
জীবন বিমা কিম্বা সঞ্চয়ের মতোই আরও একটি বড় সিদ্ধান্ত হল হোম লোন বা গৃহ ঋণ। হোম লোনের ক্ষেত্রে লোনের মেয়াদ সাধারণত ২০ থেকে ৩০ বছরের হয়ে থাকে। আর এই ৩০ বছরের মেয়াদে কোনও কারণে যদি ঋণের সুদ সামান্য বদলে যায় তাহলেও তা আপনার পকেটে বিরাট প্রভাব ফেলে। আর এই কারণেই আরও কম সুদের আশায় অনেকেই লোনের ব্যাঙ্ক বদল করে। কিন্তু এই কাজ কি আপনার জন্য আদৌ লাভজনক হবে? সেই হিসেব আপনার জানা জরুরি।
মূলত সুদের হার কমানোর জন্যই ব্যালেন্স ট্রান্সফারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধরুন, আপনার বর্তমান ব্যাঙ্ক ৯ শতাংশ সুদ নিচ্ছে। সেখানে অন্য ব্যাঙ্ক ৮.৫ শতাংশ অফার করছে। আপাত দৃষ্টিতে এই ০.৫ শতাংশ সামান্য মনে হলেও, ২০ বছরের লোনে এটি আপনার কয়েক লক্ষ টাকা বাঁচিয়ে দিতে পারে। বিশেষত, যদি আপনি ঋণের একদম শুরুর দিকে থাকেন, তবে এই সুবিধা আরও অনেকটা বেশি পাওয়া যায়। কারণ শুরুতে কিস্তির বেশিরভাগটাই যায় সুদের পিছনে।
মনে রাখবেন, ট্রান্সফার কিন্তু বিনামূল্যে হয় না। নতুন ব্যাঙ্ক আপনার থেকে প্রসেসিং ফি, আইনি ফি বা সম্পত্তির মূল্যায়ন বাবদ খরচ নিতে পারে। যদি আপনার বকেয়া ঋণের অঙ্ক ছোট হয় বা মেয়াদের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসেন, তবে সঞ্চয়ের চেয়ে খরচ বেশি হতে পারে। তাই ট্রান্সফার করার আগে মোট খরচ হিসেব করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
অনেক সময় গ্রাহকরা শুধু সুদের হারের জন্য নয়, ভাল পরিষেবার জন্যও ব্যাঙ্ক বদল করেন। একটি নতুন ব্যাঙ্ক হয়তো ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে আরও নমনীয় বিকল্প, বাড়ির সংস্কারের জন্য টপ-আপ লোন বা প্রিপেমেন্টের ক্ষেত্রে কম জরিমানা হতে পারে। আপনার বর্তমান ব্যাঙ্কের পলিসি যদি খুব কড়াকড়ি হয়, তবে এই সুযোগ কাজে লাগান।
আপনার ঋণের মেয়াদ যদি প্রায় অর্ধেক বা তারও বেশি শেষ হয়ে যায়, তবে ট্রান্সফারের সুবিধা কমে যায়। কারণ তখন ইএমআইয়ের বড় অংশ মূল ঋণের দিকে যেতে শুরু করে। একইভাবে, প্রথম ঋণ নেওয়ার পর যদি আপনার ক্রেডিট স্কোর কমে গিয়ে থাকে, তবে নতুন ব্যাঙ্ক থেকে হয়তো ভাল কোনও ডিল পাবেন না।
ব্যালেন্স ট্রান্সফার টাকা বাঁচাতে পারে, তবে এটিই সবসময় সেরা পদক্ষেপ নয়। আপনি আপনার ঋণের বাকি মেয়াদ এবং ট্রান্সফারের খরচ অবশ্যই খতিয়ে দেখুন। যদি সঞ্চয় আপনার ঝক্কি-ঝামেলাকে ছাপিয়ে যায়, তবেই ব্যাঙ্ক বদল করুন। অন্যথায়, বর্তমান ব্যাঙ্কের সঙ্গেই সুদের হার কমানোর বিষয়ে কথা বলা ভাল।