কলকাতা: ক্রিসমাস আসতেই আকাশে-বাতাসে ভাসছে কেকে গন্ধ। আপনিও কি কেক তৈরি করতে ভালবাসেন? তাহলে ঘরে বসেই সামান্য খরচায় নিজের উদ্ভাবনী ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে শুরু করতে পারেন বেকারি ব্যবসা। কী ভাবছেন? কোথা থেকে শুরু করবেন? আসুন, ভারতে বাড়ি থেকে বেকারি ব্যবসা কীভাবে শুরু করা যায়, তা জেনে নেওয়া যাক –
কীভাবে শুরু করবেন বাড়ি থেকে বেকারি ব্যবসা ?
শুরুটাকরুন কেক দিয়ে। প্রাথমিকভাবে কাপকেক দিয়ে শুরু করতে পারেন। সাফল্য এলে, পরে ব্যবসা আরও বাড়ানোর কথা ভাবতে পারেন। তবে ঠিক করে নিন, কোন ধরনের কেক তৈরিতে আপনি বিশেষ দক্ষতা তৈরি করবেন। কেউ কেউ কাপকেক বিক্রি বা গ্লুটেন-মুক্ত কাপকেক তৈরি করার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ, আবার কেউ বিবাহের কেক তৈরিতে মন দেয়। আপনি কোনটা করতে চান, ঠিক করে নিন। কোথায় আপনার দক্ষতা বেশি, সেটা আগে শনাক্ত করা প্রয়োজন। সকলের থেকে অন্য কিছু করতে পারলে, সাফল্য আসবেই।
প্রয়োজন FSSAI রেজিস্ট্রেশন
বাড়ি থেকে ব্যবসা করলেও, ফুড অ্যান্ড সেফটি স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়ার রেডিস্ট্রেশন প্রয়োজন। খাবার নিয়ে ব্যবসা করতে গেলে এই রেজিস্ট্রেশন সকলের জন্য বাধ্যতামূলক। শুরুতে সমস্যা না হলেও, এই রেজিস্ট্রেশন ন থাকলে, ভবিষ্যতে আপনাকে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। রেডিস্ট্রেশন না থাকলে, FSSAI মোটা টাকা জরিমানা করতে পারে।
অন্যান্য ব্যবসায়িক রেজিস্ট্রেশন
ট্রেডমার্ক রেডিস্ট্রেশনের মাধ্যমে আপনার ব্র্যান্ডের নাম এবং লোগো সুরক্ষিত করতে পারেন। এটা বাধ্যতামূলক না হলেও, বড় মাপের ব্যবসা করতে গেলে এটা করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এছাড়া করতে হবে জিএসটি রেজিস্ট্রেশন। বেশিরভাগ রাজ্যেই ৪০ লক্ষের বেশি বছরে আয় হলে, জিএসটি রেজিস্ট্রেশন করতেই হয়। তবে, শুরুতেই এই আয় আপনার হবে না। তাই এই নিয়ে শুরতেই মাথা না ঘামালেও চলবে।
আপনার ব্যবসা নিবন্ধন
যেহেতু বেশিরভাগ হোম বেকার একাই তাদের ব্যবসা শুরু করে, তারা সাধারণত কোম্পানির নিবন্ধন সম্পর্কে ভাবেন না। কিছু ক্ষেত্রে আছে যখন আপনার ব্যবসা নিবন্ধিত করার কথা বিবেচনা করা উচিত। আপনি যদি আপনার ব্যবসা অন্য কারো সাথে একজন অংশীদার হিসাবে চালাচ্ছেন – তা বন্ধু বা আত্মীয়ই হোক না কেন – অনুগ্রহ করে এলএলপি হিসাবে নিবন্ধন করুন৷ এটি বাধ্যতামূলক নয় তবে নিশ্চিত করবে যে আপনি আপনার সঙ্গীর দ্বারা প্রতারিত হবেন না। এটি নিশ্চিত করবে যে আপনি অবসর গ্রহণ করলে বা কাজ করতে অক্ষম হলে আপনার সন্তান বা অন্যান্য উত্তরাধিকারীদের সাথে আপনার ব্যবসা চলবে। এই নিবন্ধন পেয়ে আপনার কঠোর পরিশ্রম সুরক্ষিত করা খুবই সহায়ক।
রেসিপি ঠিকঠাক করা
নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কাস্টমাইজড কেক পাবেন বলেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মানুষ বাড়ির থেকে যারা বেকারি চালান, তাদের কাছে কেক অর্ডার করেন। তাই সঠিক কেকের রেসিপি বাছাই, হোম বেকিং ব্যবসার সাফল্যের জন্য অপরিহার্য। প্রথমে আত্মীয়-বন্ধুদের খাইয়ে আপনার রেসিপির জোর পরীক্ষা করে নিন। তাদের প্রতিক্রিয়া অনুযায়ী রেসিপিতে প্রয়োজনীয় অদল-বদল করুন। যতক্ষণ না আপনার তৈরি কেকগুলি সর্বোত্তম মানের হয়, ততক্ষণ এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যান।
উপাদান
সাশ্রয়ী দামে, কেক তৈরির সর্বোত্তম উপাদান পাওয়াটা ব্যবসা সফল হওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে, অনলাইন স্টোরগুলিতে ময়দা, চিনি এবং এমনকি এসেন্সের মতো মৌলিক উপাদানগুলির জন্য বেশ সস্তায় পাওয়া যায়। কিন্তু কোকো পাউডার, স্প্রিঙ্কল এবং বাটার পেপারের মতো বেকিংয়ের কিছু নির্দিষ্ট উপাদান সাধারণত স্থানীয় বেকিং সাপ্লাই স্টোরগুলিতেই সস্তায় পাওয়া যায়।
