নয়া দিল্লি: গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থাগুলিতে নতুন নিয়োগ হচ্ছিল না বললেই চলে। তবে, ‘টিমলিজ ডিজিটালে’র বিশ্লেষণ অনুসারে চলতি আর্থিক বছরে অবস্থার পরিবর্তন হতে চলেছে। ২০২৪-২৫-এ এই ক্ষেত্রে নতুন নিয়োগ ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টারগুলিও গত বছরের তুলনায় তাদের নতুন নিয়োগ ৪০ শতাংশ বাড়াবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই, মেশিন লার্নিং এবং ডেটা অ্যানালিসিসের মতো বিভাগে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্নদের নিয়োগ বাড়বে। টিমলিজ আরও বলেছে, অভিজ্ঞতা যতই থাক, দক্ষতার উপরই জোর দেওয়া হবে।
টিমলিজ ডিজিটালের বিশ্লেষণে আরও বলা হয়েছে, এআই, মেশিন লার্নিং এবং অটোমেশনের মতো ক্ষেত্রে ডেটা-সম্পর্কিত পেশাদারদের চাহিদা ক্রমে বাড়ছে। বিশেষ করে ডেটা সায়েন্টিস্টদের কর্মসংস্থানের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটেছে। ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং-এর দক্ষতার চাহিদাও ২০২৪ সালে ৫ শতাংশ থেকে ২০২৫ সালে ১৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া, পাইথন প্রোগ্রামিং, এথিকাল হ্যাকিং, পেনিট্রেশন টেস্টিং, এজিল স্ক্রাম মাস্টার, এডব্লুএস সিকিওরিটি, এবং জাভাস্ক্রিপ্টের মতো দক্ষতার চাহিদাও ক্রমবর্ধমান।
টিমলিজ ডিজিটালের প্রধান কার্যনির্বাহী কর্তা, নীতি শর্মা বলেছেন, “প্রযুক্তি শিল্পে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে চলেছে। এগিয়ে থাকতে, কোম্পানিগুলির তাদের ট্যালেন্ট স্ট্র্যাটেজিকে, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলতে হবে। বিশেষ করে এআই এবং ক্লাউড কম্পিউটিং ক্ষেত্রে। দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্যোগগুলিতে বিনিয়োগ আজ প্রয়োজনীয়তা, এটা কারও পছন্দ-অপছন্দের বিষয় নয়। এতে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে পেশাদাররা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবেন। আগামী বছরগুলিতে টেকসই বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনকে উত্সাহিত করতে এই সামঞ্জস্য রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।”
কর্মসংস্থান বৃদ্ধির এই প্রবণতা, সাম্প্রতিক সময়ে অ্যাকসেঞ্চার (Accenture), টাটা কনসাল্টেন্সি সার্ভিসেস বা টিসিএস (TCS), এবং এইচসিএলটেক (HCLTech)-এর মতো সংস্থার কর্তাদের মন্তব্যেও প্রতিধ্বনিত হয়েছে। টিসিএস-এর চিফ হিউম্যান রিসোর্স অফিসার, মিলিন্দ লাক্কাড় বলেছেন, “এই বছর, আমরা দ্বিগুণেরও বেশি হাই-ক্যাডার প্রশিক্ষণার্থীদের নিয়েছি।” এইচসিএলটেক আরও ঘোষণা করেছে, ক্যাম্পাস থেকে নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা সংখ্যার পরিবর্তে দক্ষতার উপর বেশি জোর দেবে। তারা আরও জানিয়েছে, ২০২৫-২৬ সালের জন্য গত ১২ মাস ধরে তারা ক্যাম্পাস নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। সংস্থার চিফ পিপল অফিসার, রামচন্দ্রন সুন্দররাজন বলেছেন, “ফ্রেশারদের ক্ষেত্রেও আমরা স্পেশালাইজেশন খুঁজছি। এর অর্থ, এই তাদের বেতনও, ফ্রেশারদের গড় বেতন থেকে বেশি হবে।
শুধু ফ্রেশারদের নয়, টিমলিজ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে প্রোজেক্ট ম্যানেজার, ডেটা সায়েন্টিস্ট এবং সাইবার সিকিওরিটি বিশেষজ্ঞদের বেতন ২০২৩-২৪-এর তুলনায় ৭.৮৯ শতাংশ থেকে ১০.২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ডেটা ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট এবং ডেভঅপস-এ দক্ষতার গুরুত্বের কারণে, সিনিয়র ম্যানেজমেন্টের ভূমিকার চাহিদা, গত বছর তুলনায় ২১ শতাংশ বেড়েছে। তাদের বেতনও ৬.৫৪ শতাংশ থেকে ১০.৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। ক্লাউড ইনফ্রাস্ট্রাকচারে দ্রুত স্থানান্তরের কারণে ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারিং, ডেভেলপমেন্ট এবং আর্কিটেকচার সম্পর্কিত ভূমিকাগুলিতেও নিয়োগ বেড়েছে। এই পেশাদারদের এডব্লুএস এবং মাইক্রোসফট-এর শংসাপত্রগুলি থাকা প্রয়োজনীয়। ২০২৫ অর্থবর্ষের মধ্যে, ভারতের বিভিন্ন সেক্টরে ২০ লক্ষেরও বেশি ক্লাউড পেশাদারদের প্রয়োজন হবে বলে, আশা করা হচ্ছে।