
সাধারণ মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত মানুষ অবসর নিয়ে কোনও ভাবনাচিন্তা করে না। ফলে, নিম্নবিত্ত মানুষরা অবসরের বয়স পেরিয়ে গেলেও কাজ থেকে অবসর নিতে পারেন না। আর মধ্যবিত্ত মানুষদের একটা বয়সের পর মনে পড়ে যে হ্যাঁ এবার অবসরকালীন ফান্ডের ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে, শেষ মুহূর্তে দৌড়দৌড়ি। অথচ সত্যিটা হল, যত দ্রুত পরিকল্পনা করবেন, সুবিধা তত বেশি। আর আজকের দিনে বিনিয়োগ করতে চাইলে একাধিক সরকারি প্রকল্পও রয়েছে। এর মধ্যে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড, পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড ও ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম।
বেতনভোগীদের জন্য EPF বা এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড হল বিনিয়োগের ভিত্তি। প্রতি মাসে আপনার বেতনের একটি অংশ কেটে নেওয়া হয়। তার উপর সমপরিমাণ টাকা দেয় আপনি যে সংস্থায় চাকরি করছেন, সেই সংস্থা। বর্তমানে এই অ্যাকাউন্টে ৮.২৫ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও এটি সরকারি পেনশন স্কিম। বাড়ি কেনা বা চিকিৎসার মতো বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া এই ফান্ড থেকে অবসরের আগে টাকা তোলা যায় না। তা ছাড়া এখানে নিজে থেকেই টাকা কেটে নিয়ে তারপর মাইনে ঢোকে, ফলে টাকা জমা করতে ভুলে গিয়েছে কেউ, এমনটা হয় না।
আপনি চাকরিজীবী হোন বা ব্যবসায়ী, আপনার ইপিএফ থাকুক বা না থাকুক, আপনি পিপিএফ বা পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ডের মাধ্যমে আপনার সঞ্চয় বাড়াতে পারবেন। ইপিএফের মতো পিপিএফও সরকারি প্রকল্প। ফলে এর নিরাপত্তা নিয়েও দুশ্চিন্তার কোনও কারণ নেই। পিপিএফের ক্ষেত্রে বর্তমানে সুদের হাত ৭.১ শতাংশের আশেপাশে। আর এর সবচেয়ে বড় সুবিধা, এর সুদের উপর কোনও কর লাগে না। এবং সপ্তম বছর থেকে এই বিনিয়োগ প্রয়োজনে আংশিক তুলে নেওয়াও যায়। ফলে, যাঁরা একটু ভেবে চিন্তে, কম ঝুঁকি নিয়ে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁদের জন্য পিপিএফ আবশ্যিক।
NPS বা ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম এই দুই ধরনের প্রভিডেন্ট ফান্ডের থেকে অনেকটাই আলাদা। কারণ এনপিএসের রিটার্ন নির্ভর করে শেয়ার বাজারের উপর। এনপিএসে আপনার টাকা ইক্যুইটি, কর্পোরেট বন্ড এবং সরকারি সিকিউরিটিতে বিনিয়োগ করা হয়। এখানে আপনি নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা হিসাব করে যে কোনও ধরনের অ্যাসেট ক্লাস বেছে নিতে পারেন। শেয়ার বাজারের সঙ্গে যুক্ত থাকায় এতে সুদের হার নির্দিষ্ট নয়। ৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এনপিএসে। অবসরের সময় মোট জমার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত এখান থেকে আপনি করমুক্তভাবে তুলে নিতে পারেন। তবে এনপিএসের ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কেউ যদি বেশি রিটার্ন চায়, তার জন্য তাকে ঝুঁকি বেশি নিতে হবে।
যদি বিনিয়োগে নিশ্চিত রিটার্ন চান বা ঝুঁকি নিতে না চান তাহলে অবশ্যই ইপিএফ বা পিপিএফ ভাল। আপনি যদি চাকরিজীবী হন, তাহলে ইপিএফ পাবেন আপনি। আর আপনি চাকরিজীবী হোক বা সাধারণ মানুষ, পিপিএফে বিনিয়োগ করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি ঝুঁকি নিতে চান ও মুদ্রাস্ফীতিকে হারিয়ে দিতে চান, তাহলে আপনি এনপিএসে বিনিয়োগ করুন। আসলে এই ৩টির মধ্যে ১টি নয়, ৩টি ক্ষেত্রই প্রয়োজন অনুযায়ী মিলিয়ে মিশিয়ে আপনার সুরক্ষিত অবসর জীবন তৈরি করে দেবে।