রান্নাঘরের সরঞ্জাম
বেকিং ব্যবসা শুরু করার আগে, আপনার সঠিক সরঞ্জামেরও প্রয়োজন হবে। আপনার যদি আগে থেকেই কেক তৈরিতে আগ্রহ থাকে, তাহলে প্রয়োজনীয় অধিকাংশ সরঞ্জামই আপনার কাছে থাকবে। না থাকলে কিছু জিনিস আপনাকে কিনতে হবে। তার মধ্যে রয়েছে, ভাল মানের মিক্সার, নন-স্টিক কেক ট্রে, ডিজিটাল স্কেল, কুলিং ব়্যাক, পরিমাপের চামচ, মিশ্রণের বাটি, কাঠের চামচ, কেকের মিশ্রণ তৈরি এবং আইসিং-এর জন্য রাবারের স্প্যাটুলা, কেক কেস এবংএকটি ভাল ওভেন।
স্টক ম্যানেজমেন্ট
বাড়িতে বেকারির ব্যবসা শুরু করলে, স্টক ম্যানেজমেন্ট, অর্থাৎ, কতটা উপাদান বাড়িতে রাখবেন ইত্যআদি ঠিক করা বেশ জটিল হয়ে যায়। বাড়িতে রাখা উপাদানগুলি যাতে পুরনো না হয়ে যায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হয়। অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনার ধারণা তৈরি হয়ে যাবে।
খরচ এবং মূল্য নির্ধারণ
ব্যবসার শুরুতে অনেকেই কেকের দাম অনেকটা সস্তা রাখতে চান। মূলত, ক্রেতা ধরার লক্ষ্যেই এই প্রবণতা দেখা যায়। দীর্ঘমেয়াদে এটা করা সম্ভব নয়। কারণ, সস্তার কেক বিক্রি করেন বলে আপনার পরিচিতি তৈরি হয়ে যেতে পারে। তাই পরে দাম বাড়ালে, ক্রেতারা সেই অর্থ দিতে ইচ্ছুক নাও হতে পারেন। বেকিংয়ে আপনার দক্ষতা যেমনই হোক না কেন, আপনার প্রচেষ্টাকে যথাযথ মূল্য দিন। কেকের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়েন। মৌলিক সূত্র হল, ব্যবহৃত উপাদান খরচের ৩ গুণ রাখা উচিত কেকের দাম।
ডেলিভারি
বাড়ি থেকে ব্যবসা করেন যারা, তারা অনেক সময়ই কেক ডেলিভারি করা নিয়ে সমস্যায় পড়েন। বেশিরভাগ হোম বেকার ব্যক্তিগতভাবে কেক বাড়ি বাড়ি ডেলিভারি করেন বা ক্রেতারা তাঁদের বাড়ি এসে কেক নিয়ে যান। আরনার যেটা সুবিধা, আপনি সেই ব্যবস্থা বেছে নিতে পারেন। বর্তমানে সুইগি বা জোম্যাটোর মতো খাবার বিতরণকারী সংস্থাগুলির মাধ্যমেও অনেকে কে ডেলিভারি করে থাকেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপনন
হোম বেকিং ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেতাদের মুখের কথা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মূলত তাদের মুখের প্রশংসাই আপনার ব্যবসা আরও বাড়াতে সহায়ক হয়। আর এর জন্য সোশ্যাল মিডিয়া হল অপরিহার্য। বর্তমানে বিপননের অন্যতম মাধ্যম হল সোশ্যাল মিডিয়া। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা টুইটারে আপনি ছবি-সহ আপনার কেকের সম্পর্কে জানান। সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই আরও গ্রাহক ধরতে পারেন। আপনি কী কী ধরণের কেক তৈরি করেন, তা তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়া থেকেই জেনে নিতে পারবেন।
ওয়েবসাইট এবং ফটোগ্রাফি
ওয়েবসাইট চালু করতে পারলে আপনার হোম বেকারির ব্যবসা পরবর্তী স্তরে উন্নীত হতে পারে। একবার আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে অর্ডার পেতে শুরু করলেই, আপনার ডোমেন নেম ব্লক করুন। যত দ্রুত সম্ভব একটি ওয়েবসাইট তৈরি করুন। ভাল মানের ফটো আপলোড করে ওয়েবসাইটটিকে সাজান। মনে রাখবেন, বেকিং-এর জগতে, ছবিই হল বিক্রির সেরা উপায়।
ব্র্যান্ডিং
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ব্র্যান্ডিং। অর্ডারগুলি সরবরাহ করার সময় সঙ্গে আপনি আপনার বিজনেস কার্ড পাঠাতে পারেন। বাক্স এবং অন্যান্য প্যাকেজিং ব্যবস্থা কাস্টমাইজ করতে পারেন। এতে আপনার লোগো এবং ব্র্যান্ডের নাম সুস্পষ্টভাবে পৌঁছে যাবে ক্রেতাদের কাছে। এই বিষয়গুলি মানুষের উপর দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলে।
শেখা বন্ধ করবেন না
যেকোনো হোম বেকারদের জন্য, ট্রেন্ড অনুসরণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই শেখা কখনই শেষ হবে না। সে ইউটিউবের ভিডিয়োই হোক, বা কর্মশালা বা ক্লাসে শিখেই হোক, নিজেকে ক্রমাগত আপডেট করে যান।