নয়া দিল্লি: বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি), সংসদে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। পরিকাঠামোর উন্নয়নে এবং কৃষি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য মূলধন বরাদ্দ এবং আয়কর কাঠামোয় পরিবর্তন-সহ এদিনের বাজেটে বেশ কিছু বড় আর্থিক সংস্কারের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, এবারের বাজেট –
– এবারের বাজেটে মোট সাতটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। যাকে অর্থমন্ত্রী ‘সপ্তর্ষি’ বলে উল্লেখ করেছেন। এই সাতটি বিষয় হল – অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন, কৃষিক্ষেত্রে জিজিটাল পরিকাঠামো, পরিকাঠামো ও বিনিয়োগ, সম্ভাবনার উন্মোচন, গ্রিন গ্রোথ বা স্থিতিশীল বৃদ্ধি, যুবশক্তি এবং আর্থিক ক্ষেত্র।
– উচ্চ মূল্যের হর্টিকালচার ফসল উৎপাদনের জন্য ২২০০ কোটি টাকা ব্যয়-সহ আত্মনির্ভর ক্লিন প্ল্যান্ট প্রোগ্রাম চালু করা হবে।
– প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার বরাদ্দ ৬৬ শতাংশ বাড়িয়ে ৭৯,০০০ কোটি করা হয়েছে।
– শহরাঞ্চল পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল স্থাপন করা হবে। টায়ার ২ এবং টায়ার ৩ শহরগুলির পরিকাঠামোর উন্নয়নে এই তহবিল ব্যবহার করা হবে।
– এমএসএমই-দের সাহায্যার্থে এনটিটি ডিজি লকার স্থাপন করা হবে। বড় ব্যবসা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলি অনলাইনের সুরক্ষায় তাঁদের বিভিন্ন নথি জমা রাখতে পারবে এবং সেখান থেকে সেই নথিগুলি ভাগ করে নিতে পারবে।
– কোডিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেকাট্রনিক্স, আইওটি, থ্রিডি প্রিন্টিং, ড্রোনের মতো নতুন প্রযুক্তি ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ যুবকের দক্ষতা বাড়াতে প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনা ৪ চালু করা হবে। ৩০টি স্কিল ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার স্থাপন করা হবে।
– গ্রামীণ এলাকায় তরুণ উদ্যোগপতিদের কৃষি স্টার্টআপ স্থাপনে উৎসাহ দিতে এগ্রিকালচার এক্সিলারেটর ফান্ড চালু করা হবে।
– মৎস্যজীবী, মাছ বিক্রেতা, এবং ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ীদের সাহায্যার্থে ৬,০০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ-সহ প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার একটি নতুন প্রকল্প চালু করা হবে।
– স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শিক্ষা, কৃষি, জলসম্পদ, অর্থ, দক্ষতা উন্নয়ন এবং পরিকাঠামোর মতো সরকারি পরিষেবাগুলিকে ব্লক স্তরে পৌঁছে দিতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লক প্রোগ্রাম চালু করা হচ্ছে। এই প্রকল্প দেশের ৫০০টি ব্লকে চালু করা হবে।
– তফসিলি উপজাতিদের উন্নয়নে আগামী তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী পিভিটিজি উন্নয়ন মিশন বাস্তবায়িত করার জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
– পরিকাঠামো ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ বাড়াতে নতুন পরিকাঠামো অর্থ সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
– শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের জন্য জেলার শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভাইব্র্য়ান্ট ইনস্টিটিউট অব এক্সেলেন্স হিসেবে গড়ে তোলা হবে।
– শিশু-কিশোরদের জন্য একটি জাতীয় ডিজিটাল গ্রন্থাগার স্থাপন করা হচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ের মানসম্পন্ন বই এই ডিজিটাল গ্রন্থাগারে পাওয়া যাবে।
