
এবার নাকি চাইলেই এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে তুলে ফেল যাবে ১০০ শতাংশ টাকা। কি, আবাক হচ্ছেন? আসলে সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ট্রাস্টের ২৩৮তম সভাতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও ১৩টি পুরনো নিয়মকে একত্রিত করে ১টি নিয়মে পরিণত করা হয়েছে। কিন্তু এতে ইপিএফও সদস্যদের ভাল হবে নাকি খারাপ? সেই বিষয় নিয়েই টিভি নাইন ডিজিটালের আজকের বি ফর বিজনেসে কথা বলব আমি সুপ্রিয়।
এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের নতুন নিয়ম নিয়ে তো কথা হবে। কিন্তু তার আগে তো জানতে হবে যে এই এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড আসলে কী।
দেখুন, আপনার মাসিক বেতনের একটি অংশ কেটে জমা হয় এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড বা EPFO-তে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের অধীনে থাকা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন বা EPFO আপনার এই জমা হওয়া পুঁজির হিসাব রাখে ও বাজারের অবস্থা অনুযায়ী একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে। একজন বেসরকারি ক্ষেত্রে কর্মরত হিসাবে এই ফান্ড আপনার জন্য ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানেন?
প্রতি মাসে আপনার মূল বেতন ও মহার্ঘ ভাতার একটি নির্দিষ্ট শতাংশ আপনার EPF অ্যাকাউন্টে জমা হয়। একই পরিমাণ টাকা দেয় সেই সংস্থা, যেখানে আপনি কাজ করেন। মনে রাখবেন, যে টাকা আপনার সংস্থা দিচ্ছে, তা দুই ভাগে বিভক্ত। এর একটি অংশ যায় প্রভিডেন্ট ফান্ডে আর বাকি টাকা চলে যায় এমপ্লয়িজ পেনশন স্কিম বা EPS-এ।
যাঁদের এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ডে অ্যাকাউন্ট থাকে, তাদের একটা নির্দিষ্ট UAN নম্বর থাকে। আপনি যতবার চাকরি পরিবর্তন করুন না কেন, আপনার ইউনিভার্সাল অ্যাকাউন্ট নম্বর বা UAN কিন্তু বদলায় না। এই নম্বরের সঙ্গেই আপনার সমব PF অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক করা থাকে। আর এটিই আপনার সঞ্চিত টাকার সুরক্ষার চাবিকাঠি।
অর্থনীতিবিদ সুপর্ণ পাঠকের সঙ্গে আমরা কথা বলেছিলাম। তিনি বলছেন, “এটা আসলেই একটা নতুন সুযোগ। নতুন এই নিয়মের সেভাবে নেগেটিভ কিছু নেই। বরং বেশ কিছু নিয়ম এখানে সরলীকৃত হয়েছে”। তবে একেবারেই কি কোনও সমস্যা নেই? নতুন এই আইন কি তাহলে ইপিএফও-র সদস্যদের জন্য খুবই ভাল? এখানে সুপর্ণবাবু বলছেন, “এখানে একটা সমস্যা হতে পারে। নতুন এই আইনের ফাঁক গলে অনেকেই সম্পূর্ণ টাকা তুলে নিতে পারে। আর সেটা যদি হয় তাহলে ইপিএফও-র ওই সদস্যের জন্যই এই ঘটনা খুবই সমস্যাজনক হতে পারে। তাঁর ভবিষ্যতের সঞ্চয় বলে আর কিছু থাকবে না তেমন হলে”।
প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা আসলে সরকারের কাছে একটা তহবিলের মতো। যে টাকা প্রয়োজনে সরকার ব্যবহার করে। তাহলে নতুন নিয়ম অনুযায়ী ১০০ শতাংশ টাকা যদি অনেকেই তুলে নেয়, তাহলে সেই তহবিলে থাকা টাকার পরিমাণ অনেকটা কমে যাবে। সেই ক্ষেত্রে তো সমস্যায় পড়বে সরকারই। তাহলে এমন সিদ্ধান্ত কেন নিচ্ছে তারা? অর্থনীতিবিদ বলছেন, আগে সরকার সোজাসুজি এই তহবিল ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে এই তহবিল মেনটেন করে অছি পরিষদ। তারা নিজেরা সিদ্ধান নিয়ে একাধিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে থাকে। আর সরকারের অর্থের প্রয়োজন হলে সরকার বন্ড বের করে। আর সেই বন্ডে যে কেউ বিনিয়োগ করতে পারে। ফলে, সরকার সরাসরি ওই অর্থ এখন আর ব্যবহার করে না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেতনভোগী শ্রেণির জন্য এই এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড একটি অপরিহার্য সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা। এই স্কিমের সঠিক ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে আপনার অবসর জীবন। ফলে, সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনজীবনে ঠিক কতটা প্রভাব ফেলবে বা এই সিদ্ধান্ত আদৌ সঠিক কি না তা কিন্তু সময়ই বলবে।