
নিজের বাড়ির স্বপ্ন প্রতিটা মধ্যবিত্তেরই থাকে। কিন্তু একটা বাড়ি বা ফ্ল্যাট কিনতে যে পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন হয় আজকের দিনে সেটা মধ্যবিত্তের জন্য অনেকটা। ফলে, মানুষকে লোন নিতে হয়। ২০ বা ২৫ বছরের হোম লোনের ক্ষেত্রে অনেকদিন ধরে সেই লোন ত্নার একটা ব্যাপার থাকে। এ ছাড়াও সুদ হিসাবে অনেক টাকা খরচ হয়। তাহলে কি উপায়? উপায় আছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
এবার হোম লোন বা যে কোনও লোনের একটা ব্যাপার থাকে। লোনের ক্ষেত্রে শুরুর বছরগুলোয় ইএমআইয়ের একটি বড় অংশই খরচ হয় সুদের পেছনে। আর এখানেও একটা উপায় রয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের কথা অনুযায়ী, মাসিক চাপ না বাড়িয়েও ৬০ লক্ষ টাকার লোনে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা সুদ বাঁচানো যেতে পারে।
ট্যাক্স বাড্ডির প্রতিষ্ঠাতা সুজিত বাঙ্গার বলছেন, ‘আপনার ইএমআইয়ের প্রথম বছরগুলোয় প্রায় পুরো টাকাটাই সুদ হিসাবে জমা হয়। আর সেই কারণেই এই সময়ে প্রি-পেমেন্ট করলে সুদ হু হু করে কমে যায়। যদিও বেশিরভাগ ঋণগ্রহীতা এই ব্যাপারটায় কম গুরুত্ব দেন’।
বাঙ্গার বলছেন, প্রথম দশ বছর ইএমআইয়ের বড় অংশ শুধু সুদ হিসাবেই জমা হয়। ২০ বছরের ৬০ লক্ষ টাকার লোনে, ১০ বছর বা ১২০টি ইএমআই জমা হওয়ার পর তখনও ধার থাকে ৪২.৬ লাখ টাকা। কারণ ১০ বছরে মূলধনের মাত্র ১৭.৪ লাখ টাকা শোধ হয়েছে। তাই, কখন অতিরিক্ত টাকা দেওয়া হচ্ছে, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
খরচ কমানোর একটা ছোট্ট কিন্তু শক্তিশালী একটি পদক্ষেপ হল বছরে একটি অতিরিক্ত ইএমআই দেওয়া। অনেকে উৎসবের সময় বোনাস পান। সেই বোনাস থেকে অতিরিক্ত একটা ইএমআই দিয়ে দেওয়া যায়।
যদি আপনি বছরে একটি অতিরিক্ত ইএমআই দেন, তবে আপনার ২০ বছরের ঋণ প্রায় ৪৪ মাস কম সময়ে শেষ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সুদের সাশ্রয় হবে প্রায় ১৪ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা।
যাঁরা বেতন পান, সেই ধরনের মানুষজনের আয় প্রতি বছর কিছুটা হলেও বাড়ে। যদি আপনি সেই বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আপনার ইএমআই প্রতি বছর মাত্র ৫ শতাংশ বাড়ান, তবে ঋণ আরও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।
বাঙ্গারের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, এই ভাবে ৫ শতাংশ বার্ষিক স্টেপ-আপ করার ফলে যে কোনও ব্যক্তি তাঁর ২০ বছরের ঋণ ১২.৪ বছরেই শেষ করতে পারতেন। এতে সুদ বেঁচে যায় ২৫ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা।
প্রথম ৫ থেকে ৭ বছরে সুদ দিতে হয় সবচেয়ে বেশি। এই সময় করা প্রি-পেমেন্টগুলোই আপনার সুদের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। বাঙ্গার পরামর্শ দিচ্ছেন, আপনার বোনাস মাস বা যখনই সুবিধা হয়, একটি বাড়তি ইএমআই শোধ করার ব্যবস্থা রাখুন। এটি আপনার আর্থিক স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করবে। উপরের এই দুই ব্যাপার কেউ যদি একসঙ্গে মেনে চলেন, তাহলে ১১ বছরেই লোন মিটে যায়। আর সব মিলিয়ে ওই ব্যক্তির ৩০ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা সাশ্রয় হয়।