকাতার ধাপা, হাওড়ার টিকিয়াপাড়া বা দক্ষিণেশ্বরের কাছে যে ডাম্পিং এরিয়া রয়েছে সেই সব জায়গায় হয়তো অজান্তেই জমা হচ্ছে এই ধরনের বর্জ্য পদার্থ। আর পুরনো ফেলে দেওয়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য থেকে মাটিতে মিশছে ক্ষতিকারক সীসা, পারদ ও ক্যাডমিয়ামের মতো ধাতু। যা বিপদ ডেকে নিয়ে আসছে ওই এলাকা ও তার আশেপাশে থাকা লক্ষ লক্ষ মানুষের জন্য।
বিশেষজ্ঞরা বারে বারে এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সতর্ক করছেন। কিন্তু দেশে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনও বিরাট পরিকাঠামো না থাকায় নেক ক্ষেত্রেই যেভাবে এই বর্জ্য নিয়ে কাজ হওয়া দরকার সেভাবে হচ্ছে না। যদিও আমার-আপনার মতো সাধারণ মানুষের বেশ কিছু জিনিস করার রয়েছে। প্রথমত, ঘরে পড়ে থাকা পুরনো ইলেকট্রনিক সামগ্রী ফেলে দেবেন না। সরকারের অনুমোদিত ই-ওয়েস্ট সংগ্রহ কেন্দ্র খুঁজে সেখানে এই ধরণের পণ্য জমা করতে হবে। তা হলে কেবল পরিবেশ বাঁচবে, এমন নয়। ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্থ ইকো-সিস্টেম তৈরি করবে। নাহলে এই অসুস্থতার বিষের মধ্যেই বড় হবে আগামী প্রজন্ম।