
পাহাড় চুড়োয় ওঠার পর সোনার বাজারে যে কোনও মুহূর্তে নামতে পারে বিরাট ধস। অধিকাংশ বাজার বিশেষজ্ঞ যখন বলছেন আপাতত সোনার এই ঊর্ধ্ব গতি বজায় থাকবে তখনই PACE 360 সংস্থার কো-ফাউন্ডার এবং চিফ গ্লোবাল স্ট্র্যাটেজিস্ট অমিত গোয়েল বলছেন খুব তাড়াতাড়িই হুড়মুড়িয়ে নেমে আসতে পারে সোনার দাম। আসলে সোনা বা রুপোর দাম যেভাবে আকাশ ছুঁয়ে ফেলেছে তাতে দিশেহারা সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। কিন্তু দাম পড়লেও ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়াতে পারে সোনার দাম।
১০ অক্টোবরের তথ্য বলছে ৯ অক্টোবরের তুলনায় ১০ গ্রাম ২৪ ক্যারেট সোনার দাম কমেছে ১ হাজার ৮৬০ টাকা। কলকাতার বাজারে সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ লক্ষ ২২ হাজার ২৯০ টাকা। সোনার দামের পাশাপাড়ি ১ কিলো রুপোও ছাড়িয়ে গিয়েছে ১ লক্ষ ৫০ হাজারের গণ্ডি। তবে, অমিত গোয়েলের এই সাবধানবাণী তাঁদের জন্য ভয়াবহ যাঁরা সোনা বা রুপোর দাম বাড়ার পর সেখানে বিনিয়োগ করছেন।
অমিত গোয়েল মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এই ধরনের মারাত্মক মূল্যবৃদ্ধি ইতিহাসে খুব কমই দেখা গেছে। তিনি বলেন, “গত ৪০ বছরে সোনা ও রুপো মাত্র দু’বার এত দারুণভাবে বেড়েছে। আর এই দু’বারই ডলার সূচক দুর্বল ছিল। আর এই দুই ক্ষেত্রেই চড়চড়িয়ে সোনার দাম বাড়ার পর তা পড়েওছিল হুড়মুড়িয়ে।”
তিনি আশঙ্কা করছেন, এই দাম খুব তাড়াতাড়ি এমন এক জায়গায় পৌঁছে যাবে যা বুল রানের শেষ বলেই চিহ্নিত হয়। গোয়েল আরও বলছেন যে এই জায়গা ছুঁয়ে ফেললেই সোনায় বিনিয়োগকারীরা তাঁদের হাতে থাকা সোনা বিক্রি করতে শুরু করবেন।
এই বাজার বিশেষজ্ঞের পূর্বাভাস অনুযায়ী, সোনার দাম কমতে পারে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত। এই ক্ষেত্রে তিনি আগের পতনের কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর বিশ্লেষণ যদি সত্যি হয়, তবে প্রতি ১০ গ্রাম সোনার দাম প্রায় ৭৭ হাজার ৭০১ টাকায় নেমে আসতে পারে।
গোয়েল রুপোর বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে বলেছেন। তাঁর মতে, রুপোর দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। অর্থাৎ, এক কিলোগ্রাম রুপোর দাম কমে ৭৭ হাজার ৪৫০ টাকার কাছাকাছি চলে আসতে পারে।
কিন্তু রুপোর দাম কমবে কেন? কারণ, রুপোর চাহিদা মূলত শিল্পক্ষেত্রে। যেমন ফটোভোল্টাইক, সেমিকন্ডাক্টর ও ইলেকট্রিক ভেহিকেল তোইরিতে রুপো লাগে। কিন্তু মন্দার সময় এই শিল্প চাহিদা দামের পতনকে সামাল দিতে পারবে না। তিনি জানান, বর্তমানে রুপোর বাজার একটি বাবল তৈরি করে ফেলেছে। যে কারণে সোনার চেয়েও খারাপ ভাবে পড়তে পারে রুপো।
বাজারের এমন পরিস্থিতিতে গোয়েল বিনিয়োগকারীদের বলছেন ‘ধীরে চলো নীতি’ নিতে। তিনি আরও বলছেন যাঁরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চান, তাঁরা অপেক্ষা করুন। সোনার দাম প্রতি আউন্সে ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ ডলার বা ১০ গ্রাম সোনার দাম ৮১ হাজার থেকে ৮৪ হাজার টাকার আশেপাশে নামলে বিনিয়োগের কথা বলছেন গোয়েল। তবে রুপোর ক্ষেত্রে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে বলছেন তিনি।
সোজা কথায় বললে স্বল্পমেয়াদী বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন সময়টা বেশ অস্থির। অন্যদিকে, যাঁরা দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগ করতে চাইছেন তাঁরা আরও একটু অপেক্ষা করলে বিনিয়োগের ঝুঁকি কমবে। আর সেই কারণেই সোনা-রুপোর বাইরে বিনিয়োগের পোর্টফোলিওকে শক্তিশালী করার পরামর্শই দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোথাও বিনিয়োগ করতে চাইলে সেই বিষয়ে যথাযথ তথ্যানুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করুন। এই লেখা শুধুমাত্র শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে। TV9 বাংলা বিনিয়োগের কোনও উপদেশ দেয় না।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যে কোনও বিনিয়োগে বাজারগত ঝুঁকি রয়েছে। ফলে, আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি সাবধানে পড়ে নেবেন। তারপর বিনিয়োগ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।