– এক লক্ষ প্রাচীন শিলালিপির ডিজিটাইজেশন করা হবে। এর জন্য ‘ভারত শেয়ারড রিপোজিটরি অব ইনস্ক্রিপশন’ স্থাপন করা হবে।
– ‘মেক এআই ইন ইন্ডিয়া অ্যান্ড মেক এআই ওয়ার্ক ফর ইন্ডিয়া’-র দৃষ্টিভঙ্গি বাস্তবায়নের জন্য তিনটি শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে।
– স্টার্ট আপ এবং গবেষকদের উদ্ভাবন এবং গবেষণা প্রকাশের জন্য জাতীয় ডেটা গভর্নেন্স নীতি চালু করা হবে।
– গবেষণাগারে তৈরি হিরে ক্ষেত্রের জন্য গবেষণা ও উন্নয়নে অনুদান বরাদ্দ করা হয়েছে।
– ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রিন হাইড্রোজেন মিশনের অধীনে ৫ মেট্রিক মিলিয়ন টন বার্ষিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে।
– বিকল্প সার এবং রাসায়নিক সারের সুষম ব্যবহারে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে উৎসাহিত করতে পিএম-প্রমাণ (PM-PRANAM) প্রকল্প চালু করা হবে।
– উপকূলরেখা বরাবর এবং লবণাক্ত জমিতে ম্যানগ্রোভ রোপণের জন্য ম্যানগ্রোভ ইনিশিয়েটিভ ফর শোরলাইন হ্যাবিট্যাটস অ্যান্ড টেঞ্জিবল ইনকামস বা মিষ্টি (MISHTI) প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
– চাহিদা-ভিত্তিক দক্ষতা, এমএসএমই-সহ বিভিন্ন নিয়োগকারীদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এবং উদ্যোগপতিদের জন্য তৈরি প্রকল্পগুলির সুযোগ যাতে সহজে পাওয়া যায়, তার জন্য একটি ইউনিফাইড স্কিল ইন্ডিয়া ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম চালু করা হবে।
– তিন বছরে ৪৭ লক্ষ যুবক যুবতীকে বৃত্তি দিতে একটি সর্বভারতীয় ন্যাশনাল অ্যাপ্রেন্টিসশিপ প্রমোশন স্কিম চালু করা হবে।
– আর্থিক ও আনুষঙ্গিক তথ্যের কেন্দ্রীয় ভান্ডার হিসেবে ন্যাশনাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনফরমেশন রেজিস্ট্রি স্থাপন করা হবে।
– আজাদি কা অমৃত মহোৎসবকে মাথায় রেখে মহিলা সম্মান সেভিংস সার্টিফিকেট চালু করা হবে। ৭.৫ শতাংশ সুদের হারে ২ বছরের মেয়াদে মহিলারা ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জমা রাখা যাবে। মেয়াদের মধ্যেই এই প্রকল্পে জমা রাখা টাকা আংশিকভাবে তুলেও নেওয়া যাবে।
– নয়া কর কাঠামোয় বছরে ৭ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় যাদের, তাদের কোনও কর দিতে হবে না। এর আগে এই সীমা ছিল বছরে ৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া নতুন আয়কর কাঠামোয় মোট ছয়টি আয়ের স্ল্যাব ছিল। এদিন স্ল্যাবের সংখ্যা কমিয়ে পাঁচটি করা হয়েছে।
– নতুন আয়কর ব্যবস্থাই প্রধান কর ব্যবস্থায় হবে। তবে নাগরিকরা পুরোনো কর ব্যবস্থার সুবিধাও নিতে পারবেন।
– খেলনা, বাইসাইকেল, অটোমোবাইল এবং ন্যাপথা-সহ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক, সেস এবং সারচার্জে সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। বায়োগ্যাসের উপর আবগারি শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। বৈদ্যুতিন গাড়ির লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি তৈরির জন্য যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
– মোবাইল ফোনে ব্যবহৃত ক্যামেরার লেন্স এবং এর যন্ত্রাংশের উপর শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। টিভি প্যানেলের অংশগুলির শুল্ক ২.৫ শতাংশে কমানো হয়েছে। বৈদ্যুতিন চিমনি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
ছে।
– সিগারেটের উপর ন্যাশনাল ক্যালামিটি কন্টিনজেন্ট ডিউটি বা এনসিসিডি (NCCD) প্রায় ১৬ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।