
নয়া দিল্লি: কেউ বলছেন বাম্পার ডিসকাউন্ট, কেউ বলছেন, জিনিস কিনলেই নিশ্চিত ফ্রি গিফট। তাতেও লোক টানা যাচ্ছে না সোনার দোকানে। অন্য বছরে এই সময়ে সোনার দোকানে বেশ ভিড় থাকে। ধনতেরাস বা তার আগে ব্যাপক কেনাকাটা হয়। তবে এবার সেই বাজার নেই। হু হু করে বেড়ে চলেছে সোনার দাম। লাখের গণ্ডি তো কবেই পার করে গিয়েছে। যে হারে ছুটছে, তাতে সোনার দাম চলতি বছরের শেষ বা ২০২৬ সালের শুরুতেই সোনার দাম দেড় লাখ বা দুই লাখেও পৌঁছতে পারে।
এদিকে সামনে তো বিয়ের মরশুম। এই সময়ে কমবেশি সব পরিবারই সোনার গহনা কেনেন। একজন কনেকে সাজাতে কত টাকার গহনা লাগে বলুন তো? একটা হারের দাম কমপক্ষে ১ লাখ টাকা। একটু গলা ভরাট গহনা চাইলে দেড় লক্ষ টাকা পড়বেই। একটা হারে তো হবে না, যদি একটা সীতাহার দিতে চান, তাহলে আরও এক লাখ টাকা। হাতের চুরি বা বালা কিনলে খরচ পড়বে আরও দেড় থেকে দুই লক্ষ টাকা। একদম হালকা ওজনের সোনার শাখা-পলা কিনলেও খরচ পড়বে আরও প্রায় ১ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে অন্তত ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা তো খরচ রয়েইছে সোনার। এটা তো অনেকের বিয়ের সম্পূর্ণ খরচ। শুধু গহনার পিছনেই যদি এত টাকা খরচ হয়, তাহলে বাকি খরচ কোথা থেকে জোগাবেন! তাহলে সোনা কি আর কিনবেন না কেউ?
চলতি বছরে সোনার দাম বেড়েছে ৫৪ শতাংশ। ডলার দুর্বল হওয়া, বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির বিপুল সোনা কেনা, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা- সোনার দাম কিছুতেই কমছে না। গ্লোবাল স্ট্রাটেজি লিড রস ম্যাক্সওয়েল বলছেন, এই ধাক্কা সামলে ওঠা কিন্তু খুব কঠিন। এই প্রথম প্রতি আউন্স সোনার দাম ৪ হাজার ডলার পার করেছে। এই ট্রেন্ড চলতে থাকলে, সামনে আরও বিপদ।
তবে ম্যাক্সওয়েলের মতে, সোনার দামের এমন ব্যাপক বৃদ্ধি একটা বুদবুদের মতো। যদি ডলার শক্তিশালী হয়, তাহলে সোনার দাম কিন্তু কমতে পারে। বিশ্ব বাজারে পরিবর্তনের ফলে ৫ থেকে ১০ শতাংশ সোনার দাম কমতে পারে সোনার দাম। এতে অল্প কিছুটা কমতে পারে সোনার দাম। তবে যদি দীর্ঘমেয়াদে দেখা যায়, তাহলে সোনার দামে বিশেষ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। বরং বিশ্বে যদি আরও অশান্তি হয় বা মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ নীতি পরিবর্তন করে, তাহলে সোনার দাম আরও বাড়তে পারে। তাই যাদের একান্তই সোনা কিনতে হবে, তারা কয়েকদিন অপেক্ষা করুন, উৎসবের মরশুম পার করার পর বা যে দিনই সোনার দাম কমবে, সেদিনই সোনা কিনে নেওয়া উচিত।
এবার সোনার দাম বাড়ার পরই অনেক বিনিয়োগকারী কিন্তু শেয়ার মার্কেটের বদলে সোনায় বিনিয়োগ করতে বেশি আগ্রহী হয়েছেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সোনার দাম বৃদ্ধির দিকে নজর রেখে বিনিয়োগ করেন, তাহলে তা ভুল হবে। বরং ধীরে ধীরে বিনিয়োগ করা উচিত। অভিজ্ঞ বিনিয়োগকারীদের উচিত অন্য অপশনেও বিনিয়োগ করা। আর সোনায় বিনিয়োগ বলতে অনেকেই ভাবেন যে গহনা কেনা। তা কিন্তু নয়। এর বদলে আধুনিক অপশন, যেমন গোল্ড মিউচুয়াল ফান্ড, ইটিএফ বা অনলাইন সোনা কিনতে পারেন। এতে স্বচ্ছতাও বেশি থাকে। একজন বুদ্ধিমান বিনিয়োগকারীর কাছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ সোনা-রুপো থাকা উচিত।