
ইলন মাস্কের স্যাটালাইট ইন্টারনেট প্রোভাইডর সংস্থা স্টারলিঙ্ক কি শহরের ভিড় কাটিয়ে দ্রুত গতির ইন্টারনেট পরিষেবা দিতে সক্ষম? এই প্রশ্নের উত্তরে একটা নেতিবাচক উত্তর দিলেন খোদ স্পেসএক্সের সিইও। সম্প্রতি জিরোধার সহ-প্রতিষ্ঠাতা নিখিল কামাথের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক স্পষ্ট জানিয়েছেন, পদার্থবিদ্যার সূত্রই বলছে, ঘন জনবসতিপূর্ণ শহরে স্টারলিঙ্ক হিসাব খুব একটা বদলে দিতে পারবে না।
মাস্কও বলছেন, শহরের একটি সাধারণ মোবাইল টাওয়ার থেকে ব্যবহারকারীর দূরত্ব হতে পারে ১ কিলোমিটার। কিন্তু স্টারলিঙ্ক যে স্যাটেলাইটগুলোর মাধ্যমে ইন্টারনেট পরিষেবা দিয়ে থাকে তারা পৃথিবীর কক্ষপথের প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার উপরে থাকে। মাস্কের কথায়, এত দূরত্বের কারণে স্টারলিঙ্ক কোনওভাবেই মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বের টাওয়ারের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে না। তাঁর ব্যাখ্যা, স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সার্ভিসের ক্ষেত্রে অনেকটা ছড়ানো জায়গায় পরিষেবা দিয়ে থাকে। অনেকটা টর্চের আলোর মতো। প্রতিটি স্যাটেলাইট একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ব্যবহারকারীকেই পরিষেবা দিতে পারে। ফলে উঁচু উঁচু বাড়ি দিয়ে ঘেরা শহরের বিরাট চাহিদার চাপ কখনই সামলাতে পারবে না স্টারলিঙ্ক।
ইলন মাস্ক বলছেন, স্টারলিঙ্ককে শহরের জন্য তৈরি করাই হয়নি। এটি মূলত গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা দেওয়ার জন্য আদর্শ। যে সব জায়গায় ফাইবার কেবল বা হাই-ব্যান্ডউইথ মোবাইল টাওয়ার বসানো কঠিন এবং ব্যয়বহুল। এই মুহূর্তে ১৫০টিরও বেশি দেশে স্টারলিঙ্কের পরিষেবা চালু রয়েছে।
স্টারলিঙ্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল বিভিন্ন বিপর্যয়ে টিকে থাকতে পারে এই ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডর। উপগ্রহগুলি লেজার লিঙ্কের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে। ফলে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন—বন্যা, ভূমিকম্প, সমুদ্রের নীচের অপটিক ফাইবার কেটে গেলে বা গ্রাউন্ড নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও স্টারলিঙ্ক নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ চালিয়ে যেতে পারে। মাস্ক এও জানিয়েছেন, বিপর্যয়ের ক্ষেত্রে স্টারলিঙ্ক বিনামূল্যে পরিষেবা দেয়। এখানে কোনও ‘পে-ওয়াল’ নেই।
মাস্কের এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, স্টারলিঙ্ক তার প্রচলিত প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরিপূরক হিসেবেই কাজ করবে। তবে ঘনবসতিপূর্ণ শহরে হয়তো ১ বা ২ শতাংশ ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে পারবে। শহরের যে সব জায়গায় ইন্টারনেট সংযোগের অভাব রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ আরও দৃঢ় করতে স্টারলিঙ্ক নতুন এক দিগন্ত খুলে দেবে।